বই আলোচনা: ঐতিহাসিক উপন্যাস ‘অগ্নিকন্যা’র গল্প

শরিফুল ইসলাম পলাশ: পাকিস্তানের প্রস্তাবক হয়েও মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ’র রাজনৈতিক কৌশলের কারণে পূর্ব বাংলার তুমুল জনপ্রিয় নেতা শের-ই-বাংলা এ কে ফজলুল হক হয়ে গেলেন ‘দুশমন’। দেশভাগের আগে আগে পাকিস্তান আন্দোলনের আরেক শীর্ষ নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সাহেবকেও মুসলিম লীগ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এতে কপাল খোলে জিন্নাহ-লিয়াকত খাঁ’র প্রিয়ভাজন খাজা নাজিমুদ্দিনের। উচ্চাকাক্সক্ষী জিন্নাহ দেশ ভাগের প্রাক্কালে পাকিস্তানের হিস্যা আদায়ের চেয়ে ‘বড় লাট’ হওয়ার ব্যাপারেই বেশি মনোযোগী ছিলেন। আর এটাই পাকিস্তানের জন্য ‘কাল’ হলো।

লর্ড মাউন্ট ব্যাটেনের প্রতিহিংসার আগুনে জ্বললো পাকিস্তান। তাতেও জিন্নাহ সাহেবের খায়েশ মিটলো না। তিনি নিজে উর্দুভাষী না হয়েও খাজা সাহেবের পরামর্শে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করতে মরিয়া হয়ে উঠলেন। আর তাতে ফুঁসে উঠলো বাঙালি। রাস্তায় নামলেন শের-ই-বাংলা, সোহরাওয়ার্দী, মওলানা ভাসানী ও শেখ মুজিবুর রহমানসহ আরও অনেকে। রক্তের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত হলো ভাষার দাবি। আর এতে শোষণ-নিপীড়ন অনেকটাই বেড়ে গেলো। ৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিপুল বিজয় ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ কিছুতেই মানতে পারলো না। শুরু হলো গোলাম মোহাম্মদ-ইস্কান্দার মির্জাদের ষড়যন্ত্র। তারাও অবশ্য দোর্দণ্ড প্রতাপশালী সামরিক শাসক জোনারেল আইয়–ব খানের কাছে পরাস্ত হলেন। বন্দি হলো গণতন্ত্র। কারাগারে বসে শোষিত পূর্ব পাকিস্তানের জন্য শেখ মুজিবুর রহমান আঁকলেন ছয় দফার ছক।

দেশ ও রাজনীতির পেছনের আরও অনেক অজানা গল্প উঠে এসেছে ঐতিহাসিক উপন্যাস ‘অগ্নিকন্যা’য়। সময়ের জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক মোস্তফা কামালের ঐতিহাসিক উপন্যাস এটি।

‘অগ্নিকন্যা’ সম্পর্কে বইটির ভূমিকায় লেখক বলেছেনÑ‘অগ্নিকন্যা ঐতিহাসিক উপন্যাস, ইতিহাস গ্রন্থ নয়। অগ্নিকন্যা এই উপন্যাসের প্রতীকী নাম। কাজেই শুধু একটি চরিত্রকে কেন্দ্র করে এই উপন্যাস রচিত হয়নি। একটি বিশেষ সময়কে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। এর সময়কাল হচ্ছে ১৯৪৭ থেকে ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দ। দেশভাগ ও তার পরবর্তী প্রেক্ষাপটে ইতিহাসের নায়কদের ভূমিকা তুলে ধরার ক্ষেত্রে কোনোরকম পক্ষপাতিত্ব করা হয়নি। ঘটনা পরম্পরায় যার যে ভূমিকা ছিল, তা তুলে ধরতে কার্পণ্য করিনি।’

আলাপকালে তিনি বলেন, ‘বাংলা সাহিত্যের সব ক্ষেত্রেই কাজ করে যাবো। আরও বড় কিছু কাজ করার পরিকল্পনা আছে আমার। এমন কিছু কাজ করতে হবে, যা বাংলা সাহিত্যে চিরস্থায়ী আসন করে নিতে পারে। আমার ধ্যান-জ্ঞান হচ্ছে লেখালেখি। আমি নিরলসভাবে সেটাই করছি। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে সে কাজটি করে যেতে চাই। সৃষ্টিশীলতায় মুখর থাকতে চাই। এ উপন্যাস রচনা করতে আমাকে প্রচুর পড়ালেখা করতে হয়েছে। লেখার প্রয়োজনে কোনো কোনো গ্রন্থ থেকে উদারভাবে অনেক তথ্য নিয়েছি। ‘অগ্নিকন্যা’ প্রথম খণ্ড লেখা হয়েছে। আরও দুটি খণ্ড লেখার ইচ্ছা আছে।’

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০