ব্যাংক সেবার নিম্নমান জনআস্থা কমায়

গতকালের শেয়ার বিজে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন: গ্রাহক অভিযোগের শীর্ষে সোনালী ব্র্যাক ও অগ্রণী’ শিরোনামের খবরটি এরই মধ্যে অনেক পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকবে। এর ভিত্তি সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিসেস ডিপার্টমেন্ট কর্তৃক প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদন। সেখানে বলা হয়, গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আর্থিক অনিয়ম ও হয়রানির শিকার হয়ে ৪ হাজার ৫৩০টি অভিযোগ করেছেন গ্রাহকরা। ওই সময়ে গ্রাহকদের ৫৩৬টি অভিযোগ নিয়ে তালিকার ‘শীর্ষে’ উঠে এসেছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক। গ্রাহকদের ৩৭৩টি অভিযোগ নিয়ে বেসরকারি ব্র্যাক ব্যাংক অবস্থান করছে দ্বিতীয় স্থানে। এদিকে অগ্রণী ব্যাংকের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের অভিযোগের সংখ্যা ২৯১টি; আর তার ওপর ভর করে প্রতিষ্ঠানটি তালিকায় তৃতীয়। খেয়াল করার মতো বিষয়, এসব অভিযোগের বেশিরভাগই সম্পন্ন হয়েছে দূরালাপনীর মাধ্যমে; বাকিটা লিখিতভাবে। ফেসবুকের মতো সামাজিক গণমাধ্যমকে আমলে নিলে (গ্রাহকের সুবিধার্থে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সামাজিক গণমাধ্যমের নজরদারি বাড়াতেই পারে) অভিযোগের সংখ্যা বাড়ত বৈ কমত না। এর বাইরেও বহু ভুক্তভোগী রয়েছেন, যারা নীরবে সহ্য করেছেন ও করছেন একশ্রেণির ব্যাংক কর্তৃক প্রদত্ত মর্মপীড়াদায়ক তথা মানহীন ব্যাংকিং ‘সেবা’। এক্ষেত্রে তাদের আলোচনাও প্রাসঙ্গিক বলে প্রতীয়মান। অবশ্য নিম্নমানের ব্যাংকিং সেবার সমালোচনার পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংককে ধন্যবাদ দিতেই হচ্ছে অভিযোগগুলোর শতভাগ নিষ্পত্তির জন্য।
সঙ্গত কারণেই গতকালের শেয়ার বিজ শুধু নয়, সহযোগী অন্যান্য গণমাধ্যমেও নানা আঙ্গিকে পরিবেশিত হয়েছে খবরটি। তার মধ্যে স্বভাবতই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ উচ্চারিত হয়েছে জোরেশোরে। এ প্রতিক্রিয়া অস্বাভাবিক বা অযৌক্তিক নয়। পরিমাণ যেমনই হোক, সেবার মানের দিক থেকে যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো যথেষ্ট পিছিয়ে রয়েছে, সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। একই সঙ্গে স্মরণ রাখা দরকার, মোট অভিযোগের ৫৮ দশমিক ৭০ শতাংশই কিন্তু বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে, যেখানে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের বিরুদ্ধে অভিযোগ মাত্র ২৮ দশমিক ২৮ শতাংশ। কেউ কেউ বলেছেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো জনগণের সম্পত্তি হওয়ার কারণেই কি না কে জানে, সেখানে সেবার মান নিয়ে উদাসীনতা দেখা যায় মাঠপর্যায়ে একশ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীর। এ অবস্থা কাম্য নয়। আবার প্রশিক্ষণ-প্রেষণা কম থাকার কারণেও এদের সেবার গুণগত মান কম হতে পারে; পর্যাপ্ত দক্ষ জনবলের অভাবও বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে ব্যাংকিং সেবায়। এদিকে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো অনেকাংশই গড়ে উঠেছে পরিবার বা গোষ্ঠীকে কেন্দ্র করে। ফলে অনেক সময়ই নাকি আমজনতা প্রত্যাশিত ব্যবহার পান না তাদের কাছ থেকে; যতটা পায় ব্যাংকগুলোর সম্পদশালী টার্গেট গ্রুপ। এ ধরনের ঘটনা নাকি বেশি দেখা যায় এসএমই ঋণ গ্রহণের বেলায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত হবে কেবল নিষ্ক্রিয়ভাবে অভিযোগ গ্রহণ না করে সক্রিয়ভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি উভয় ধরনের ব্যাংকিং সেবা ভালোভাবে মনিটর করা। নিম্নমানের ব্যাংকিং সেবার বিপক্ষে তারাই গ্রাহকের একমাত্র রক্ষাকবচ। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রণীত ওই বার্ষিক প্রতিবেদনের মোড়ক উম্মোচন অনুষ্ঠানে গভর্নর ফজলে কবির জোর দিয়ে বলেছেন, ‘যদি গ্রাহকসেবায় কোনো ব্যাংক বিশ্বাস ভঙ্গ করে, তাহলে অস্তিত্ব সংকটে পড়ার আশঙ্কা থাকে।’ অভিযুক্ত ব্যাংকগুলো এ কথা জানে না, সেটি বিশ্বাস হয় না। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তাই গোটা ব্যাংকিং খাতকে আরও ব্যাংকিং-বান্ধবকরণে উপযুক্ত দিকনির্দেশনা দিতে হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে। সেগুলো যথাযথভাবে পরিপালিত হচ্ছে কি না, সেটা দেখার দায়িত্বও তাদের। আর উভয় ক্ষেত্রে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক আন্তরিকভাবে উদ্যোগী হলে ব্যাংকিং সেবায় গুণ ও পরিমাণগত পরিবর্তন ঘটবেই বলে আমাদের বিশ্বাস।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০