জলপাইয়ের পুষ্টিগুণ

শীতের আগমনবার্তা নিয়ে বাজারে এসেছে জিভে জল আসা জলপাই। এর ইংরেজি নাম ‘অলিভ’। আরেক নাম অলিয়া ইউরোপিয়া, অর্থ ইউরোপের তেল। গাছটি আট থেকে ১৫ মিটার লম্বা হয়। এর ফল আকারে ছোট, লম্বায় এক থেকে দুই সেন্টিমিটার।
জলপাইয়ের আদি নিবাস এশিয়া, আফ্রিকা ও ভূমধ্যসাগরীয় কিছু অঞ্চলে। এটি পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের উপকূলীয় এলাকা, বিশেষ করে লেবানন, সিরিয়া, তুরস্কের সামুদ্রিক অঞ্চল ও ইরানের উত্তরাঞ্চলে ভালো জšে§। বাংলাদেশেও ফলটি ভালো জন্মে।
টক স্বাদের ফলটি আমাদের দেশে
খুবই জনপ্রিয়। শীতের শুরুতে পাওয়া গেলেও আচার বানিয়ে বা সেদ্ধ করে তেলে ডুবিয়ে সংরক্ষণ করা যায় বছরজুড়ে। জলপাই সেদ্ধ করে ভর্তা খেতেও চমৎকার। কাঁচা জলপাইয়ের পুষ্টিগুণ তুলনামূলক বেশি। প্রতিদিন জলপাই খেলে স্বাস্থ্য ভালো থাকে, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ে।
পুষ্টিগুণ
প্রতি ১০০ গ্রাম জলপাইয়ে খাদ্যশক্তি ১৪৬ কিলো ক্যালরি, শর্করা ৩.৮৪ গ্রাম, চিনি ০.৫৪ গ্রাম, খাদ্য আঁশ ৩.৩ গ্রাম, চর্বি ১৫.৩২ গ্রাম, আমিষ ১.০৩ গ্রাম, ভিটামিন ‘এ’ ২০ আইইউ, বিটা ক্যারোটিন ২৩১ আইইউ, থায়ামিন ০.০২১, রিবোফ্লোবিন ০.০০৭ মিলিগ্রাম, নিয়াসিন ০.২৩৭ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি৬ ০.০৩১ মিলিগ্রাম, ফোলেট তিন আইইউ, ভিটামিন ‘ই’ ৩.৮১ মিলিগ্রাম, ভিটামিন কে ১.৪ আইইউ, ক্যালসিয়াম ৫২ মিলিগ্রাম, আয়রন ৩.১ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ১১ মিলিগ্রাম, ফসফরাস চার মিলিগ্রাম, পটাসিয়াম ৪২ মিলিগ্রাম প্রভৃতি রয়েছে।

উপকারিতা

জলপাইয়ের খোসায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আঁশ। এই আঁশ নিয়মিত খাবার হজমে সাহায্য করে। পাশাপাশি পাকস্থলী ও কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে

এটি শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করে। এর ভিটামিন ‘ই’ কোষের অস্বাভাবিক গঠনে বাধা দেয়। ফলে ক্যানসারের ঝুঁকি কমে। ভিটামিন ‘ই’ ত্বকে মসৃণ ভাব আনে। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির কারণে ত্বকের যে ক্ষতি হয়Ñতা রোধ করে

জলপাইয়ের তেল হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়। এর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে

হাড়ের ক্ষয়রোধ করে জলপাইয়ের তেল

তেলে রয়েছে ফ্যাটি এসিড ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা ত্বক ও চুলের যতেœ কাজ করে। এর তেল চুলের গোড়া মজবুত করে

নিয়মিত জলপাই খেলে গ্যাস্ট্রিক ও আলসার কম হয়

লৌহের বড় উৎস। শরীরে লৌহের অভাব হলে অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয়। ফলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। জলপাই খেলে লৌহ শরীরের এনজাইম চাঙা রাখে

জলপাইয়ে ভিটামিন ‘এ’ পাওয়া যায়। এই ভিটামিন চোখের যতেœ উপকারী। যাদের চোখ আলো ও অন্ধকারে সংবেদনশীল, তাদের জন্য ওষুধের কাজ করে জলপাই। এছাড়া জীবাণুর আক্রমণ, চোখ ওঠা, চোখের পাতায় ইনফেকশনজনিত সমস্যা দূর করে

জলপাইয়ে রয়েছে প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে। সর্দি, জ্বর প্রভৃতি দূর করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

রক্তের চিনি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এর ফলে ডায়াবেটিসও নিয়ন্ত্রণে থাকে

ভেষজ গুণাবলি

জলপাই পাতা ছেঁচে কাটা স্থানে লাগালে ক্ষত দ্রুত শুকায়

বাতের ব্যথা, ত্বকের ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকজনিত সমস্যাসহ ভাইরাস জ্বর, ক্রমাগত মোটা হওয়া, জন্ডিস, কাশি প্রভৃতিতে জলপাই পাতা গুঁড়ো ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করার প্রচলন রয়েছে। এছাড়া এর পাতার রস উকুন তাড়ায়।

শিপন আহমেদ

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০