মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: মৌলভিত্তির বিচারে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের শীর্ষে রয়েছে বেশ কিছু দেশি কোম্পানি। এর মধ্যে শীর্ষে উঠে এসেছে ১০টি কোম্পানি। কোম্পানিগুলোর শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস), শেয়ারপ্রতি সম্পদ ও শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত রয়েছে বিনিয়োগের অনুকূলে। তুলনামূলকভাবে এসব কোম্পানি থেকে শেয়ারহোল্ডাররা সন্তোষজনক রিটার্নও পেয়ে থাকেন। এসব কোম্পানিতে ঝুঁকিও কম। যে কারণে বিনিয়োগকারীদের ঝোঁক এসব কোম্পানিতে। সম্প্রতি ডিএসই থেকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের শীর্ষে থাকা কোম্পানিগুলো হচ্ছে ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টস, স্টাইল ক্র্যাফট, এসিআই লিমিটেড, পদ্মা অয়েল, যমুনা অয়েল, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, স্কয়ার ফার্মা, কোহিনুর কেমিক্যাল, ন্যাশনাল টি ও ডাচ্-বাংলা ব্যাংক।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, দেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এ প্রতিষ্ঠানগুলো সর্বোচ্চ ইপিএসধারী। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানগুলোর ইপিএস অবস্থান করছে ১০ থেকে ৪১ টাকার মধ্যে। শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাতেও এগিয়ে রয়েছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান। যে কারণে এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে বাজার-সংশ্লিষ্টরা বলেন, যেসব বিনিয়োগকারী তাড়াহুড়ো না করে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করতে চান, তারাই কেবল এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেন। এসব বিনিয়োগকারীর উদ্দেশ্য থাকে লভ্যাংশের মাধ্যমে গেইন করা। তাছাড়া এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ তুলনামূলকভাবে ঝুঁকিমুক্ত। দুর্বল কিংবা ‘জেড’ ক্যাটেগরির কোম্পানিতে বিনিয়োগ করার চেয়ে এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ অনেক নিরাপদ। যে কারণে তাদের নজর থাকে এ ধরনের কোম্পানিতে।
এ প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ বলেন, যেসব কোম্পানিতে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে, এর বেশিরভাগই ভালো প্রতিষ্ঠান। এসব কোম্পানি থেকে তারা ভালো রিটার্নও পেয়ে থাকেন। যে কারণে তারা এসব কোম্পানির সঙ্গে রয়েছেন। তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে ভালো কোম্পানির অভাব রয়েছে। বিনিয়োগযোগ্য কোম্পানির সংখ্যা হাতেগোনা। তাই দেশি কোম্পানিতে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়াতে হলে মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানি তালিকাভুক্ত করতে হবে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, তালিকায় থাকা এসব কোম্পানির মধ্যে গত বছর সবচেয়ে বেশি লভ্যাংশ প্রদান করে এসিআই লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির লভ্যাংশ প্রদানের হার ছিল ১১৫ শতাংশ। ১১০ শতাংশ করে লভ্যাংশ প্রদান করে পদ্মা অয়েল, যমুনা অয়েল ও মেঘনা পেট্রোলিয়াম। এছাড়া ১০০ শতাংশ লভ্যাংশ দেয় ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টস।
এদিকে ৪২ দশমিক পাঁচ শতাংশ লভ্যাংশ প্রদান করে স্কয়ার ফার্মা। সর্বশেষ বছরে প্রতিষ্ঠানটি শেয়ারহোল্ডারদের ৩৫ শতাংশ নগদ ও সাড়ে সাত শতাংশ বোনাস শেয়ার প্রদান করে। একইভাবে ব্যাংক খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংক সর্বশেষ বছরে ৩০ শতাংশ করে লভ্যাংশ দেয়। এছাড়া কোহিনুর কেমিক্যাল শেয়ারহোল্ডারদের ৩০ শতাংশ এবং ন্যাশনাল টি ১৮ শতাংশ লভ্যাংশ প্রদান করে।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগকারীদের ঝোঁক বাড়ার আরও একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে দুর্বল ও ‘জেড’ ক্যাটেগরির কোম্পানির বিরুদ্ধে বিএসইসি এবং ডিএসইর কঠোর অবস্থান।
পুঁজিবাজারে কারসাজির প্রধান হাতিয়ার হচ্ছে ‘জেড’ ক্যাটেগরি এবং স্বল্পমূলধনি কোম্পানি। প্রধানত এসব কোম্পানি নিয়ে বেশি কারসাজি হয়। সারা বছর কোনো কোনো চক্র এসব কোম্পানি নিয়ে গেম করতে থাকে। আর এই ফাঁদে পা দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। এটি রোধে সম্প্রতি উৎপাদনে না থাকা মডার্ন ডায়িং ও রহিমা ফুডকে তালিকাচ্যুত করেছে ডিএসই। বছরের পর বছর উৎপাদন না থাকা এসব কোম্পানিকে কিছুদিন নোটিস প্রদান করে ডিএসই। নোটিসে জানতে চাওয়া হয় তারা খুব শিগগির উৎপাদনে আসবে কি না। জবাবে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি। যে কারণে কোম্পানি দুটিকে তালিকাচ্যুত করা হয়েছে।
এর বাইরে সম্প্রতি আরও ১৫ কোম্পানিকে সতর্ক করেছে ডিএসই। অন্যদিকে বিএসইসি তিনটি প্রতিষ্ঠানের লেনদেন স্থগিত করেছে। যে কারণে নড়েচড়ে বসেছেন বিনিয়োগকারীরা।