মিজানুর রহমান শেলী: মিড আমেরিকানের মাধ্যমেও আমরা একই পরিমাণ সমাজসেবায় জড়িয়ে পড়ি। আশা রাখি আমাদের গ্রাহকের চাহিদা পূরণে আমরা সর্বোচ্চ পরিমাণ বিনিয়োগ করব। আমরা যদি একটি নির্ভরশীল ও কার্যকরী পরিচালনা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারি, তবে এসব বিনিয়োগ থেকে একটি বড় অঙ্কের রিটার্ন ঘরে তুলতে পারব।
মিড আমেরিকান আমেরিকার প্রায় দুই দশমিক চার মিলিয়ন গ্রাহকের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিচ্ছে। লোয়া, ওয়াইওমিং ও উতাহতে সবচেয়ে বড় সরবরাহ কাজটি এরা সফলভাবে পরিচালনা করে আসছে। এমনকি অন্যান্য প্রদেশেও এরা একটি উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সরবরাহকারী হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে। দেশের আট শতাংশ প্রাকৃতিক গ্যাস আমরা পাইপলাইনে সরবরাহ করি। কার্যত বহু মিলিয়ন মানুষ প্রতিদিন আমাদের ওপর নির্ভরশীল।
মিড আমেরিকা এর মালিক ও গ্রাহক উভয়ের জন্যই একটি চমৎকার ফল নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে। ২০০২ সালে উত্তরাঞ্চলে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহের পাইপলাইন চালুর কিছুদিনের মধ্যেই আমরা সর্বেসর্বা হয়ে উঠেতে সক্ষম হয়েছিলাম। এটি একটি রেকর্ড ছিল। আমরা রেটিংয়ে ‘৪৩’ অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলাম। অর্থাৎ তখন এ মাঠে আমরাই সেরা। খুব সাম্প্রতিক সময়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ র্যাংকিংয়ে আমরা এখন দ্বিতীয় অবস্থানে নেমে এসেছি। তবে প্রধান স্পটটি (কার্ন রিভার) এখনও আমাদের দখলে।
ইলেকট্রিক ব্যবসায় মিড আমেরিকা একটি তুলনামূলক রেকর্ড গড়তে সক্ষম হয়েছে। লোয়ায় আমরা আমাদের কার্যক্রম চালু করেছিলাম ১৯৯৯ সালে। এ সময় লোয়ায় আরও একটি প্রতিষ্ঠান ব্যবসা চালাচ্ছিল। কিন্তু আমাদের অন্য প্রদেশে বিদ্যুৎ বিলের যে দর ছিল, তার চেয়ে প্রায় ৭০ শতাংশ বেশি। মানে আমরা তখন আরও অনেক বেশি কম দরে অবস্থান করছিলাম। একটি নির্দিষ্ট মেট্রোপলিটন এলাকার মধ্যে দুটি ইলেকট্রিক কোম্পানি চলে আর একটির বিল যদি অনেক বেশি হয়, তবে গ্রাহক তার প্রতিবেশীর বিলের সঙ্গে নিজেদের বিলকে যখন মিলিয়ে দেখেন, তখন একটু থমকে যাবেÑএটাই স্বাভাবিক। আমি তখন তাদের পরামর্শ দিলাম দাম বাড়িয়ে দিতে। বিশেষ করে যেসব এলাকায় ওই সেবা প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা চলছে, সেখানে আমাদের বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে দিতে জোর দিয়েছিলাম।
২০১১ সালের শেষদিকে মিড আমেরিকা ২৯০৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম হলো। আর এটি আমেরিকার যে কোনো প্রতিষ্ঠানের চেয়ে অনেক বেশি। মিড আমেরিকার মোট বিনিয়োগ কম-বেশি পাঁচ দশমিক চার বিলিয়ন ডলার। আমরা এত বেশি পরিমাণ বিনিয়োগ করতে সক্ষম হয়েছিলাম; কেননা মিড আমেরিকার কোনো আয়ে কোনো রকম বিঘ্ন সৃষ্টি হয়নি। আমরা আমাদের সব আয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিলাম।
মিড আমেরিকা সব সময়ই সামাজিক ক্ষেত্রবলয়কে ধারণ করতে পেরেছিল। সমাজের সঙ্গে মিড আমেরিকা দরদামের হিসাব কষেই চলত। বলা চলে, এটি ছিল সমাজের স্বার্থেই সামাজিক পারস্পরিক বোঝাপড়ার সম্পর্ক। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া কিছু ব্যবসায় আমাদের তত্ত্বাবধায়করা যতটা পারেন মুনাফা বের করে আনার অনুমোদন দিয়েছিলেন। আর এর পেছনে একটি যুক্তি নির্ভর করত: আমরা যত বেশি আয় করব, অবশ্যই সে পরিমাণই আবার সমাজের মধ্যে সমাজের স্বার্থেই ব্যবসায় বিনিয়োগ করব। সামনে এগিয়ে চলতে গেলে আমাদের সমাজের সেবা চাহিদা রয়েছে, তা পূরণ করতে আমাদের যা যা করা দরকার, আমরা তা-ই করতে প্রস্তুত ছিলাম। আমরা বিশ্বাস করতাম, আমরা যে পরিমাণ বিনিয়োগ করি, সে পরিমাণ আয় করার বৈধ দাবিদারও।
আমরা লক্ষ করলাম, জনগণ ও আমাদের রেল কোম্পানির মধ্যে ‘সামাজিক বন্ধন’ গড়ে উঠেছিল আমাদের কোম্পানির বা ব্যবসার প্রয়োজনীয় উপকরণ বা উপযোগিতাকে কেন্দ্র করে। যদি কোনো পক্ষ এ উপযোগিতাকে এড়িয়ে চলে, তবে উভয় পক্ষই ভোগান্তির শিকার হয়। তাই উভয় পক্ষেরই উচিত এই পারস্পরিক বোঝাপড়ার প্রতি ঠিকঠাক শ্রদ্ধাবোধ বজায় রাখা। এমনকি এক পক্ষের উৎসাহ আরেক পক্ষের ভালো আচরণ বা উদ্যমের জন্য সহায়ক। এতে করে উভয় পক্ষই লাভবান হতে পারে। আমরা বিশ্বাস করি, এ বিষয়টির চর্চা এখনকার মতো সামনেও ধরে রাখতে সক্ষম হব। আমাদের দেশ সবকিছুর পেছনেই পুরোপুরি আর্থিক সম্ভাবনাকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। অথচ দেশের উচিত প্রথম শ্রেণির বিদ্যুৎ ও রেলপথ ব্যবস্থাপনার দিকেও নজর দেওয়া উচিত সমানভাবে। আর এ বিষয়টি আসলে দুঃখজনক। আমরা কেবল আমাদের কাজটি সফলভাবে সম্পন্ন করার দায় নিচ্ছি এবং সামনের দিনে এটি অব্যাহত রাখব।
সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, ৫০ শতাংশের বেশি প্রধান কোম্পানিগুলো দাতব্য সহায়তা দিয়ে থাকে। আর এটি নিশ্চিত হয় তাদের পরিচালকদের হাত ধরে। বস্তুত মালিকের প্রতিনিধিরা তাদের পছন্দের জায়গাগুলোতেই দাতব্য সহায়তা দিতে অর্থের ব্যবস্থাপনা করে থাকে। এমনকি কখনোই তারা তাদের মালিকের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলাপচারিতা সেরে নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করে না। অর্থাৎ দাতব্য সহায়তায় মালিকের পছন্দ-অপছন্দের কোনো মূল্য থাকে না। আমি অবাক হই কীভাবে মালিকরা এটা মেনে নেন, আর এটা নিয়ে কী তাদের কোনো অনুভূতিই নেই! তাছাড়া এ রীতিটি যদি চলতে থোকে, তবে শেয়ারহোল্ডাররা হয়তো কোনোদিন পরিচালকের পকেটে হানা দেবেÑএমন আশঙ্কা অমূলক নয়। কেননা তাদের নিজেদের টাকায় পরিচালকরা এমন মাতুব্বরি করে থাকেন। যখন ‘এ’ পক্ষ ‘বি’ পক্ষের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে ‘সি’ পক্ষকে দান করে, তখন তা হলো একজন সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী বা বিধানদাতা। এটাকে এক ধরনের ট্যাক্সেশন প্রক্রিয়ার সঙ্গে তুলনা করা চলে। কিন্তু এটি যখন কোনো প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মকর্তা বা পরিচালক করে থাকেন, তখন এটিকে ফিলানথ্রপি বা মনবপ্রেম বলতে হয়। আমরা এটাই বিশ্বাস করে চলতে চাইÑএকটি কোম্পানি সরাসরি বিভিন্ন লাভজনক বিনিয়োগের পাশাপাশি যখন দাতব্য খাতে অর্থ খরচ করতে থাকে, তখন এতে মালিকের দাতব্য চিন্তার প্রতিফলন হয়; কিন্তু কখনোই এটি পরিচালক কিংবা কোনো কর্মকর্তার দাতব্যকর্ম হতে পারে না।
১৯৮১ সালের সেপ্টেম্বরের ৩০ তারিখের কথা বলছি: বার্কশায়ার যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি দফতর থেকে একটি ট্যাক্স আদেশ হাতে পেল। ওই ট্রেজারি দফতর প্রতি বছর কোম্পানির নিজস্ব পছন্দের দাতব্য মাধ্যমে প্রচুর অর্থ আহরণ করার কথা। কিন্তু বার্কশায়ারের প্রত্যেক শেয়ারহোল্ডার একসঙ্গে আমাদের কোম্পানির এই দাতব্য সহায়তায় সই নাও করতে পারেন। কেননা, একেক শেয়ারের মালিকানা ভিত্তিতে তারা এ কোম্পানির মালিক বা কোম্পানির দাতব্য সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে মালিকের মতো ভূমিকা রাখার অধিকার রাখেন। আপনি যদি ট্রেজারি দফতরের এ আদেশকে দাতব্য বলতে পারেন, বার্কশায়ার এই দাতব্যের রশিদ লিখবে। সরকার এটিকে ব্যক্তিগত ট্যাক্সের আওতাধীন করেনি। ফলে শেয়ারহোল্ডাররা এটিকে নিজেদের ট্যাক্সের মধ্যে ফেলতে পারেন না।
এই দর্শন রচনাবলি সম্পাদনা করেছেন লরেন্স এ. কানিংহ্যাম
অনুবাদক: গবেষক, শেয়ার বিজ