কার্পাসডাঙ্গার পাটসামগ্রীর বাজার বিদেশেও

পাটের বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি করে স্বাবলম্বী হয়েছে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা খ্রিষ্টান
মিশনপল্লির অনেক নারী-পুরুষ। নিত্যকার কাজের অবসরে তারা চাহিদামতো পাটসামগ্রী তৈরিতে ব্যস্ত থাকেন।
পল্লিতে গিয়ে দেখা গেছে, স্থানীয় সুলেখা মণ্ডল (৬০) বাড়ির উঠোনে মাদুরের অংশবিশেষ তৈরি করছেন। ৪০ বছর ধরে এ কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন তিনি। ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে পাট কিনে ক্রেতার চাহিদামতো সামগ্রী বানিয়েই চলেছেন, পরে বিক্রি করছেন। অবসর সময় অন্য কাজে ব্যয় করতে তিনি নারাজ। প্রতিবেশী সৌম মণ্ডল (৬৭) ও তার স্ত্রী গীতা মণ্ডল (৬০) ৪০ বছর ধরে পাটসামগ্রী তৈরি করছেন। গ্রাহকের চাহিদামতো তাদের পণ্য বানিয়ে দিতে মরিয়া তারা। গীতা মণ্ডল জানালেন, ৩০০ সেন্টিমিটার লম্বা ও ২০০ সেন্টিমিটার চওড়া পাট দিয়ে তৈরি একটি কার্পেট টুকরো টুকরো অংশ জুড়ে পরিপূর্ণ রূপ আনা লাগে। কর্মীদের দিয়ে ওই অংশগুলো তৈরি করে নিই। সে অনুযায়ী তাদের টাকা পরিশোধ করি।
১০৮টি অংশ তৈরি করা হয় প্রতিটি ৭৩ টাকা দরে, ৯০টি ছোট চার কোণা তৈরি করা হয় প্রতিটি ২৬ টাকায়, ৩০টি তিন কোণা তৈরি করা হয় ১৫ টাকায়। সাতটি পাঁচ কোণা তৈরি করা হয় প্রতিটি ৫০ টাকা দরে ও শেষের অংশ দুটি সেলাই করা হয় ২০০ টাকায়। পরে রং করে বিক্রি করা হয়। কর্মীরা এ অংশগুলো যে যত তৈরি করতে পারবে, সে তত টাকা রোজগার করবে। ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী পাট দিয়ে তৈরি করা হয় ঘরের আড়ায় টাঙানো শিকি ও তার ভেতরকার বাক্স, পাখি, মাছ, মেয়েদের ব্যবহƒত হাতব্যাগ, বালতি, ফুলদানি প্রভৃতি। অবসরে এ কাজ করে একজন কর্মী মাসে ছয় থেকে সাত হাজার টাকা রোজগার করতে পারেন।
খ্রিষ্টান মিশনপল্লির ড্যানিয়েল মন্টুর স্ত্রী মহিলা সমিতির সম্পাদিকা বুলবুুলি (৬৫) জানান, ১৯৭৬ সাল থেকে মেহেরপুুরের মুজিবনগর উপজেলার খ্রিষ্টান মিশনারির মাধ্যমে এ কাজ করানো হচ্ছে। গ্রাহকের চাহিদামত বিভিন্ন কাজ করতে হয়। এ কাজে প্রয়োজনীয় শুকনো পাট ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ ও খুলনা থেকে সংগ্রহ করা হয়। কেজিপ্রতি ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে পাটগুলো কেনা হয়। এখানে বিভিন্ন ব্যাচে ৫০ নারী-পুরুষ এ কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এসব সামগ্রী দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও যায় বলে জানান বুলবুলি।
কার্পাসডাঙ্গা ইউপির সদস্য মনির উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, ১৯৭৬ সাল থেকে এ ধরনের একটি ভালো উদ্যোগ মিশনপল্লিতে চালু থাকলেও সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় এর বিকাশ ঘটছে না। সরকারি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে আরও নারী-পুরুষকে এ কাজে সম্পৃক্ত করা গেছে এলাকার বেকার সমস্যা লাঘব হবেÑএমনই দাবি তার।

মফিজ জোয়ার্দ্দার

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০