পুঁজিবাজারে নৈতিকতার বিষয়টি খুব দুর্বল অবস্থানে রয়েছে, কারণ ২০১০ সালের পর পুঁজিবাজারে অনেক কোম্পানি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এদের বেশিরভাগই স্বল্প মূলধনি কোম্পানি। পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর প্রথমে ইপিএস বা গ্রোথ ভালো দেখায়, কিন্তু পরে সেভাবে দেখাতে পারে না। ফলে একসময় কোম্পানি বিক্রি করে চলে যায়। এতে ওই কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবার অনেক কোম্পানি ইচ্ছাকৃতভাবে বিনিয়োগকারীদের ঠকায়। এখন কথা হচ্ছে, দেশে নৈতিকতার ভিত্তি মজুবত করতে হলে আইনকে শক্তিশালী করতে হবে। তাহলে পুঁজিবাজার বা অন্য কোনো জায়গায় দুর্নীতি করলে শাস্তির আওতায় আনা সহজ হবে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। আহমেদ রশীদ লালীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী ও পুঁজিবাজার-বিশ্লেষক হাসান মাহমুদ বিপ্লব এবং ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের প্রেসিডেন্ট সাইফ ইসলাম দিলাল।
হাসান মাহমুদ বিপ্লব বলেন, বর্তমানে পুঁজিবাজারে দুটি জায়গায় পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। একটি হচ্ছে টার্নওভার এবং অপরটি বাজারে বর্তমানে স্থিতিশীল অবস্থানে রয়েছে। আবার বর্তমানে দেশের অর্থনীতির সব সূচক ইতিবাচক। যদি দেশের রাজনৈতিক অবস্থা শক্তিশালী গণতন্ত্রের দিকে এগিয়ে যায়, তাহলে আগামীতে দেশের পুঁজিবাজার ভালো অবস্থানে যাবে আশা করি।
তিনি বিনিয়োগকারীর উদ্দেশে বলেন, এখন অনেক কোম্পানির শেয়ারের দাম অবমূল্যয়িত অবস্থায় আছে। তবে যে কোম্পানির ডিভিডেন্ড ইল্ড ও গ্রোথ ধারাবাহিকভাবে ভালো, সে ধরনের কোম্পানিতে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করলে ভালো মুনাফা হবে। তবে যখন পুঁজিবাজার পতনের দিকে যায়, তখন স্বল্প মূলধনি কোম্পানির শেয়ারদাম দ্রুতগতিতে বাড়তে থাকে। অর্থাৎ এ সময়ে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক হতে হবে, কারণ লাভ-ক্ষতি তাকেই বহন করতে হবে।
বর্তমানে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের তেমন দেখা যাচ্ছে না। নির্বাচনের কারণে তারা নিরাপদ অবস্থানে রয়েছে। তবে নির্বাচনের পরে একটি ইতিবাচক অবস্থায় তারা ফিরে আসবে।
পুঁজিবাজারে নৈতিকতার বিষয়টি খুব দুর্বল অবস্থানে রয়েছে, কারণ ২০১০ সালের পর পুঁজিবাজারে অনেক কোম্পানি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে বেশিরভাগই স্বল্প মূলধনি কোম্পানি। পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর প্রথমে ইপিএস বা গ্রোথ ভালো দেখায়, কিন্তু পরে সেভাবে দেখাতে পারে না। ফলে একসময় কোম্পানি বিক্রি করে চলে যায়। ফলে ওই কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবার অনেক কোম্পানি ইচ্ছাকৃতভাবে বিনিয়োগকারীদের ঠকায়। এখন কথা হচ্ছে দেশে নৈতিকতার ভিত্তি শক্তিশালী করতে হলে আইনকে শক্তিশালী করতে হবে। তাহলে পুঁজিবাজার বা অন্য কোনো জায়গা দুর্নীতি করলে শাস্তির আওতায় আনা সহজ হবে।
সাইফুল ইসলাম দিলাল বলেন, এককথায় যদি বলি সামনে সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন হতে যাচ্ছে। চীন ও আইসিবির টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হচ্ছে, দেশে অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে, বিদেশি বিনিয়োগকারী আসছে। দেশের অর্থনীতির সব সূচক ইতিবাচক, অর্থাৎ সবকিছু মিলিয়ে একটি ভালো সময়ের মধ্যে থাকলেও পুঁজিবাজার সেভাবে এগোচ্ছে না। এখন কথা হচ্ছে এসব ইতিবাচক বিষয়ের সঙ্গে পুঁজিবাজারকে কীভাবে উন্নয়নের দিকে নেওয়া যায় এবং কীভাবে আরও ভালো মানের কোম্পানি অন্তর্ভুক্ত করা যায়? এক্ষেত্রে বিএসইসি ও ডিএসইকে কঠোরভাবে নজরদারি করতে হবে, যাতে বিনিয়োগকারীরা বাজারমুখী হতে পারে।
পুঁজিবাজারে বড় সমস্যা হচ্ছে, গুটিকয়েক ব্যক্তি কারসাজির মাধ্যমে বাজারকে অস্থিরতার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিএসইসি যদি এদের কোনো দৃশ্যমান শাস্তি না দেয়, তাহলে পুঁজিবাজারে কারসাজি চলতেই থাকবে। বিনিয়োগকারীদের যতই দেখে, শুনে ও বুঝে বিনিয়োগ করার পরামর্শ দিই না কেন কোনো লাভ হবে না। আবার দেখা যায় বছর শেষে যে কোম্পানিগুলো আর্থিক বিবরণী প্রকাশ করে, সেখানে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম দেখা যায়। এখানে বিএসইসিকে নজরদারি করতে হবে। যেহেতু মানি মার্কেট ও ক্যাপিটাল মার্কেট একটির সঙ্গে অপরটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত, তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়, বিএসইসি, ডিএসই, সিএসইÑএরা যদি একসঙ্গে বসে সম্মিলিতভাবে বাজার সম্পর্কে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে ভালো কিছু আশা করা যাবে।
শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ