প্রায় প্রতিদিনই দেশের বিমানবন্দর ও স্থলবন্দর কিংবা বিভিন্ন চোরাইপথে আসা স্বর্ণ জব্দ হচ্ছে। কখনও তা ভরি (তোলা) বা কেজি নয়, মণকেও ছাড়িয়ে গেছে। নিত্যনতুন কৌশল, রুট পরিবর্তনের মাধ্যমে চোরাচালান হচ্ছে। শরীরের ব্যান্ডেজে, পায়ুপথে, হুইল চেয়ার, জুতা, স্যান্ডেল, বেল্ট, সাবান কেস, ল্যাপটপ প্রভৃতির ভেতরও স্বর্ণ পাচার হচ্ছে। অথচ দেশে বৈধ পথে এক ভরি স্বর্ণও আমদানি হয়নি।
গতকাল শেয়ার বিজে প্রকাশিত ‘মূল হোতারা পর্দার আড়ালে: চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে ১৯ বছরে ৬ মণ স্বর্ণ জব্দ’ শীর্ষক প্রতিবেদন পাঠকদের মনোযোগ কাড়বে। একসময় শাহজালাল বিমানন্দরকে ‘স্বর্ণের খনি’ বলে ব্যঙ্গ করত লোকে। উক্ত প্রতিবেদনে প্রমাণ হলো, শাহ আমানতও এ ক্ষেত্রে তেমন পিছিয়ে নেই। দুঃখজনক হলো, স্বর্ণ জব্দ হলেও চোরাচালানের হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে। ১৯ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত ১৮ বছরে গড়ে যে পরিমাণে স্বর্ণ জব্দ হয়েছে, গত ১১ মাসে তার দ্বিগুণ আটক হয়েছে এ বিমানবন্দরে। ১৯৯৯ থেকে ২০১৭ সালের অক্টোবর পর্যন্ত প্রতি বছর গড়ে ১১ কেজি ৮৮০ গ্রাম স্বর্ণ জব্দ হয়। আর গত নভেম্বর থেকে চলতি মাস পর্যন্ত আটক হয়েছে ২২ কেজি ২৬৮ গ্রাম।
দেখা যায়, প্রতি মাসে প্রায় কোটি টাকার স্বর্ণ জব্দ করেছে কাস্টমস এবং শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ। তারপরও স্বর্ণের এ চালান থামছে না। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, কোটি কোটি টাকার চালান জব্দের পরও পাচারকারীরা কীভাবে এ বিপুল ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারে? এছাড়া কিছু বহনকারী ধরা পড়লেও জামিনে বেরিয়ে আবারও চোরাচালানে জড়িত হচ্ছে। মামলার দীর্ঘসূত্রতা, সাক্ষীর অভাব, তদন্ত প্রতিবেদনের দুর্বলতাসহ নানা কারণে অপরাধীদের শাস্তিও নিশ্চিত হচ্ছে না।
ডগ স্কোয়াডই চোরাচালান বন্ধের প্রধান উপায় বলে মনে করছেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা। যাত্রীদের ব্যাগেজ ডগ স্কোয়াড দিয়ে সুইপিং (পরীক্ষা) করালে চোরাচালান বন্ধ করা সম্ভব। আর যেসব দেশের বিমানবন্দরে ডগ স্কোয়াড আছে, সেগুলো চোরাচালানিরা ব্যবহার করেন না বলে তারা জানান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদিত ডিলারের মাধ্যমে আমদানির বিধান রেখে গত ৩ অক্টোবর মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘স্বর্ণ নীতিমালা, ২০১৮’-এর খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়। নীতিমালা অনুযায়ী ‘দ্য ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্ট, ১৯৪৭’-এর অধীনে বাংলাদেশ ব্যাংক স্বর্ণ আমদানিতে ডিলার অনুমোদন দেবে। মনোনীত ডিলার, ব্যাংক অথবা বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত একক মালিকানাধীন কোনো অংশীদারি প্রতিষ্ঠান বা লিমিটেড কোম্পানি অনুমোদিত ডিলার হিসেবে গণ্য হবে। অনুমোদিত ডিলার সরাসরি প্রস্তুতকারী বা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে স্বর্ণের বার আমদানি করবে এবং অলঙ্কার প্রস্তুতকারকের কাছে বিক্রি করবে। অলঙ্কার প্রস্তুত করে রফতানির সুযোগও রাখা হয়েছে নীতিমালায়।
নীতিমালা প্রণয়নের আগে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতিসহ (বাজুস) অংশীজনদের মত নেওয়া হয়। এতে নীতিমালায় সবার মত প্রতিফলিত হয়েছে বলা যায়। নীতিমালাটি কার্যকর হলে এবং ব্যবসায়ীরা বৈধভাবে স্বর্ণ আমদানি করলে চোরাচালান বন্ধ হবে বলেই ধারণা। এ অবস্থায় আশা করা যায়, কোনোভাবেই চোরাচালানে জড়িত হবেন না ব্যবসায়ীরা। তারা অবৈধভাবে আসা পণ্য বর্জন করলে চোরাচালানিরাও নিরুৎসাহিত হবে।