ভালো ব্যবসা করলেও অনেক কোম্পানি পুঁজিবাজারে নেই

দেশে অনেক সরকারি-বেসরকারি এবং বহুজাতিক কোম্পানি রয়েছে। এসব কোম্পানি দিব্যি ব্যবসা করে যাচ্ছে কিন্তু পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে না। যেহেতু অর্থ মন্ত্রণালয়ে পরিবর্তন এসেছে। যিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ে দায়িত্বে এসেছেন তার পুঁজিবাজার সম্পর্কে ভালো ধারণা রয়েছে। তাই এসব বিষয়ে তিনি নজরদারিতে রাখবেন বলে আশা করা যায়। কারণ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে পুঁজিবাজার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়।
আহমেদ রশীদ লালীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ এ হাফিজ এবং কনসালটেশন অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান হাসান মাহমুদ বিপ্লব।
মোহাম্মদ এ হাফিজ বলেন, নতুন বছর, নতুন সরকার, নতুন অর্থমন্ত্রী এবং সরকারের আগামী পাঁচ বছরের ইশতেহারে অর্থনৈতিক উন্নয়নে অনেক প্রতিশ্রুতি রয়েছে অর্থাৎ এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে পুঁজিবাজার ইতিবাচক দিকে এগোচ্ছে। সামনে এর ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে মনে করি।
২০১৮ সালের নভেম্বরে পুঁজিবাজারের স্বল্পমূলধনি কোম্পানিগুলোর জন্য আলাদা বোর্ড গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। অর্থাৎ অনেক বিচার-বিশ্লেষণ করেই স্বল্পমূলধনি কোম্পানির জন্য আলাদা বোর্ড করা হয়েছে এবং চলতি বছরের মাঝামাঝিতে এর কার্যপ্রণালী চালু হতে পারে। এটি পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক হবে। এর ফলে স্বল্পমূলধনি কোম্পানিগুলোতে বিভিন্ন ধরনের কারসাজি ও অস্বস্তিকর যেসব প্রতিযোগিতা রয়েছে তা বন্ধ হবে। এর ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে।
তিনি আরও বলেন, পুঁজিবাজার একটি স্পর্শকাতর জায়গা এবং এটি তার নিজস্ব গতিতে চলে। পুঁজিবাজার ওঠা-নামা করবে এটাই স্বাভাবিক। তাই বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। কখন কোন কোম্পানির শেয়ার কিনতে হবে এবং বিক্রি করতে হবে। অর্থাৎ বেচা বা কেনা সম্পর্কে সচেতন না থাকলে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়। দেশের পুঁজিবাজারে এ সমস্যাটা বেশি দেখা যায়। আবার দেশের প্রতিটা খাতে সুশাসনের অভাব রয়েছে। বিশেষ করে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও পুঁজিবাজারে সুশাসন খুবই প্রয়োজন। কারণ এখানে জনগণের টাকা জড়িত। সরকার যদি জনগণের টাকার নিরাপত্তা বিধান করতে না পারে তাহলে ব্যাংক ও পুঁজিবাজারের প্রতি অনীহা সৃষ্টি হবে। ২০১৯-২০২০ সালে বা সামনের বছরগুলোতে পুঁজিবাজার ভালো অবস্থানে যাবে বলে মনে করি। দেশের অর্থনীতি উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ও সামনের দিকে আরও এগিয়ে যাবে। এর সঙ্গে সঙ্গে দেশের পুঁজিবাজার এগিয়ে যাবে। তবে পুঁজিবাজারে আরও ভালো মানের কোম্পানি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
হাসান মাহমুদ বিপ্লব বলেন, নির্বাচনের পর পুঁজিবাজারের সূচক, প্রতিদিনের গড় লেনদেন, বাজার মূলধন এবং শেয়ারের দাম ইতিবাচক দেখা যাচ্ছে। এখন মূল কাজ হচ্ছে পুঁজিবাজারে ভালো মানের কোম্পানি অন্তর্ভুক্ত করা। কারণ সত্যিকার অর্থে পুঁজিবাজারের গ্রোথ যদি না থাকে সেটিকে পুঁজিবাজার বলা যায় না। দেশে অনেক সরকারি, বেসরকারি এবং বহুজাতিক কোম্পানি রয়েছে। এসব কোম্পানি দিব্যি ব্যবসা করে যাচ্ছে কিন্তু পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে না। যেহেতু অর্থ মন্ত্রণালয়ে পরিবর্তন হয়েছে। অর্থাৎ যিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব আসছেন তার পুঁজিবাজার সম্পর্কে ভালো ধারণা রয়েছে। তাই এসব বিষয় তিনি নজরদারিতে রাখবেন বলে আশা করি। কারণ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পুঁজিবাজার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
দেশের অর্থনীতি ধীরে ধীরে উন্নয়নের দিকে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতে এশিয়ার বৃহত্তম ২৩তম অর্থনৈতিক দেশ হবে। দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হলে পুঁজিবাজারকে এগিয়ে নিতে হবে। এখন কথা হচ্ছে ব্যাংক হচ্ছে স্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগের জায়গা আর পুঁজিবাজার হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জায়গা। দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ব্যাংকনির্ভর না হয়ে পুঁজিবাজারনির্ভর অর্থনৈতিক উন্নয়নে যাওয়া উচিত। এতে দেশের যেমন অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে তেমনি পুঁজিবাজার সম্প্রসারিত হবে। কারণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী সুদ দিতে হয়। আর পুঁজিবাজার থেকে টাকা উত্তোলন করলে কোনো সুদ দিতে হয় না। শুধু বছর শেষে লভ্যাংশ দিতে হয়।
তিনি আরও বলেন, ২০১০ সালে ধসের পর পুঁজিবাজার সংক্রান্ত অনেক পলিসিগত পরিবর্তন হয়েছে এবং বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন হয়েছে। আবার স্বল্পমূলধনি কোম্পানির জন্য আলাদা বোর্ড হতে যাচ্ছে। এটি নিঃসন্দেহ পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক হবে।

শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০