কর মওকুফ করলে সরকারের বেশি লাভ হবে

চীনের কাছ থেকে পাওয়া ৯৪৮ কোটি টাকার ১৫ শতাংশ গেইন ট্যাক্স হবে ১২০-১২৫ কোটি টাকার মতো। যা সরকার পাবে এক বছরে। পরবর্তীতে এ অর্থ থেকে আর কোনো টাকা পাচ্ছে না সরকার। কিন্তু এ ১৫ শতাংশ বা ১২৫ কোটি টাকাকে যদি মওকুফ করা যেত তা বাজারের জন্য অনেক ভালো হতো। এক বছরে এ ৯৪৮ কোটি টাকা বিনিয়োগে যে টার্নওভার আসবে তার ওপরে যে ট্যাক্স দেওয়া হবে, সেটি বিবেচন করলে এক বছরে ১২৫ কোটি টাকার থেকেও অনেক বেশি টাকা পেত সরকার। আর এ টাকাটি দীর্ঘ মেয়াদে পেত। যা ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স ধার্য করায় একবারের বেশি পাবে না। কাজেই এখানে এনবিআর কি হিসাব করল সেটাই চিন্তার বিষয়। নাকি এনবিআরে অঙ্ক কষার লোকই নেই? গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। আহমেদ রশীদ লালীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক ড. জামালউদ্দিন আহমেদ এবং পুঁজিবাজার বিশ্লেষক মো. ফোরকান উদ্দিন, এফসিএ।
জামালউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা যে ২৫ শতাংশ বা ৯৪৮ কোটি টাকার সমপরিমাণ শেয়ার বিক্রি করলাম এ ফান্ডটি পুঁজিবাজারের বিনিয়োগ হবে কি নাÑতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে? আমি মনে করি ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স যেটি হবে সেটি সরকারের ইতিবাচক উপায়ে চিন্তা করা উচিত। পুঁজিবাজারের ভালোর জন্য শুধু গেইন ট্যাক্সটি ছেড়ে দিলে ভালো হয়। তাছাড়া পুঁজিবাজারে অনেক সময় সরকারের হস্তক্ষেপ করতে হয়। এ ফান্ডটি যদি আসে তাহলে বাজারের গভীরতা বেশ কিছুটা বাড়বে। পাশাপাশি গেইন ট্যাক্স ছাড়ার সুবিধার মাধ্যমে ফান্ড গ্রাহকদের যদি ফান্ডটি বাজারে বিনিয়োগের শর্ত দেওয়া হয় তাহলে দীর্ঘ মেয়াদে বাজারে ভালো প্রভাব পড়বে। তাছাড়া ১৫ শতাংশ ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স এমনকি রিডিউ রেটেও যদি দেওয়া হয় তাহলেও তা সরকারের জন্য বড় কোনো অর্থ নয়। আর এ অর্থটি যদি পুঁজিবাজারে পাঁচ বছর ধরে রাখা যায় তাহলে তারল্যের সমস্যা অনেকটাই দূর হবে। এছাড়া করছাড়ের সুবিধা দিয়ে ফান্ডগুলো যদি বাজারে রাখা যায় তাহলে সরকারের আর পুঁজিবাজারকে সহযোগিতা করা লাগবে না। চীনা কনসোর্র্টিয়াম আসায় আন্তর্জাতিকভাবে একটি প্রভাব পড়বে বাজারে। এছাড়াও ক্রেডিট রেটিংয়ে বাংলাদেশ একটি আলাদা সুবিধা পাবে। পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগকারীরা দেশের বাজারে বিনিয়োগে আগ্রহী হবে। আমেরিকার বন্ড মার্কেটে চীনের ৬০ শতংশের মতো বিনিয়োগ আছে। সেদিক থেকে আমেরিকার অর্থনীতি অনেকটা নির্ভর করে চীনের ওপরে। চীনারা আমাদের বাজারেও বন্ড মার্কেটে বেশ বড় অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করবে বলে জানা গেছে।
মো. ফোরকান উদ্দিন বলেন, কৌশলগত অংশীদার হিসেবে চীনের মাধ্যমে যে ফান্ডটি বাজারে এসেছে তার কারণে হয়তো আর বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অর্থ চাইতে হবে না। এতে টাকার প্রবাহ বাড়বে। অন্যদিকে এ ৯৪৮ কোটি টাকার ১৫ শতাংশ গেইন ট্যাক্স ১২০-২৫ কোটি টাকার মতো আসে যা সরকার পাবে এক বছরে। পরবর্তীতে আর কোনো টাকা পাচ্ছে না সরকার। কিন্তু এ ১৫ শতাংশ মানে ১২৫ কোটি টাকাকে যদি মওকুফ করা যেত তা বাজারের জন্য অনেক ভালো হতো। তাছাড়া এ অর্থটি কিন্তু বাজেটে ধরা নেই। আর এ ৯৪৮ কোটি টাকা মার্কেটের দক্ষ লোকেরাই ব্যবহার করবে, আমজনতা নয়। কাজেই এ অর্থটি লোপাট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম। সে দিক বিবেচনায় ওখানেও সরকার ঝুঁকি মুক্ত থাকছে। কিন্তু কেন এটি করা হলো না তা আমার মাথায় আসছে না। এখানে এক বছরে যদি এ ৯৪৮ কোটি টাকার ওপরে রোল ওভার হয় এবং টার্নওভারের ওপরে যে ট্যাক্স বা এনআইটি দেওয়া হয়, সেদিক বিবেচনায় এক বছরে ওই ১২৫ কোটি টাকার থেকেও অনেক বেশি টাকা পেত সরকার। আর এ টাকাটি ধারাবাহিকভাবেই পেত সরকার যা ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স ধার্য করায় পাবে না। কাজেই এখানে কিভাবে এনবিআর হিসাব করল সেটাই আসলে চিন্তার বিষয়।

শ্রুতিলিখন: রাহাতুল ইসলাম

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০