আদিম যুগে মানুষ যখন সমাজবদ্ধভাবে বাস করতে শুরু করে, তখন নদী, ঝরনা, হ্রদের পানি দিয়ে তাদের সব সমস্যার সম্পূর্ণ সমাধান হতো না। তারা উপলব্ধি করে ঘরের পাশে বা হাতের নাগালে পানির একটা উৎস থাকা দরকার। সেই থেকে পুকুর বা কুয়া খোঁড়া শুরু। তবে সেটা কোথায়, কবে, কে শুরু করেছিল তা জানা নেই।
প্রতœতাত্ত্বিক খননে পাওয়া তথ্য থেকে পৃথিবীর সবচেয়ে পুরোনো কুয়ার সন্ধান পাওয়া যায় জর্ডান ও ইসরাইল সীমান্তবর্তী জেজরিল উপত্যকায়। এই পাতকুয়া বা ইঁদারার বয়স প্রায় সাড়ে আট হাজার বছর। তবে শহরে পানি সরবরাহের প্রাচীনতম নিদর্শন এখনও টিকে আছে এ উপমহাদেশে। প্রায় তিন হাজার ৩০০ বছর আগে ভারত, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের যে বিশাল এলাকাজুড়ে সিন্ধু সভ্যতা গড়ে উঠেছিল, তার শহরগুলোর ঘরে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা ছিল। পাকিস্তানের পাঞ্জাবে প্রদেশের হরপ্পা, গনেরিওয়ালা ও চোলিস্তান, সিন্ধু প্রদেশের মহেঞ্জোদারো এবং ভারতের গুজরাটের ধোলাভিরা ও হরিয়ানার রাখিগরহিতে বেশ কয়েকটি প্রাচীন নগরীর সন্ধান মিলেছে। জানা গেছে, এসব নগরীর প্রায় সব ঘরে পৃথক স্নানাগার ও আচ্ছাদনযুক্ত পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা ছিল। স্কটল্যান্ডের স্কারা ব্রায়ে গ্রামের লোকেরা প্রায় আড়াই হাজার বছর আগেও ‘ওয়াটার ফ্লাশিং টয়লেট’ ব্যবহার করত। আর পাইপ বা নলের মাধ্যমে ঘরে ঘরে পানি পৌঁছে দেওয়ার নিদর্শন এখনও টিকে আছে।
১৮৭৮ সালে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা চালু হওয়ার আগে ঢাকাবাসীর বড় ভরসা ছিল ভিস্তিওয়ালারা। তারা ঘর, হোটেল ও রেস্তোরাঁয় পানি পৌঁছে দিতেন। এখনকার মতো কল টিপলেই পানিএটা ছিল অকল্পনীয়। ভিস্তিওয়ালারা স্থানীয় পুকুর, পাতকুয়া বা বুড়িগঙ্গা থেকে পানি ছাগলের চামড়ায় তৈরি মশকে করে বয়ে এনে ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতেন। স্থানীয়রা ভিস্তিওয়ালাদের বলতেন সাক্কা। নাজিরাবাজারের সঙ্গে সিক্কাটুলি নামে একটি মহল্লা আছে, সেটি এখন সাক্কা বা ভিস্তিওয়ালাদের অস্তিত্বের স্মারক হিসেবে রয়ে গেছে। এখানেই বাস করতেন ভিস্তিওয়ালারা। সাক্কাদের বসবাসের কারণে মহল্লার নাম হয় সাক্কাটুলি।
কালের বিবর্তনে দেশের পাতকুয়া হারিয়ে গেলেও বর্তমানে উন্নতমানের প্রযুক্তি, বিশেষ করে সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে গভীর পাতকুয়া থেকে পানি নিয়ে পাইপলাইনের মাধ্যমে জমিতে রবিশস্য ও গৃহস্থালি কাজের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। সূর্যের আলো থাকাকালীন এই সোলার প্যানেলটি সচল থাকবে। রাতে পুনরায় এই কূপে পানি সংরক্ষিত হবে। এছাড়া বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানি এই কুয়ায় সংরক্ষণ করা যাবে। বিশেষ করে সরষে, শিম, লাউ, মিষ্টিকুমড়া, ঢেঁড়স, করলা, বেগুন, টমেটো, কপি, ছোলা, মুগ, মসুর, পেঁয়াজ, রসুনসহ বিভিন্ন জাতের শাকসবজি চাষ করা হয়। এছাড়া এই পাতকুয়ার পানি গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার করা যায়। ফলে গভীর নলকূপের মাধ্যমে সেচকাজ পরিচালনা করার ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিম্নমুখী। কাজেই বিশেষ করে রবি মৌসুমে সৌরচালিত পাম্প দিয়ে পাতকুয়া থেকে পানি ব্যবহার করলে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর কিছুটা চাপ কমবে।