নিজস্ব প্রতিবেদক: আইটি খাতে ব্যবসা সম্প্রসারণে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলন করলেও আইন লঙ্ঘন করে মাছ ব্যবসায় বিনিয়োগ করে ইনটেক লিমিটেড। মাছ ব্যবসায় নেমেও মুনাফা ধরে রাখতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৬ সালে দ্বিতীয় প্রান্তিকে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১৬ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ১ টাকা ৪৭ পয়সা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে আয় কমেছে ১ টাকা ৩১ পয়সা।
জানা গেছে, গত বছর জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে কোম্পানির আয় হয়েছে ৩ পয়সা, আগের বছর একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ১ টাকা ৩৬ পয়সা। অর্থাৎ আগের বছরের চেয়ে গত ছয় মাসে কোম্পানির আয় কমেছে ১ টাকা ৩০ পয়সা।
এদিকে আইন লঙ্ঘন করে ইনটেক লিমিটেড ব্যবসা করছে বলে নিরীক্ষিক প্রতিষ্ঠান মন্তব্য করছে। চলতি বছর জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে এ মন্তব্য করে নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান। কোম্পানিটির ২০১৬ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরের আর্থিক প্রতিবেদন মূল্যায়নের ভিত্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান।
জানা গেছে, কোম্পানিটি বিএসইসির নোটিফিকেশন নং- এসইসি/সিএমআরআরসিডি/২০০৯-১৯৩/১১৯/২২ অমান্য করছে। কোম্পানিটির বর্তমান উদ্যোক্তা ও পরিচালকের কাছে ৪ দশমিক ৫৬ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। এছাড়াও আর্থিক প্রতিবেদনে অসঙ্গতি পেয়েছে নিরীক্ষিক প্রতিষ্ঠান।
নিরীক্ষিক প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, কোম্পানির ডেফার্ড ট্যাক্স আয় দেখিয়েছে ৭ লাখ ১৮ হাজার ১৫০ টাকা এবং ডেফার্ড ট্যাক্স সম্পদের পরিমাণ দেখিয়েছে ২৩ লাখ ১৩ হাজার ৯৫৩ টাকা। কোম্পানির ডেফার্ড ট্যাক্স সম্পদ ও আয়ের বিবরণ যা দেখানো হয়েছে তা বাংলাদেশ অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড (বাস) হিসাব অনুযায়ী হয়নি।
কোম্পানির হিসাবে সম্পত্তি, কারখানা ও সরঞ্জাম ট্যাক্স অবচয় হিসেবে নির্ধারণ করেছে। ফলে ডেফার্ড ট্যাক্স সম্পদ এবং আয়ের পরিমাণ নিশ্চিত করতে পারেনি। এমনকি কোম্পানিটি তাদের মাছ চাষের প্রকল্পের টাকা ৩ কোটি ৮৩ লাখ ৪৬ হাজার টাকা এবং অফিস স্পেসের ৩ কোটি ৮৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করেছে। ফলে আয়ের পরিমাণ নিশ্চিত করা যায়নি।
ইনটেকের মাছ ব্যবসায় জড়িত হওয়া নিয়ে ‘আইটি থেকে মাছ ব্যবসায় ইনটেক’ শিরোনামে দৈনিক শেয়ার বিজ পত্রিকায় গত বছর অক্টোবরে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রকাশিত প্রতিবেদনে উঠে আসে, দেশে যখন আইটি খাতের বিপ্লব ঘটতে যাচ্ছে, তখন পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান ইনটেক লিমিটেড ঝুঁকছে মাছ ব্যবসায়। আইটি ব্যবসার জন্য তালিকাভুক্ত হলেও এ খাতে প্রতিষ্ঠানটির আয় অনেক কমে গেছে। বর্তমানে ইনটেকের আয়ের একটি অংশ আসছে মাছ ব্যবসা থেকে। প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়ার পর তা নিয়ে পুঁজিবাজারে আলোচনা ঝড় উঠে। প্রতিবেদনটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নজরে এলে তা নিয়ে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করে।
এদিকে সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদনে কোনো ধরনের সাবসিডিয়ারি বা সহযোগী প্রতিষ্ঠান নেই বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বিনিয়োগকারীদের অনুমোদন না নিয়ে মাছ ব্যবসায় বিনিয়োগ করছে ইনটেক, যা কোম্পানির আইন লঙ্ঘন বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা।
২০১৪ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সমাপ্ত বছরে ইনটেক লিমিটেডের রাজস্ব আয়ের বড় অংশ এসেছে মাছ ব্যবসা থেকে, যার পরিমাণ ছিল দুই কোটি ৩৬ লাখ টাকা। আর মূল ব্যবসা ইন্টারনেট থেকে আয় হয়েছে মাত্র ৪৬ লাখ টাকা। এছাড়া প্রতিবেদনে কোম্পানির শেয়ার ধারণ-সংক্রান্ত বিষয়টিও উঠে আসে।
২০০২ সালে তালিকাভুক্ত এ কোম্পানিটির মোট শেয়ারের উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের কাছে ৪ দশমিক ৫৬ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। ২৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ শেয়ার রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে। বাকি ৭১ দশমিক ৬০ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে। ডিএসইতে কোম্পানিটির লেনদেন হয় ‘এ’ ক্যাটাগরিতে।
Add Comment