স্তন ক্যানসার একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা। পুরুষ ও নারীÑউভয়েরই এ রোগটি হতে পারে। তবে রোগটি পুরুষের চেয়ে নারীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গঠিত হয় খুব ছোট ছোট জীবকোষ দিয়ে। স্বাভাবিকভাবে জীবকোষের বিভাজন ঘটে সুশৃঙ্খল ও নিয়ন্ত্রিত উপায়ে। যদি কোনো কারণে এ প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, সেক্ষেত্রে জীবকোষগুলো নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বিভক্ত হয়ে একটি পিণ্ড সৃষ্টি করে। এটাই টিউমার, যাকে বলা হয় স্তন ক্যানসার।
টিউমার হতে পারে দু’ধরনের
বিনাইন
বেশিরভাগ স্তন টিউমার বিনাইন হয়, যা ক্ষতিকর নয়।
ম্যালিগন্যান্ট
ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের মধ্যে এমন ধরনের ক্যানসার জীবকোষ থাকে, যা চিকিৎসা না করা হলে স্তনের বাইরে ছড়িয়ে পড়ে। এগুলো রক্তপ্রবাহ কিংবা লসিকার মাধ্যমে ছড়াতে পারে। এসব জীবকোষ নতুন স্থানে পৌঁছে নতুন টিউমার সৃষ্টি করতে পারে। এ নতুন টিউমারকে বলা হয় মেটাস্ট্যাটিক টিউমার।
লক্ষণ
তবে স্তন ক্যানসার হওয়ার কারণগুলো এখনও সম্পূর্ণভাবে জানা যায়নি। নারীাদের বয়স বাড়ার সঙ্গে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকিও বাড়ে। বেশিরভাগ নারীর ক্ষেত্রে স্তন ক্যানসার প্রথমে স্তনে একটি বেদনাহীন পিণ্ডের আকারে দেখা যায়। এছাড়া আরও কিছু লক্ষণ রয়েছে:
- স্তনের আকার বা আকৃতিতে পরিবর্তন
- স্তনের ত্বকে টোল পড়া
- বোঁটার পরিবর্তন অর্থাৎ ভেতর দিকে ঢুকে যায়
- বোঁটা থেকে রক্তসহ তরল পদার্থের ক্ষরণ
- বোঁটা ও তার চার পাশে চুলকানির মতো হওয়া
- বোঁটার চামড়া উঠতে থাকে
- স্তনের ত্বক লালচে, যেমন কমলার খোসার
মতো হয়
ঝুঁকি
জেনেটিক রিস্ক ফ্যাক্টর: স্তন ক্যানসার হওয়ার একটি কারণ হলো উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া ত্রুটিযুক্ত ‘জিন’। অস্বাভাবিক সেসব জিন স্তন ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়।
পারিবারিক ইতিহাস
স একই পরিবারের দুই বা তার বেশি নিকটাত্মীয়র স্তন ক্যানসার হয়েছে
স একই পরিবারের সদস্যের মধ্যে, বিশেষ করে মলাশয় ও ভ্রƒণকোষের ক্যানসার, সে সঙ্গে স্তন ক্যানসার
স ৪০ বছরের কম বয়সী নিকটাত্মীয়র স্তন ক্যানসার কিংবা যার দুই স্তনেই এ রোগ হয়েছে।
ব্যক্তিগত ইতিহাস
যেসব মহিলার এক স্তনে ক্যানসার হয়েছে, তাদের অন্য স্তনে ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
অন্যান্য ঝুঁকি
স সন্তানহীনতা কিংবা বেশি বয়সে সন্তান হওয়া
স শিশুকে বুকের দুধ পান না করানো।
কখন ডাক্তার দেখাবেন
স্তনে নতুন ও অস্বাভাবিক পিণ্ড অনুভব করলে
স্তনের পিণ্ড বড় ও শক্ত হলে
বোঁটা থেকে অনবরত রক্ত নির্গত হলে
স্তনের ত্বকে পরিবর্তন দেখা দিলে
বোঁটা ভেতরের দিকে ঢুকে গেলে
কোথায় চিকিৎসা করাবেন
- জেলা সদর হাসপাতাল
- মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়
- বিশেষায়িত সরকারি কিংবা বেসরকারি হাসপাতাল
কী ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন
- মেমোগ্রাম বা স্তনের এক্স-রে
- ব্রেস্ট আলট্রাসাউন্ড
- ব্রেস্ট ম্যাগনেটিক রিজোন্যান্স ইমাজিং
- বায়োপসি
- রক্তের পরীক্ষা
- বুকের এক্স-রে
- কম্পিউটারাইজড টমোগ্রাফি স্ক্যান
- পজিট্রন ইমিশন টমোগ্রাফি স্ক্যান।
প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে স্তন ক্যানসার সারানো যায়। তবে ক্যানসার যদি শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে সাধারণত তা সারানো যায় না। চিকিৎসার মাধ্যমে রোগটি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
- ইন্টারনেট অবলম্বনে শিপন আহমেদ