নিজস্ব প্রতিবেদক: অমর একুশে গ্রন্থমেলায় বই বিক্রি বেড়েছে। মেলার পরিবেশ গোছানো ও খোলামেলা হওয়ায় বড় স্টলগুলোতে পাঠক-দর্শনার্থীদের ভিড় লেগেই রয়েছে। একাধিক বই দেখে পছন্দের বইটি কিনতে পারছেন বলে খুশি পাঠকরা। অন্যদিকে বিক্রি বাড়তে থাকায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রকাশক ও বিক্রয় প্রতিনিধিরা।
মেলায় গতকাল পাঠক-দর্শনার্থীর উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়। সাপ্তাহিক ছুটির দিন থাকায় নগরবাসী বই কেনা ও ঘুরে বেড়াতে ছুটে এসেছেন তাদের প্রাণের মেলা চত্বরে।
মেলার দ্বার খুলেছে সকাল ১১টায়। তার ওপর আবার শিশুপ্রহর থাকায় সকাল থেকেই শিশুদের কলতানে মুখর হয়ে ওঠে একাডেমি চত্বর ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিশু কর্নার।
বিকালে মেলার উভয় প্রাঙ্গণে দীর্ঘ লাইন দিয়ে পাঠক-দর্শনার্থীদের মেলায় প্রবেশ করতে দেখা যায়। সন্ধ্যার পর সব বয়সী মানুষের উপচেপড়া ভিড়ে মেলা চত্বর পরিণত হয় বাঙালির মিলনমেলায়। আর শিশু থেকে বুড়ো সব বয়সী মানুষের প্রাণের উচ্ছ্বাসও তখন লক্ষ করা গেছে।
মেলায় বই বিক্রি বাড়া প্রসঙ্গে আগামী প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ওসমান গণি বলেন, বাংলা একাডেমি এ বছর বেশ গোছানো মেলার আয়োজন করেছে। স্টলগুলোর সামনে-পেছনে বেশ ফাঁকা স্থান থাকায় পাঠকরা বই দেখে কিনতে পারছেন। এতে বিক্রি বেশ ভালো হচ্ছে।
ঐতিহ্য প্রকাশনীর সামনে কথা হলো মাঝ বয়সী এক চাকরিজীবী আবুল কাসেমের সঙ্গে। তিনি মিরপুর থেকে এসেছেন। প্রতিবছরই আসেন, তবে এবার আজই প্রথম এসেছেন। মেলার এবারের আয়োজনের প্রশংসা করে তিনি
বলেন, মেলাজুড়ে প্রচুর খোলামেলা জায়গা রয়েছে। স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করা যাচ্ছে। বই কেনাকাটায় অগের মতো আর বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে না। তিনি ঐতিহ্য থেকে বিশেষ ছাড়ে ১৮ হাজার টাকা দিয়ে ৩৩ খণ্ডের রবীন্দ্র রচনাবলি কিনেছেন।
বই বিক্রি প্রসঙ্গে ঐতিহ্য প্রকাশনীর বিক্রয় প্রতিনিধি কাজল আহমেদ বলেন, অন্যবারের চেয়ে এবার মেলার শুরু থেকেই বিক্রি ভালো। মেলার প্রথম ১০ দিনেই ৮ সেট রবীন্দ্র রচনাবলি বিক্রি হয়ে গেছে। আর অন্যান্য বইও বেশ ভালো বিক্রি হচ্ছে।
প্রকাশকরা আরও জানান, মেলায় ছুটির দিনে লোক সমাগম ও বইয়ের বিক্রি উভয়ই ভালো হচ্ছে। তার ওপর গতকাল শিশুপ্রহর থাকায় সকাল থেকেই শিশুদের উচ্ছ্বাস ও উš§াদনায় মেলা চত্বর যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত শিশুদেরই রাজত্ব চলে মেলাজুড়ে।
শিশু কর্নারে সিসিমপুর স্টলের পক্ষ থেকে শিশুদের বিনোদনের জন্য সিসিমপুর ধারাবাহিক শোয়ের চরিত্র হালুম, টুকটুকি ও ইকরিকে নিয়ে আসা হয় মেলা চত্বরে। শিশুরা তাদের সঙ্গে নেচে-গেয়ে ছবি তুলে বেশ মজা করেছে।
শিশুদের স্টলগুলোতে বিক্রিও বেশ ভালো হয়েছে বলে জানান সিসিমপুর স্টলের বিক্রয় প্রতিনিধি মিজান। আজও সকাল ১১টায় মেলার দ্বার খুলবে বলে এ প্রতিনিধি জানান।
গৃহিণী নাহিদা সুলতানা মিলি এসেছেন তার এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া ফাবিহাকে তিনি কিনে দিয়েছেন বেশ কিছু নতুন বই।
মিলি বলেন, ‘আজকাল বাচ্চারা স্মার্টফোন আর ট্যাবে ব্যস্ত থাকতে চায়। স্কুলের বইয়ের বাইরে কিছু পড়তে চায় না। আমি চাই, আমার বাচ্চাগুলো অন্তত বইমেলায় এসে বইয়ের প্রতি আগ্রহটা তৈরি করুক।’
মেলা ঘুরে দেখা গেছে, শিশুরা আলাদীনের জাদুর প্রদীপ, ডালিম কুমার, কেশবতী রাজকন্যা, ফুলকুমারী, ডাইনির অভিশাপ, সাগরতলে জলপরী, হ্যামিলিনের বংশীবাদক এ ধরনের রূপকথা আর জাদুর বইয়ের খোঁজ করছে। পাশাপাশি কেউ আবার খুঁজেছে বিখ্যাত সব লেখকের ছড়ার বইও।
বইয়ের পাশাপাশি রংবেরঙে আঁকা বিভিন্ন আকারের কার্ড, ফেস্টুনও বিক্রি হয়েছে শিশুপ্রহরে। কেউ কিনেছে রং করার বই। মেলায় আসা ছোটদের অনেকেই বানান করে বই পড়ার মতো পরিণত হয়ে ওঠেনি, তবু বায়নার শেষ নেই। এটা চাই, ওটা চাই। ওরা কখনও ছুটেছে কার্টুন আর কমিকসের খোঁজে, কখনও নেড়েচেড়ে দেখেছে ছবির বইগুলো।
মেলায় ছোট-বড় সব প্রতিষ্ঠান শিশু-কিশোরদের জন্য চিন্তা করে নতুন বই এনেছে। পুরোনো জানা-অজানা লেখকের পাশাপাশি দেশের সমকালীন লেখক সেলিনা হোসেন, মুহম্মদ জাফর ইকবাল, রকিব হাসান, ইমদাদুল হক মিলন, আনিসুল হক, আহসান হাবীব, মোহিত কামাল, মোশতাক আহমেদ, সুমন্ত আসলাম ছোটদের জন্য নতুন বই এনেছেন।
এদিকে মেলায় বিকাল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সূচনা ও ১১ মার্চ ১৯৪৮’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গোলাম কুদ্দুছ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন আহমাদ মাযহার এবং মো. মশিউর রহমান। সভাপতিত্ব করেন অর্থনীতিবিদ ড. আতিউর রহমান।
মেলায় গতকাল নতুন বই এসেছে ৩১৩টি এবং ৪৩টি নতুন বইয়ের মোড়ক উšে§াচন করা হয়।
Add Comment