‘#মি টু’তে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন বাংলাদেশি নারী শিল্পীরা

হামিদুর রহমান : হ্যাশট্যাগ মি টু ‘#মি টু’ আন্দোলনে সম্প্রতি উত্তাল রয়েছে প্রতিবেশী দেশ ভারত। শিল্পীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনে শামিল হচ্ছেন। যৌন হেনস্থা হতে হতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় তারা এখন রুখে দাঁড়িয়েছেন। এই আন্দোলনের রেশ পড়েছে বাংলাদেশেও।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, ভারতের মতো বাংলাদেশেও এ ঘটনা অহরহ ঘটছে। মিডিয়ায় কাজ করতে এসে হেনস্থার শিকার হচ্ছেন প্রায় ৯০ শতাংশ বাংলাদেশি নারী শিল্পীরা। কাজের বিনিময়ে নারীদের ভোগ করতে চাওয়াদের বিরুদ্ধে শাস্তির প্রতিবাদে বলিউডের হ্যাশট্যাগ ‘মি টু’র আন্দোলনে অনুপ্রাণিত হচ্ছে বাংলাদেশি নারী শিল্পীরাও। কিন্তু নিজের ক্যারিয়ারের কথা ভেবে এখন পর্যন্ত সরাসরি মুখ খুলছেন না কেউ। কেবল অপেক্ষা, কেউ মুখ খুললেই অন্যরাও অভিযোগ তুলবেন এসব নারীলোভী মুখোশধারীদের বিরুদ্ধে। তবে অব দ্য রেকর্ডে বিষয়টি স্বীকার করছেন অনেকেই। তাদের অভিমত, অচিরেই বাংলাদেশে এই আন্দোলন শুরু হবে।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নাট্যকার বলেন, কিছুদিন আগে এক প্রযোজক আমার সঙ্গে দেখা করেন। এক উঠতি নায়িকার নাম করে তিনি আমার ১২টি নাটক বানানোর প্রস্তাব দেন। সবগুলো নাটকেই অভিনয় করবেন ওই নায়িকা। শর্ত বিনিময়ে ওই নায়িকা তার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে হবে। আমি তাকে বললাম, আপনি কি ব্যবসা করতে চান নাকি অন্য উদ্দেশ্য। তিনি সহজ উত্তর দিলেন, ব্যবসা আমার মূল্য উদ্দেশ্য নয়। এরপর তিনি জানালেন, বাংলাদেশের প্রথম সারির কিছু নায়িকার নাম। তাদের সঙ্গে নাকি ওই প্রযোজকের সখ্য রয়েছে। যে কারণে গল্পের সঙ্গে মিলুক বা না মিলুক তার নাটকে এসব নায়িকার মুখ দেখা যায়।
অভিনেত্রী মুমতাহিনা টয়া শেয়ার বিজকে বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনাগুলো ইন্ডাস্ট্রির পাশাপাশি দেশ ও সমাজের জন্য খারাপ। অনেক সময় এসবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার ইচ্ছা থাকলেও কেউ করে না। কেননা, এর আগেও কিছু আর্স্টিট এসব বিষয় নিয়ে মুখ খুলে তোপের মুখে পড়েছিল। এখন ইন্ডিয়ায় হ্যাশট্যাগ ‘মি টু’র যে আন্দোলন এটি সব সময়ের জন্যই পজিটিভ। এখনই যদি এসব প্রতিরোধ করা না যায় ভবিষ্যতে এ ঘটনাগুলো আরও বেশি ঘটবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরও একজন অভিনেত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে মিডিয়ায় নতুন কেউ কাজ করতে এলে তাকে অনেক কিছু ছাড় দিতে হয়। আমার ক্ষেত্রেও এটা ঘটেছে। শুধু আমার ক্ষেত্রেই নয়, অনেকেই যৌন হয়রানির শিকার হলেও মুখ খুলছে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি জানি, আমাদের দেশে এখন বিষয়টি নিয়ে এখন কিছু পরিচালক চিন্তায় পড়েছেন, যে কোনো সময় তাদের মুখোশ খুলে যেতে পারে।’
অভিনেত্রী মৌসুমী হামিদ শেয়ার বিজকে বলেন, ‘মিডিয়ায় প্রথম দিকে কাজ করতে এলে সবারই এমন বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হতে হয়। তবে সবার আগে নিজের সচেতন হতে হবে। যৌন হয়রানি শুধু ইন্ডিয়াতেই হয় না, আমাদের দেশের এমন ঘটনা অহরহ ঘটলেও কেউ সাহস করে মুখ খুলতে চাই না। কেননা, এসব বিষয় নিয়ে যারাই মুখ খুলেছে তারাই উল্টো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কেউ যদি মুখ খুলে তার পাশে দাঁড়ানোর মতো কেউ থাকবে না। উল্টো তাকে নিয়েই কানাকানি শুরু হয়।’
অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ কম। শিল্পীদের হাতে ১২ মাস কাজ থাকে না। যে কারণে কেউ যৌন হয়রানির শিকার হলে মুখ খুলতে চান না। তাছাড়া মিডিয়ার বাইরেও কোনো নারী ধর্ষণের শিকার হয়ে মারা গেলেও উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করা হয় না। যে কারণে শিল্পীরা যে যার জায়গা থেকে এসব অভিযোগের বিষয়ে বিব্রত হলেও প্রকাশে কেউ কিছু বলতে চান না। তবে কেউ একজন মুখ খুললে বাংলাদেশেও একের পর এক নারীলোভী মুখোশধারীদের নাম বেরিয়ে আসবে। তবে এভাবে আর নয়, বাংলাদেশেও এসব যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠতে পারে বলে নিশ্চিত করেছেন একাধিক শিল্পীরা।
অভিনেত্রী উর্মিলা শ্রাবন্তী কর বলেন, ‘মিডিয়ায় কাজের ক্ষেত্রে এ ধরনের অনেক কিছুই হয়। তবে নিজের পারসোনালিটি ঠিক থাকলে এ ধরনের সমস্যাগুলো এড়িয়ে চলা যায়। তবে আমার ক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত এ ধরনের কিছু ঘটেনি।’
বাংলাদেশে যৌন হেনস্থার বিষয়টি এখন ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করা হয়েছে। এখন মিডিয়ায় স্যাক্রিফাইস কথাটির জোর প্রচলন। চলচ্চিত্র কিংবা নাটক সব জায়গায় এ কথাটি প্রচলন। এখানে যারা স্যাক্রিফাইস করতে পারবেন তারাই কেবল কাজের সুযোগ পাবেন। এখন যেসব মেয়ে ছোট পর্দায় বা বড় পর্দায় মুখ দেখাতে চান তাদের প্রথমেই হাজির হতে হয় সহকারী পরিচালকের কাছে। মূলত তারা এসব শিল্পীর কাছে স্যাক্রিফাইস করার প্রস্তান দেন। যদি কেউ রাজি হন তাহলেও তার মূল পরিচালক বা প্রযোজকের সঙ্গে দেখা হয়। প্রযোজক বা পরিচালককে তুষ্ট করতে পারলে একদিন সত্যি সত্যিই পর্দায় তার মুখ দেখা যায়। যারা নিয়মিত অভিনয় করছেন তাদের বেলায়ও একই ঘটনা ঘটে।
সিনিয়র শিল্পীরা জানান, এ অবস্থা থেকে নিষ্কৃতি পেতে হলে যারা শিল্পকে ভালোবাসেন, যারা কাজকে ভালোবাসেন তাদেরই এগিয়ে আসতে হবে। তারা যদি দেহলোভী না হয়ে কাজের মূল্যায়ন করেন তাহলে কোনো শিল্পীকে হয়রানির শিকার হতে হবে না। অন্যদিকে যারা নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে পর্দায় প্রতিষ্ঠিত হতে চাই তাদের দৌরাত্ম্যও বন্ধ হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০