পুঁজিবাজারে যারা বিভিন্ন শেয়ার নিয়ে কারসাজি করে তারা কখনও কোনো কোম্পানির দর অযৌক্তিক হারে বাড়ায় আবার কমায়। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা না বুঝে ওই শেয়ারে বিনিয়োগ করে প্রচুর ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এগুলো দেখার দায়িত্ব যাদের তারা দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছেন না। যদিও বিএসইসি এ ব্যাপারে কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে কিন্তু তা অনেক দেরিতে। কারণ বিএসইসি যখন ব্যবস্থা নিচ্ছে ততদিনে কারসাজিকারকরা ফায়দা লুটে নিয়েছে। এতে উল্টো সাধারণ বিনিয়োগকারীরাই ক্ষতির মুখে পড়েছে। বিএসইসি যা করেছে তা অবশ্যই বাজারের জন্য ভালো। কিন্তু কোনো শেয়ার নিয়ে কারসাজি শুরুর দুই-চার দিনের মধ্যেই ব্যবস্থা নিলে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হতেন না।
হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন অর্থনীতি বিশ্লেষক মাহমুদ হোসেন, এফসিএ এবং সুহƒদ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মাহমুদুল হাসান।
মাহমুদ হোসেন বলেন, চলতি বছরের শুরু থেকেই পুঁজিবাজারে মন্দাবস্থা চলছে। যেখানে গত বছর আমরা একটি ভালো বাজার লক্ষ্য করেছিলাম। তখন পুঁজিবাজারের সূচক ছয় হাজার ৩০০-৪০০ পয়েন্টের মতো উঠেছিল সঙ্গে টার্নওভারও অনেক ভালো ছিল। কিন্তু যখন বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো ভাবনা-চিন্তা ছাড়াই পুঁজিবাজারে এককভাবে এডি রেশিওর বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিল তখন থেকেই বাজারে নি¤œমুখী প্রবণতা শুরু হলো। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমান বাজারের খারাপ অবস্থা। এতে বাজারের টার্নওভার অনেক কমে গেল এবং সূচক ছয় হাজার ৩৩৬ থেকে কমে বর্তমানে পাঁচ হাজার ৩৯০ পয়েন্টে এসে দাঁড়িয়েছে। মানে প্রায় এক হাজার পয়েন্টের পতন হয়েছে বাজারে। আর এটি পুঁজিবাজারের জন্য অবশ্যই একটি দুঃখজনক ঘটনা। কাজেই নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে যে কোনো সিদ্ধান্ত নেবার আগে তা বাজারের ওপর কতটা প্রভাব ফেলতে পারে সেটি চিন্তা করা উচিত। তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে যারা বিভিন্ন সময় শেয়ার নিয়ে কারসাজি করে তারা কখনও কোনো কোম্পানির দর অযৌক্তিক হারে বাড়ায় আবার কমায়। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা না বুঝে ওই শেয়ারে বিনিয়োগ করে প্রচুর ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। অথচ এগুলো দেখার কেউ নেই বাজারে। যাদের এগুলো দেখার দায়িত্ব তারা দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছে না। যদিও বিএসইসি এ ব্যাপারে কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে কিন্তু তা অনেক দেরিতে। কারণ বিএসইসি যখন ব্যবস্থা নিয়েছে ততদিনে কারসাজিকারকরা ফায়দা লুটে নিয়েছে। এতে উল্টো সাধারণ বিনিয়োগকারীরাই ক্ষতির মুখে পড়েছে। কারণ সবেমাত্র তারা ওই সব শেয়ারে ঢুকেছে। এখানে বিএসইসি যা করেছে তা অবশ্যই বাজারের জন্য ভালো কিন্তু যেহেতু বিএসইসি জানে কোথায় কি হচ্ছে তাই কোনো শেয়ার নিয়ে কারসাজি শুরুর দুই-চার দিনের মধ্যেই ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
মাহমুদুল হাসান বলেন, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজের বর্তমান ম্যানেজমেন্ট দায়িত্ব গ্রহণ করেছে গত বছরের অক্টোবর মাসে। এরপর তৃতীয় প্রান্তিকে আমরা মুনাফা করেছি এবং প্রথম দুই প্রান্তিকে যে ক্ষতি হয়েছিল সেটি কাটিয়ে উঠে মুনাফা করতে পেরেছি। এর চাইতেও ভালো প্রবৃদ্ধি বর্তমানে আমাদের রয়েছে। আমাদের অ্যাকাউন্টস অডিট হচ্ছে। আর এটি সম্পূর্ণ হলেই আমরা ডিভিডেন্ড ঘোষণার বোর্ড মিটিংয়ের তারিখ ঘোষণা করব। এছাড়া আমরা আশা করছি, কোম্পানির প্রবৃদ্ধি এবং অগ্রগতি আগের চাইতে অনেক ভালো এবং কোম্পানি ‘জেড’ ক্যাটেগরিতে না থেকে অবশ্যই ক্যাটেগরি পরিবর্তন করবে। শুধু তাই নয় আজকে একজন বিনিয়োগকারী সুহৃদ কোম্পানিতে যে দরে বিনিয়োগ করবে সেটি তিন বছর পর ১০ গুণ হয়ে যাবে। কারণ আমাদের বর্তমান টার্নওভার বছরে ২০ থেকে ২৫ কোটির মতো। এটি ২০১৯ সালের মধ্যে ১০০ কোটি অতিক্রম করে যাবে। পাশাপাশি ২০২০ সালের মধ্যে এটি ২০০ কোটি অতিক্রম করবে। বর্তমানে আমাদের পণ্যসমূহ হচ্ছে পিভিসি ফিল্ম যেটি ট্যাবলেট বা ক্যাপসুলের প্যাকেজিংয়ে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও বিভিন্ন পণ্য যেমন, ওয়ান টাইম ইউজ গ্লাস, কাপ ইত্যাদি। এটিকে গ্রিন ফ্যাক্টরি বা পরিবেশবান্ধব করার পরিকল্পনা করছি এবং এটি বাংলাদেশের প্রথম শিল্প-কারখানা যেখানে থ্রি-ফেইজ প্রিপেইড মিটার লাগানো হবে। আমাদের প্রিপেইড মিটার লাগানোর ব্যাপারে হাইকোর্টের একটি রুল রয়েছে যেটি আমাদের পক্ষে এবং সেটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে কিন্তু এটির তথ্য কোথাও যায়নি। অথচ এ তথ্যটি আমরা চিঠি দিয়ে স্টক এক্সচেঞ্জকে জানিয়ে দিয়েছি কিন্তু তারা প্রকাশ করেনি। এছাড়া আমরা চীন থেকে ইতোমধ্যেই প্রিপেইড মিটার নিয়ে এসেছি। গত ২৪ তারিখে এনআরবি ব্যাংকের সঙ্গে ঋণ সমন্বয়ের জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। আগে যে ম্যানেজমেন্ট ছিল তারা ২৬ লাখ শেয়ার এনআরবি ব্যাংকের কাছে হস্তান্তর করে দিচ্ছে। আর এনআরবি ব্যাংক ৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকার ঋণ সমন্বয় করে দিচ্ছে।
শ্রুতিলিখন: রাহাতুল ইসলাম