শেয়ার বিজ ডেস্ক: চলতি বছর চামড়ার প্রত্যাশিত দাম না পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকারি ও খুচরা চামড়া ব্যবসায়ীরা। কোরবানির পশুর চামড়া বাড়তি মূল্যে কিনে তা কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। অভিযোগ উঠেছে, সিন্ডিকেট করে চামড়ার মূল্য কমিয়ে দিয়েছেন ট্যানারি মালিকরা। এ সুযোগে সীমান্ত দিয়ে চামড়া পাচারের তৎপরতা চলছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
লালমনিরহাট প্রতিনিধি জাহেদুল ইসলাম সমাপ্ত জানিয়েছেন, চামড়া সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাত করার পর লোকসান দিয়ে অত্যন্ত কম দামে তা বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন উত্তরাঞ্চলের ব্যবসায়ীরা। জানা গেছে, কেনা দামের চেয়ে বাজারে দাম কম থাকায় আর্থিকভাবে লোকসানের মুখে পড়েছেন এই অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা। ফলে জয়পুরহাট, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে চামড়া পাচার করতে ভারতীয় চোরাচালান সিন্ডিকেটের সদস্যরা চামড়া ব্যবসায়ীদের আর্থিকভাবে সহযোগিতা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী মালেক, কাওসার, আমীনসহ কয়েকজন জানান, এবার চামড়া ব্যবসায় এমন লোকসান হয়েছে যে কখনোই এই ব্যবসা করতে আর কেউ এগিয়ে আসবে না। চামড়ার আড়তদার ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, ট্যানারি মালিকরা যে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছেন, তার চেয়ে বেশি দরে চামড়া কিনতে হয়েছে।
বগুড়া চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবুল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন সরকার জানান, ঢাকা থেকে ট্যানারি মালিকরা চামড়া কেনার জন্য আসছেন না। যে দু-একজন এসেছেন, তারা সামান্য পরিমাণ চামড়া কিনে চলে গেছেন। ট্যানারি মালিকরা সিন্ডিকেট করে চামড়ার বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন।
এদিকে লালমনিরহাট-১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল গোলাম মোর্শেদ জানান, চামড়া পাচার ঠেকাতে বিজিবির পক্ষ থেকে সব ধরনের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
জয়পুরহাট প্রতিনিধি মো. শামীম কাদির জানিয়েছেন, জয়পুরহাটের বাজারগুলোতে গতবারের চেয়ে চার ভাগের এক ভাগ দামে চামড়া বেচতে হচ্ছে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের। জানা গেছে, বিগত বছরগুলোতে বিভিন্ন বাজারে প্রতিটি ছাগলের চামড়া বিক্রি হয়েছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়। এবার তার আকারভেদে দাম ৭০-৮০ থেকে ১৫০-২০০ টাকা। প্রতিটি গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছিল এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকায়, এবার যা ২৫০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। জেলার মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা জানান, চামড়ার দাম কম হওয়ায় এবার বড় লোকসানের মুখে পড়েছেন তারা। পুঁজি সংকট, ট্যানারি মালিকদের কাছে বকেয়া পাওনা প্রভৃতি কারণে চামড়ার দাম পড়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে চামড়া পাচার রোধে সীমান্তে বিজিবির টহল বাড়ানো হয়েছে।
ময়মনসিংহ প্রতিনিধি এম ইদ্রিছ আলী জানিয়েছেন, জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ করলেও তা বিক্রির জন্য ক্রেতা পাচ্ছেন না মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। লবণের দাম বেশি, চাহিদা অপ্রতুল, বড় ট্যানারি ব্যবসায়ীদের অনীহাসহ বাজারে ক্রেতার অভাব থাকায় চামড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা। দু-একজন ট্যানারি মালিক ও সাধারণ ব্যবসায়ী বাজারে গেলেও দাম দিচ্ছেন কম। ফলে বড় অঙ্কের লোকসানে পড়ার আতঙ্কে আছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও। এ অবস্থা চলতে থাকলে চোরাপথে চামড়া পাচার হওয়ার পাশাপাশি অনেক ব্যবসায়ী পথে বসার আশঙ্কা করছেন।
সেখানকার শম্বুগঞ্জ বাজারে চামড়া বিক্রি করতে আসা মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন জানান, তিনি পাঁচ লাখ টাকা ধার করে প্রতিবারের মতো এবারও চামড়া কিনেছেন, কিন্তু বাজারে এসে বসে থেকেও চামড়া বিক্রি করতে পারছেন না। আলী আকবার নামে এক ব্যবসায়ী জানান, তিনি ৯ লাখ টাকার চামড়া কিনে বাজারে নিয়ে এসেছেন, কিন্তু ক্রেতা নেই।