ভারতে নোট সংকটে বেতন পেতে চরম দুর্ভোগ 

শেয়ার বিজ্ ডেস্ক: ভারতে ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট প্রত্যাহারের ঘোষণার পর গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার ডিসেম্বর মাসের প্রথম দুদিনে বেতন পেতে ও দিতে বহু মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। খবর বিবিসি।

যাদের বেতন বা পেনশন ব্যাংকে জমা পড়েছে, তারা অনেকেই এখনও সেই অর্থ তুলতে পারছেন না। আবার যারা নগদে বেতন পেতে অভ্যস্ত, তাদের মালিকরা অর্থ জোগাড় করতে না পেরে বিকল্প সমাধান খোঁজার চেষ্টা করেছেন।

গৃহপরিচারিকা, গাড়ির চালক বা রাঁধুনিরা অনেকেই জীবনে প্রথম মাইনে পেয়েছেন মোবাইল ওয়ালেট বা ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে। ওদিকে অনেক ব্যাংক বা এটিএমেই নগদ অর্থ ফুরিয়ে গেছে বা প্রয়োজনের তুলনায় খুব কম আসছে।

গত মাসের ৮ তারিখে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আকস্মিক ঘোষণার পর ১ ডিসেম্বর, প্রথম মাস মাইনের দিনে আমজনতার সংকট আরও বাড়বে, এ আশঙ্কা ছিল।

যদিও দেশটির কোটি কোটি সরকারি কর্মচারী ও সংগঠিত খাতের বেসরকারি কর্মীরাও বর্তমানে সরাসরি নিজেদের ব্যাংক হিসাবে বেতন পেয়ে থাকেন, কিন্তু তারপরও সেই মাইনের অর্থ তারা প্রয়োজন অনুযায়ী তুলতে পারবেন কি না সে সন্দেহ ছিল।

দিল্লির ডিফেন্স কলোনিতে একটি শাটার-ফেলা এটিএম মেশিনের সামনে দাঁড়িয়ে তরুণ সাহিল চৌধুরী বলছিলেন সে আশঙ্কা পুরোপুরি সত্যি হয়েছে।

তার মতে, ২৮ তারিখে ব্যাংকে বেতন জমা পড়ার পর গত তিনদিন ধরে আসছিÑকিন্তু ব্যাংকে অর্থ ফুরিয়ে যাওয়ায় রোজ ফিরে যেতে হচ্ছে। আমি রাতের শিফটে কাজ করে রোজ সকালে লাইনে দাঁড়াই, কিন্তু প্রতিদিনই হতাশ হতে হয়। অথচ আমি সরকারের এ সিদ্ধান্তের সমর্থক ছিলাম, কিন্তু এটার বাস্তবায়ন মোটেই ঠিকঠাক হচ্ছে না।”

তিনি বলেন, আগে সব কিছু ক্যাশলেস হয় না কি? বাসে-ট্রেনে টিকিট কাটবেন কীভাবে? এতো অসুবিধা হচ্ছে… আমার বাড়িওলা বলেছে চেক নেবে না, আর ভাড়া না পেলে বাড়ি থেকে বের করে দেবে!”

বয়স্ক পেনশন ভোগিরাও সাধারণত মাসের শেষেই তাদের গোটা মাসের প্রয়োজনীয় ব্যয়ের অর্থ ব্যাংক বা পোস্ট অফিস থেকে তুলে রাখেন, কিন্তু এবার তারাও গভীর সমস্যায়।

পাটনার রামশরণ যাদব বলেন, আমি সাধারণত প্রতি মাসে ১৫ হাজার করে তুলি, কিন্তু ব্যাংক এখন আমাকে দশের বেশি দেবে না।

তিনি আরও বলেন, আমি সবসময় চেক আর পাসবই ব্যবহার করেই অর্থ তুলেছি, কখনও প্লাস্টিক কার্ডের প্রয়োজন হয়নি। এখন কার্ড না থাকায় ভীষণ মুশকিল হচ্ছে, কারণ এতো কষ্ট করে কতবার আর লম্বা লাইনে দাঁড়ানো যায়?

এ সংকটের মধ্যেই অনেকে আবার নতুন নতুন সমাধানও খুঁজে নিচ্ছেন। পেটিএম, ফ্রিচার্জ বা মোবিকুইকের মতো মোবাইল ওয়ালেট গত কয়েকদিনে ভীষণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

ভারতের সাইবার ক্যাপিটাল ব্যাঙ্গালোরের বাসিন্দা সুরথ বসু তো এমাসে খবরের কাগজের পয়সা মিটিয়েছেন পেটিএম দিয়ে।

সুরথ বসু বলেন, এ মাসে কাজের লোকদের বেতন দেওয়াটা সত্যিই একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। তবে যখন দেখলাম কাগজওলার নিজস্ব পেটিএম হিসাবে আছে, তখন তার পয়সাটা কিন্তু আমি আমার পেটিএম থেকেই দিয়ে দিলাম। আগে কখনও আমি এটা ব্যবহার করিনি, কাজেই এটা করতে পেরে আমি এবারে বেশ খুশি।”

কিন্তু বাড়ির কাজের লোক, রাঁধুনি, ড্রাইভার, পাড়ার নিরাপত্তারক্ষী এদের সবার তো পেটিএম বা ওই ধরনের ওয়ালেট নেই?

সুরথ বসু জানাচ্ছেন, এদের অনেকের অবশ্য ব্যাংক হিসাব আছে। আমার রান্নার লোকের মাইনে আমি তার হিসাবেই পাঠিয়ে দিয়েছি। আর যাদের তার পরেও ক্যাশে বেতন দিতে হচ্ছেÑতাদের কিছুটা দিয়েছি, আর বলেছি বাকিটা যখন হাতে অর্থ পাব সেভাবে আস্তে আস্তে দেব!”

ফলে ভারতে অসংগঠিত খাতের লাখ লাখ শ্রমিক এ মাসেই প্রথম বেতন পেলেন ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে যদিও সে টাকা কীভাবে তুলতে বা খরচ করতে হবে তাদের অনেকেরই সেই ধারণা নেই।

সুরাটে এক কর্মচারী বলছিলেন সবজি বিক্রেতা, দুধওয়ালারাও যাতে কার্ডে রুপি নিতে পারে সরকারের উচিত এখন তার ব্যবস্থা করা।

তিনি বলেন, আমার  বেতন অ্যাকাউন্টে ১ ডিসেম্বর ১৮ হাজার জমা পড়লেও দশের বেশি তুলতে পারছি না। এখন যদি শাকসবজি বা দুধের দোকানে কার্ড সোয়াইপ মেশিনের ব্যবস্থা করা হয়, তাহলেই আমি খরচ সামলাতে পারবো। নয়তো চালাতে হবে অত্যন্ত কষ্টে।”

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইতোমধ্যেই বলেছেন, দেশে কালো রুপির কারবার চিরতরে বন্ধ করতে তার লক্ষ্য হলো ভারতকে একটি নগদহীন বা ‘ক্যাশলেস সোসাইটি’ হিসেবে গড়ে তোলা।

কিন্তু নগদের ওপর নির্ভর কমানোর এ চেষ্টা যে রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক হয়ে গেছেÑতা মাসের প্রথম দুদিনে স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।

 

Add Comment

Click here to post a comment

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০