৮০ বর্গফুটের অফিস রুম। তিনটি চেয়ার। একটি টেবিল। দুজন কর্মী। ইনটেক প্রপার্টিজ লিমিটেডের শুরুটা এমনই ছিল। প্রায় আট বছর আগের ঘটনা এটি। স্বল্পপরিসরে শুরু হওয়া সে প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে দেশের অন্যতম সেরা করপোরেট কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে। কর্মসংস্থানের মাধ্যমে জাতীয় আবাসনশিল্পে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছে।
ইনটেক প্রপার্টিজে চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন মো. আশরাফ উদ্দিন। তার নেতৃত্বে শক্ত অবস্থানে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। দেশের রিয়েল এস্টেট খাতে তার অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে। সমাজসেবক হিসেবে তার সুনাম রয়েছে। ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন মো. নাসির উদ্দিন। ব্যবস্থাপনা টিমের নেতৃত্বে রয়েছেন এম ফখরুল ইসলাম।
২০১১ সালে রাজধানীতে ইনটেক প্রপার্টিজ লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করেন ফখরুল ইসলাম। তার সততা, নিষ্ঠা ও শ্রমের ফসল এ প্রতিষ্ঠানটি। তার দূরদর্শিতার কারণে অল্প সময়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি জনপ্রিয় ও লাভজনক হয়ে ওঠে। একই বছর ‘রাহবার’ নামে আরেকটি হাউজিং কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। এ প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বও পালন করছেন তিনি। এখানেই থেমে থাকেননি, ২০১২ সালে ‘অলট্রেড’ নামে আরও একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।
ইনটেক প্রপার্টিজ যেন জাতীয় আবাসনশিল্পে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে সে লক্ষ্যে কাজ করছে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে অসহায়, গরিব ও দুঃখীদের পাশে থাকার দৃঢ়সংকল্প রয়েছে তাদের।
তরুণদের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, আমিও তরুণ। আমি মনে করি, আগামীর বাংলাদেশ তরুণদেরই হাতে। তরুণদের মাধ্যমে দেশ এগিয়ে যাবে। তারা বিভিন্ন ধরনের কাজের মাধ্যমে নিজেদের যোগ্যতা, দক্ষতা ও জবাবদিহির মাধ্যমে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে দেশ ও সমাজকে এগিয়ে নেবে।
সফলতা সম্পর্কে তিনি বলেন, আসলে এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া আমার জন্য কঠিন। সফল হতে পেরেছি কি না জানি না। রাত-দিন পরিশ্রম করছি সামাজিক ও ব্যবসায়িক কাজের পেছেন। সঠিক পরিকল্পনা ও সুদক্ষ টিম গঠনে এরই মধ্যে তরুণ শিল্পোদ্যোক্তা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছি। সব সময় সফল ব্যক্তিদের অনুসরণ করি।
আর্তমানবতার সেবায় ফখরুল ইসলাম গড়ে তুলেছেন এএ হাশেম ফাউন্ডেশন, খিদমাহ ট্রাস্ট ও সোনাগাজী বহুমুখী সমবায় সমিতির মতো সামাজিক সংগঠন। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে সমাজের অসহায় ও গরিব মানুষকে সহযোগিতা, গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করা হয়। সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে তাদের সম্পৃক্ত করা হয়। একই সঙ্গে নাছির উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতিসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন ফখরুল।
পাঠাগার সৃষ্টি, বিনামূল্যে বই বিতরণ, গ্রামের কৃষকের অধিকার রক্ষায় সংগঠিত করা, বিভিন্ন সমবায় সংগঠন সৃষ্টি, অসহায় ও গরিব মানুষকে সহযোগিতা, গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, নানা সামাজিক-সাংস্কৃতিক কাজে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ফখরুল ইসলাম ২০১০ সালে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে সোনাগাজী উপজেলা পর্যায়ে সেরা কৃষকের পুরস্কার লাভ করেন। সম্প্রতি ‘ইয়াং অর্গানাইজেশন’-এর অধীনে রিয়েল এস্টেট ক্যাটেগরিতে তরুণ উদ্যোক্তা পুরস্কার অর্জন করেছেন।
স্কুলজীবনের সব পরীক্ষায় তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেন। পাঁচ বছর বয়স থেকে ফখরুলের শিক্ষাজীবন শুরু। ২০০১ সালে ওলামা মাজার মাদরাসা থেকে দাখিল পাস করেন। পর্যায়ক্রমে একই প্রতিষ্ঠান থেকে ২০০৬ সালে কামিল পাস করেন। পরে চট্টগ্রামের দারুল-মা আরিফ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবি সাহিত্যে স্নাতক পাস করেন। সোনাগাজীতে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে ফিল্ড অফিসার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন ফখরুল।
ছাত্রজীবনেই বিভিন্ন সামাজিক, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। সমাজ, রাষ্ট্রের উন্নয়নে সাধারণ মানুষের পাশে থেকে তাদের জন্য কাজ করার একটি প্রবণতা ছিল তার মধ্যে। এ কারণে ২০০৬ সালে এলাকার তরুণ সমাজ ও ছাত্রদের নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন ‘লন্ডনীপাড়া ইসলামি পাঠাগার’। বর্তমানে এ পাঠাগার থেকে স্থানীয় গরিব ও অসহায় ছেলেমেয়েদের বিনামূল্যে বই বিতরণ এবং শিক্ষা উপকরণ দেওয়া হয়। পরে কৃষকের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে গড়ে তোলেন নাছির উদ্দিন সেচ অ্যান্ড স্কিম (ইরিগেশন) প্রকল্প। ২০০৭ সালে সোনাগাজী উপজেলার প্রায় ১৫০ হাজার শতক জমি চাষাবাদের আওতায় এনে এলাকার কয়েক হাজার কৃষকের মুখে হাসি ফোটাতে সহযোগিতা করেন।
কেন এসব করেন ফখরুল? এর উত্তরে বলেন, সব মানুষেরই স্বপ্ন রয়েছে। আমিও এর ব্যতিক্রম নই। ব্যবসাকে সমাজসেবা হিসেবে দেখছি। ইনটেক প্রপার্টিজের মাধ্যমে আবাসন খাতকে উন্নত করতে চাই। কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে চাই। এতেই আমার তৃপ্তি। ব্যবসায়ী হিসেবে স্বনির্ভর হওয়ার পাশাপাশি নিঃস্বার্থভাবে মানুষের প্রয়োজনে নিজেকে নিয়োজিত রাখতে চাই।
শাহাদাত হোসেন তৌহিদ