ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য ১৯৯৩ সালে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন গঠন করা হয়। পরে সংস্থাটির নামকরণ করা হয় ‘বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন’; সংক্ষেপে বিএসইসি। সংস্থাটি ২৫ বছরপূর্তি উপলক্ষে রজতজয়ন্তী উদ্যাপন করতে যাচ্ছে। এজন্য বিএসইসিকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে খুজিস্তা নূর-ই-নাহারীনের সঞ্চালনায় আলোচক ছিলেন ওয়ান সিকিউরিটিজ লিমিটেডের সিইও আমিনুল ইসলাম।
আমিনুল ইসলাম বলেন, ১৯৫৬ সালে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের কার্যক্রম শুরু হয়। তখন এর কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থা ছিল না। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য ১৯৯৩ সালে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন গঠন করা হয়। পরে সংস্থাটির নামকরণ করা হয় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন। এখন সংস্থাটি ২৫ বছরপূর্তি উপলক্ষে রজতজয়ন্তী উদ্যাপন করতে যাচ্ছে। এজন্য অভিন্দন ও শুভেচ্ছা জানাই। বিএসইসি দেশের পুঁজিবাজার সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে পুঁজিবাজারের গুরুত্ব অনেক। এই পুঁজিবাজারে ছোট-বড় বিনিয়োগকারীর অর্থ একত্রিত করে সুসংগঠিত করার প্রতিষ্ঠান হচ্ছে বিএসইসি। যেখানে প্রাইমারি, সেকেন্ডারি ইস্যুগুলো একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থার মাধ্যমে চলবেÑএটাই স্বাভাবিক। এটি সব দেশেই রয়েছে। বিএসইসি প্রাথমিকভাবে কিছুদিন যৌথ মূলধনি কোম্পানি দেখাশোনা করত। সংস্থাটি পুঁজিবাজার সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের আইন-কানুন পরিচালনা করা, বিভিন্ন ধরনের পণ্য আনা, আইপিও অনুমোদন দেওয়া, ছোট ও বড় সব বিনিয়োগকারীর অর্থ সুরক্ষা দেওয়া এবং সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। দেশের পুঁজিবাজারের একজন অভিভাবক হিসেবেও কাজ করে। বিএসইসি গঠিত হওয়ার পর থেকে পুঁজিবাজার উন্নয়নে অনেক অবদান রেখেছে এবং ভবিষ্যতে আরও ভালো মানের কোম্পানি নিয়ে নিয়ে আসবেÑএটা সবার প্রত্যাশা।
সাম্প্রতিক সময়ে জ্বালানি খাতে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ছে। দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে এর ভূমিকা রয়েছে এবং সরকারের পক্ষ থেকেও এ খাতে বিনিয়োগ বাড়ছে। শুরু থেকে সরকারও এ খাতে গুরুত্ব দিয়ে আসছে। সে হিসেবে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগও বাড়ছে। আগের চেয়ে এ খাতটি অনেক সমৃদ্ধ হয়েছে। জ্বালানি খাতের উন্নয়নে সরকার সম্প্রতি দুই বিলিয়ন ইউএস ডলারের বড় একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এছাড়াও ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি) সারা পৃথিবীর ১০টি জায়গায় বিভিন্ন অঞ্চলে কার্যালয় করতে যাচ্ছে। তার মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় একটি কার্যালয় হচ্ছে ঢাকায়। তারা মনে করছে, বাংলাদেশ অর্থনীতির দিক থেকে অনেক এগিয়ে যাচ্ছে বা ভালো করছে এবং ভবিষ্যতে আরও ভালো করবে। এ জন্যই আইডিবি এর একটি কার্যালয় করতে যাচ্ছে। দেশের শিল্প-কারখানাগুলোকে উন্নত করতে হলে অবশ্যই জ্বালানি খাতের উন্নয়ন করতে হবে। জ্বালানি খাত ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব না। দেশে আরও অনেক ভালো মানের জ্বালানি খাতের কোম্পানি রয়েছে, যেগুলো সরাসরি বা আইপিও’র মাধ্যমে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। বিনিয়োগকারীদের জ্বালানি খাতের প্রতি যে আগ্রহ, সেটি পূরণ করা যাবে। আমাদের পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ তুলনামূলক অনেক কম। বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাওয়ার কারণ হতে পারে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি।
বিনিয়োগ সিদ্ধান্তের সঙ্গে অনেকগুলো বিষয় কাজ করে। অনেক বিনিয়োগকারী অনেক ভালো কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে; কিন্তু তাদের কাছে যখন পরিস্থিতি ভালো মনে হয় না, তখন তারা টাকা উঠিয়ে নিয়ে অপেক্ষা করে। এটা হচ্ছে একজন বিনিয়োগকারীর মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপার। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলোতে সাধারণত মনস্তাত্ত্বিক বিষয় তুলনামূলক কম কাজ করে। তারা দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অস্থিরতা বেশি কাজ করে। সামনে কি হয়-না হয়। আসলে পুঁজিবাজার একটি ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা। যে ঝুঁকি অতিক্রম করতে পারবে, সে-ই লাভবান হবে। দীর্ঘমেয়াদি ও ভালো মানের কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে হবে। তবে কারও কথায় নয়। যে কোম্পানিতে বিনিয়োগ করবে, সে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন, ব্যবসার খাত, প্রতিদিন, মাস ও বছরে দর ওঠানামার গতি, বিগত বছরের মুনাফা প্রদানের হার, কোম্পানির কত শতাংশ শেয়ার কার হাতে রয়েছে; একটি কোম্পানির শেয়ার পরিচালক, সরকার, প্রাতিষ্ঠানিক, বিদেশি, সাধারণ বিনিয়োগকারীÑকার কাছে থাকে, শেয়ারপ্রতি আয়, পিই রেশিও, আর্থিক প্রতিবেদন এবং ওই প্রতিষ্ঠানের খ্যাতি, সুনাম, অতীত, বর্তমান পারফরম্যান্সÑএসব দেখতে হবে। এছাড়া পুঁজিবাজারের অভিজ্ঞদের কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে। দু-একটি ঘটনায় বিচলিত হওয়ার দরকার নেই। দেশ তার নিজস্ব গতিতে চলবে। দেশের যে বয়স, তার পেছনে অনেক উত্থান-পতন হয়েছে; কিন্তু দেশ পেছনের দিকে যায়নি বরং সামনের দিকে এগিয়ে গেছে এবং অনেক উন্নয়ন হয়েছে।
শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ