শেয়ার বিজ ডেস্ক: সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা আজ ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে। এজন্য যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল রোববার প্রস্তুতির শেষ দিনে প্রতিমাশিল্পীরা ব্যস্ত সময় পার করেছেন। তারা প্রতিমায় টেনেছেন তুলির শেষ আঁচড়। এর পর পোশাক ও অলঙ্কারে করেছেন শুশোভিত। ১৯ অক্টোবর প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে এ উৎসব সমাপ্ত হবে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
লক্ষ্মীপুর: সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মণ্ডপগুলোতে শিব, দুর্গা, লক্ষ্মী, গণেশ, কার্তিক, স্বরস্বতী, মহিষ, অসুরসহ প্রতিমায় অঙ্কন ও অলংকরণে ব্যস্ত ছিলেন কারিগররা।
জানা যায়, জেলায় ৭৮টি মন্দিরে পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৩৩টি, রায়পুরে ১১টি, রামগঞ্জে ২০টি, রামগতিতে ১১টি ও কমলনগরে তিনটি মণ্ডপে উদ্যাপিত হচ্ছে দুর্গোৎসব।
সদর উপজেলার চররুহিতা গ্রামের মৃৎশিল্পী সুজন পাল জানান, গতকাল কাঠ, সুতা, রঙ, কাপড় ও মুকুট দিয়ে প্রতিমা সজ্জায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
পূজা উদ্যাপন কমিটির জেলা সভাপতি শংকর মজুমদার জানান, এ বছর জাঁকজমকপূর্ণভাবে পূজার আয়োজন করা হয়েছে। পুলিশ সুপার আসম মাহাতাব উদ্দিন জানান, হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজা উপলক্ষে সব ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে জেলায় বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
কুড়িগ্রাম: জেলায় ৫৩১ মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৬০টি, কুড়িগ্রাম পৌরসভায় ১৯টি, উলিপুর উপজেলায় ১২১টি, চিলামারীতে ৩১টি, রৌমারীতে আটটি, রাজিবপুরে একটি, নাগেশ্বরীতে ৮০টি, ভূরুঙ্গামারীতে ১৯টি, রাজারহাটে ১১৯টি ও ফুলবাড়ীতে ৭৩টি মণ্ডপ রয়েছে।
সদর থানার ওসি মাহ্ফুজুর রহমান জানান, প্রতিটি মণ্ডপ ঘিরে বিশেষ নিরাপত্তা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া স্ট্রাইকিং ফোর্স ও কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে সার্বক্ষণিকভাবে পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।
লালমনিরহাট: জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক গোপাল চন্দ্র বর্মণ জানান, গত বছর সদর উপজেলায় ১৪৪টি, আদিতমারীতে ১০৬টি, কালীগঞ্জে ৮২টি, হাতীবান্ধায় ৭১টি ও পাটগ্রাম উপজেলায় ২৬টি মণ্ডপে দুর্গোৎসব উদ্যাপন করা হয়েছে। এবার আরও বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পুলিশ সুপার এসএম রশিদুল হক জানান, নিরাপত্তার সঙ্গে দুর্গোৎসব উদ্যাপন ও নির্দিষ্ট স্থানে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিমা বিসর্জনের জন্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ: জেলায় ১৩২টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৫৭টি, শিবগঞ্জে ৩৫টি, গোমস্তাপুরে ২৬টি, নাচোলে ১২টি ও ভোলাহাটে দুটি পূজামণ্ডপ রয়েছে।
জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি বাবুল কুমার ঘোষ জানান, এ বছর জেলায় পাঁচটি নতুন পূজামণ্ডপ তৈরি হচ্ছে। সুষ্ঠুভাবে এ উৎসব উদ্যাপনের লক্ষ্যে পূজা উদ্যাপন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সুপার টিএম মোজাহিদুল ইসলাম জানান, প্রতিটি পূজামণ্ডপে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কোনো ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে পুলিশ।
হবিগঞ্জ: জেলায় মোট ৬৪৭টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, এ বছর মোট ৬৪৭টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর মধ্যে সার্বজনীন ৬৪৭টি এবং ব্যক্তিগত ১৬টি। এর মধ্যে হবিগঞ্জ পৌরসভায় ৩৬টি, সদর উপজেলায় ৪৯টি, শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভায় ছয়টি, লাখাই উপজেলায় ৬৫টি, আজমিরীগঞ্জে ৩৭টি, বানিয়াচংয়ে ১১৮টি, চুনারুঘাট উপজেলায় ৭১টি, চুনারুঘাট পৌরসভায় আটটি, মাধবপুরে ১০৬টি, মাধবপুর পৌরসভায় ১২টি, বাহুবল উপজেলায় ৪৯টি, নবীগঞ্জ উপজেলায় ৮২টি, নবীগঞ্জ পৌরসভায় রয়েছে আটটি। গত বছরের তুলনায় এ বছর ৩০টি মণ্ডপ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বান্দরবান: এবারও জেলা শহরের রাজারমাঠে রাজপ্রাসাদের আদলে দক্ষিণ চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় পূজামণ্ডপ তৈরি করা হয়েছে।
পূজা উদ্যাপন কমিটি জানায়, জেলায় সার্বজনীন শারদীয় দুর্গা উৎসব উদ্যাপন কমিটির ব্যানারে ২৭টি এবং স্থানীয়ভাবে আরও ৪৫টি মন্দিরে শারদীয় দুর্গাপূজা উদ্যাপন করা হচ্ছে। তার মধ্যে সদরে ১১টি, রোয়াংছড়িতে দুটি, রুমায় একটি, থানছিতে একটি, লামায় সাতটি, আলীকদমে তিনটি ও নাইক্ষ্যংছড়িতে দুটি মণ্ডপে এ উৎসব উদ্যাপিত হচ্ছে।
এছাড়াও লামা উপজেলার কেন্দ্রীয় হরি মন্দির, বগাইছড়ি কমিউনিটি সেন্টার হরি মন্দির, ইয়াংছা রাম মন্দির, আজিজনগর তেলুনিয়া পাড়া হরি মন্দির, পূর্ব হায়দার নাশী উত্তর হিন্দুপাড়া হরি মন্দির, নারাখোলা হরি মন্দির, পাগলী আগাপাড়া পূজামণ্ডপ, চম্পাতলী লোকনাথ হরি মন্দির, আলীকদম উপজেলার হরিমুখ হরি মন্দির, নাইক্ষ্যংছড়ি কেন্দ্রীয় সার্বজনীন হরি মন্দিরকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
জেলা কেন্দ্রীয় দুর্গোৎসব উদ্যাপন কমিটির সভাপতি লক্ষ্মীপদ দাশ জানান, জেলায় ঝুঁকিপূর্ণ কোনো পূজামণ্ডপ নেই। তবে কিছু পূজামণ্ডপকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। সেগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি মন্দির কমিটি আলাদাভাবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেবে।
