ডিভিডেন্ড

মিজানুর রহমান শেলী: কোম্পানির কমন স্টককে বিক্রি করে দিতে হয়েছিল বুক ভ্যালুর চার ভাগের এক ভাগেরও অনেক নিচে। ব্যবসার বিনিয়োগে প্রতিটি মুহূর্তে এক ডলার আয়ের বিষয়টি অপরিবর্তিত রাখা হয়েছিল। এই ডলারকে আবার মার্কেট ভ্যালুর ২৫ সেন্টে রূপান্তরিত করা হয়েছিল। কিন্তু বেশিরভাগ আয়ই ব্যবসায় নতুন করে বিনিয়োগ করা হয়। এর মালিকদের সামান্য পরিমাণেই পরিশোধ করা হয়ে থাকে। ইতোমধ্যে নিউইয়র্কের নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনা খাতে খুব গর্বের সঙ্গে করপোরেট রব উঠেছে: ‘ডিগ উই মাস্ট’। যাহোক, এই ডিভিডেন্ড নীতির আলোচনায় আর কখনোই এই নিয়ন্ত্রিত আয় নিয়ে কোনো কথা উঠবে না। নিয়ন্ত্রিত আয়ের আলোচনা এখানেই শেষ। এবার বরঞ্চ আমাদের উচিত হবে অনিয়ন্ত্রিত আয়ের বিভিন্ন বৈচিত্র্য নিয়ে আলোচনা করা। এই অনিয়ন্ত্রিত আয় সাধারণত অপরিবর্তিত থাকে এবং তা বণ্টিত হয়। এর সঙ্গে সমানে সমান সম্ভাব্যতাও রয়ে যায়। আমাদের মতে, ব্যবস্থাপকদের উচিত হবে এমন সব বিষয় বেছে নেওয়া, যার মাধ্যমে মালিকরা একটি বড় ধারণা তৈরি করতে সাহস ও উৎসাহ পান। কার্যত মালিকদের বড় চিন্তার সুযোগ তৈরি করে দিতে হয়।
অবশ্য এ নীতিটি বৈশ্বিকভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এর অসংখ্য কারণ রয়েছে, যার মাধ্যমে ব্যবস্থাপকরা অনিয়ন্ত্রিত উপায়ের সঙ্গে নিজেদের পরিস্থিতিকে আটকে রাখতে পছন্দ করে। এর মাধ্যমে শেয়ারহোল্ডারদের কাছ থেকে যা আয় হয়, তা খুব সহজেই বণ্টন করে দেওয়া যায়। এর মাধ্যমে করপোরেট সাম্রাজ্যকে আরও বিস্তৃত করা যায় যে, বিশাল অঞ্চলজুড়ে ব্যবস্থাপকরা শাসন করে চলেন। ব্যতিক্রমী আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্যের জায়গা হতে এটাকে পরিচালনা করা যায়। এ রকম নানা কারণে অনিয়ন্ত্রিত উপায় এত পছন্দের হয়ে থাকে। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করে থাকি, রিটেনশনের জন্য কেবল একটি বৈধ উপায় থাকে। অনিয়ন্ত্রিত আয় কেবল তখন অপরিবর্তিত রাখা উচিত হবে, যখন সেখানে একটি ন্যায্য পরিস্থিতি বিরাজ করবে। এমনকি এর পেছনে একটি ঐতিহাসিক নজির সমর্থন জোগাবে, একটি চিন্তাপূর্ণ বিশ্লেষণের মাধ্যমে এর ভবিষ্যৎ যখন নির্ধারিত হবে, তখনই এটাকে ব্যবহার করা যাবে। করপোরেটের হাত দিয়ে প্রতি ডলার অপরিবর্তিত রাখতে বাজারমূল্যের কমপক্ষে এক ডলার মালিকদের জন্য প্রস্তুত করা হবে। আর এ কাজটি সম্পন্ন করা ঠিক তখনই সম্ভব, যখন কিনা বিনিয়োগকারীদের হাতে সাধারণভাবে যা থাকে, তার সমানে কিংবা বেশি পরিমাণে বৃদ্ধি পাবে কেবল অপরিবর্তিত মূলধন আয়।
এ বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে একজন বিনিয়োগকারী যে ঝুঁকিমুক্ত ১০ শতাংশ চিরস্থায়ী বন্ডের মালিকানা লাভ করে, সেটা ভালোভাবে বুঝে নেওয়া যাক। এর সঙ্গে থাকে খুব অপ্রচলিত কিছু বৈশিষ্ট্য। প্রতি বছর বিনিয়োগকারীরা তাদের ১০ শতাংশ কুপনকে ক্যাশে নিতে নির্বাচন করে থাকে, অথবা এই কুপনকে আরও ১০ শতাংশ বেশি বন্ডে তার পুনর্বিনিয়োগ করার জন্য। এক্ষেত্রে কিছু একই রকম বৈশিষ্ট্য বিরাজ করে থাকে। যেমন: একটি স্থায়ী জীবন ও কুপন উভয় ক্ষেত্রেই একই ক্যাশ বা পুনর্বিনিয়োগের সুযোগ স্থির থাকে।
যদি যে কোনো নির্ধারিত বছরে দীর্ঘ মেয়াদের সুদহার নির্দিষ্ট থাকে, ঝুঁকিমুক্ত বন্ড থাকে পাঁচ শতাংশ, তবে এটা বিনিয়োগকারীদের জন্য কুপনকে ১০ শতাংশ বন্ডে রূপান্তরিত করার কাজটি হবে একটি বোকামিপূর্ণ কাজ। বরং এর চেয়ে আরও বেশি বিজ্ঞচিত কাজ হবে সেটা, যেটা করলে ১০০ সেন্টের বেশি ডলারের মূল্য সৃষ্টি হয়। এ পরিস্থিতিতে একজন বিনিয়োগকারী যিনি ক্যাশের ওপর হাত দিতে চান, তার জন্য উচিত হবে তার কুপনকে অতিরিক্ত বন্ডে নিয়ে নেওয়া। ফলে তা খুব দ্রুততার সঙ্গে বিক্রি হয়ে যাবে। তিনি এ কাজটি করে বুঝতে পেরেছেন যে, এ কাজে তিনি যে ক্যাশ আহরণ করতে সক্ষম হয়েছেন, তা তার কুপন থেকে নেওয়া সরাসরি ক্যাশের চেয়ে অনেক বেশি। এসব এজিউমিং বন্ড বিশেষ করে যৌক্তিক বিনিয়োগকারীরাই ধরেছিলেন। কিন্তু অন্য কেউ এই পাঁচ শতাংশ ইন্টারেস্টের ধারেকাছে ক্যাশের জন্য নির্বাচিত হননি। এমনকি যারা ছিলেন বন্ডহোল্ডার, তারাও পাননি। এখানে উল্লেখ্য, বন্ডহোল্ডাররা তার যাপিত জীবনে বেঁচে থাকার জন্য যে ক্যাশের প্রয়োজন বোধ করছিলেন, সেই ক্যাশটুকুও অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন।
যদি এই ইন্টারেস্টের হার ১৫ শতাংশ হতো, তবে কোনো যৌক্তিক বিনিয়োগকারীই চাইতেন না যে, তার জন্য এটা ১০ শতাংশে বিনিয়োগ হোক। এতদসত্ত্বেও বিনিয়োগকারীরা তাদের কুপন ক্যাশেই হোক তা আশা করেছিলেন। এমনকি তাদের ব্যক্তিগত ক্যাশের চাহিদা ছিল একেবারেই শূন্যের কোঠায়। এর বিপরীত কাজটি হলো কুপনকে পুনরায় বিনিয়োগ করা। এই বিপরীত কাজটি করে বিনিয়োগকারীরা কিছু বাড়তি বন্ড পেয়েছিলেন। তবে এ বন্ডের যে বাজারমূল্য ছিল, তা তাদের নির্বাচিত ক্যাশের চেয়ে অনেক কম হয়েছিল। আর যদি তাদের ১০ শতাংশ বন্ড আশা করা সঠিক হতো, তবে তারা খুব সাধারণভাবেই ক্যাশ রিসিভড তুলতে পারতেন এবং সেগুলোকে বাজার থেকে কিনতেও পারতেন। এখানে উল্লেখ্য, বাজার থেকে যখন তারা এটা কেনার সুযোগ লাভ করতেন, তখন তা একটি বড় ছাড় বা ডিসকাউন্টেই কিনতে পারতেন।
বলা যায়, এর সমরূপ বিশ্লেষণটি আমাদের হাইপোথেটিক্যাল বন্ডহোল্ডাররাও করেছিলেন। আর এটা ছিল মালিকদের জন্য একেবারেই উত্তম বিশ্লেষণী। মালিকরা তাতে উপকৃত হতে পারতেন। উপকৃত হতে পারতেন এ চিন্তায় যে, যেখানে একটি কোম্পানির অনিয়ন্ত্রিত আয় অপরিবর্তিত থাকবে, নাকি তা পরিশোধিত হয়ে যাবে। হ্যাঁ, অবশ্যই এটা মানতে হবে যে, এই বিশ্লেষণ ছিল অনেক বেশি কঠিন এবং এই বিশ্লেষণের সারবস্তু ছিল ভ্রান্তির বেড়াজাল উš§ুক্ত করা। কেননা, এর ইন্টারেস্ট হার পুনরায় বিনিয়োগী আয়ের ওপর নির্ভর করছিল। মনে রাখা দরকার যে, এটা কখনোই গঠনমূলক ফিগার ছিল না। অন্তত বন্ড কেইসের হিসাবে এ কথাটি বলা চলে। তবে এটা বলা যেতে পারে যে, এই ইন্টারেস্ট হারটি ছিল একটি উচাটন বা নিয়ত অস্থিরতায় নিমজ্জিত। আর মালিকরাও বুঝতে পেরেছিলেন মধ্যবর্তী ভবিষ্যতে কোন হারটি গড়পড়তা হার হয়ে দাঁড়াবে। যাহোক, একবার নির্দেশিত ধারণা যদি সত্য হতো, তবে বাদবাকি সব বিশ্লেষণই সাধারণ হয়ে যেত: আপনার উচিত আপনার সব বিনিয়োগকে পুনরায় বিনিয়োগ করা, যদি তা থেকে উচ্চহারে রিটার্ন আশা করা যায়। এমনকি আপনার উচিত হবে এ রিটার্নের পুরোটাই যেন আপনি তুলে নিতে পারেনÑসেটা নিশ্চিত করে নেওয়া, যদি নি¤œ রিটার্নগুলো সম্ভবত পুনর্বিনিয়োগ হয়ে থাকে।
অনেক করপোরেট ম্যানেজার এই বিশ্লেষণগুলোকে সঙ্গে নিয়ে পথ চলেছেন। আর তারা অনুমান করার চেষ্টা করেছেন সাবসিডিয়ারি কি অবশ্যই তাদের মাতৃ কোম্পানিকে আয় বণ্টন করতে হয়, নাকি করতে হয় না। এ স্তর থেকে ম্যানেজাররা কোনো সংকটময় দুশ্চিন্তায় পড়েননি, কিংবা তাদের চিন্তায় কোনো সংকট আসেনি। একইভাবে একই কথা একজন কিংবা সমগ্র মালিকের বেলায়ও বলতে হয়। কিন্তু মাতৃ কোম্পানিকে পরিশোধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তটি মাঝে মাঝেই একটি ভিন্ন গল্পের অবতারণা করে থাকে। এখানে ম্যানেজাররা প্রায়ই কোনো না কোনো সংকটে পড়ে যান। তাদের প্রায়ই শেয়ারহোল্ডার ও মালিকদের জুতার ওপর হামাগুড়ি দিয়ে পড়তে হয়।

এই দর্শন রচনাবলি সম্পাদনা করেছেন লরেন্স এ. কানিংহ্যাম অনুবাদক: গবেষক, শেয়ার বিজ

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০