সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামভিত্তিক পোশাক খাতের মাঝারি মানের শিল্প গ্রুপ হালদা। এ গ্রুপের কর্ণধার সরোয়ার আলমগীর। তিনি ব্যবসার প্রয়োজনে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করেন। এর মধ্যে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, ব্যাংক এশিয়া লিমিটেড, প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স লিমিটেড এবং যমুনা ব্যাংক লিমিটেডের প্রায় ৫০ কোটি পাওনা পরিশোধ করতে একাধিকবার ব্যর্থ হয় গ্রুপটি। আর এসব পাওনা আদায়ে এনআই অ্যাক্ট ও অর্থঋণ আদালতে মামলা দায় করে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো।
ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির বাসিন্দা সরোয়ার আলমগীর ১৯৯৬ সালে পোশাক খাতের অ্যাক্সেসরিজের ব্যবসা শুরু করেন। পরে ২০০১ সালে পোশাক কারখানা চালু করেন। এভাবে গত এক দশকে গড়ে তোলেন এনএফজেড টেরি টেক্সটাইল লিমিটেড, আল্ট্রা ডিজাইন ও ফ্যাশন লিমিটেড, সাবানাহ অ্যাপারেল লিমিটেড, সাবানাহ ফ্যাশন লিমিটেড, হালদা হোল্ডিং ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ডিজাইন লিমিটেড, ম্যানস প্রপাটিজ লিমিটেড, সাবানাহ প্রপার্টিজ লিমিটেড, হালদা এন্টারপ্রাইজ, হালদা অ্যাক্সেসরিজ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, এএ অ্যাক্সেসরিজ, মৌরিন এন্টারপ্রাইজ, হালদা ট্রেডিং, হালদা ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর এবং এজে এন্টারপ্রাইজ প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান। আর এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে হালদা গ্রুপ গড়ে তোলেন।
গ্রুপটির কর্ণধার সরোয়ার আলমগীর ব্যবসার প্রয়োজনে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ সুবিধা গ্রহণ করেন। এর মধ্যে হালদা গ্রুপের সহযোগী মৌরিন এন্টারপ্রাইজের নামে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের ২৮ কোটি চার লাখ টাকা, হালদা এন্টারপ্রাইজ ও হালদা অ্যাক্সেসরিজের নামে ব্যাংক এশিয়া ১০ কোটি ছয় লাখ, এনএফজেড টেরি টেক্সটাইল লিমিটেডের নামে প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স লিমিটেডের আট কোটি ৬৫ লাখ টাকা এবং যমুনা ব্যাংকের দুই কোটি ৯০ লাখ টাকা পাওনা পরিশোধ করতে তিনি একাধিকবার ব্যর্থ হন। আর প্রায় ৫০ কোটি টাকা পাওনা আদায়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো এনআই অ্যাক্ট ও অর্থঋণ আদালতে মামলা দায়ের করে। এছাড়া বেসরকারি স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ও বিদেশি স্টেট অব ইন্ডিয়ায় ঋণ রয়েছে গ্রুপটির।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নানা ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে এ গ্রুপের কর্ণধারের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে রয়েছে সঠিক নিয়মনীতি রক্ষা না করে কারখানা পরিচালনা, শ্রমিকের মজুরি পরিশোধে গড়িমসি, নি¤œমানের পণ্য উৎপাদনসহ আরও কিছু অভিযোগ।
এদিকে পরিবেশ অধিদফতর চট্টগ্রাম কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি মাসে ১২ নভেম্বর বোয়ালখালী উপজেলার শাকপুরা পশ্চিম গোমদন্ডী এলাকায় এনএফজেড টেরি টেক্সটাইল লিমিটেড পরিদর্শন করা হয়। এ সময় ১২ বছর ধরে ছাড়পত্রবিহীন থাকা ও ইটিপি প্লান্ট পরিচালনা না করার বিষয়টি ধরা পড়ে। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষকে শুনানিতে হাজির হওয়ার জন্য বলা হয়। আর শুনানি শেষে ১২ বছর ধরে ছাড়পত্রবিহীন থাকায় এবং ইটিপি প্লান্ট পরিচালনা না করার অপরাধে হালদা গ্রুপের প্রতিষ্ঠান এনএফজেড টেরি টেক্সটাইল লিমিটেডকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। পাশাপাশি ছাড়পত্র নবায়ন ও ইটিপি প্লান্ট পরিচালনার নির্দেশ দেওয়া হয়। এ শুনানি পরিচালনা করেন পরিবেশ অধিদফতর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মো. মোয়াজ্জম হোসাইন।
হালদা গ্রুপের খেলাপি বিষয়ে একাধিক ব্যাংকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা শেয়ার বিজ প্রতিবেদককে বলেন, হালদা গ্রুপের কর্ণধার সরওয়ার আলমগীর পাওনা পরিশোধে বেশ কয়েকবার সময় ও পুনঃতফসিলের সুযোগ নেন। কিন্তু পাওনা পরিশোধে প্রতিবার ব্যর্থ হন। আর পাওনা পরিশোধে তিনি তেমন আগ্রহ দেখান না। এছাড়া তিনি সিআইবি রিপোর্টে স্টে অর্ডারও নেন। তিনি মনে করেন ব্যাংকের পাওনা পরিশোধ না করলেও চলবে।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য শেয়ার বিজের পক্ষে থেকে হালদা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সরওয়ার আলমগীরের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড চকবাজার শাখা ব্যবস্থাপক শোয়েব ইসলাম চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
