মূসক, আমদানি শুল্ক ও আয়কর ইস্যু: এফবিসিসিআইর সঙ্গে বাড়ছে এনবিআরের দূরত্ব!

মাসুম বিল্লাহ ও পলাশ শরিফ: মূল্য সংযোজন কর (মূসক), আমদানি শুল্ক ও আয়কর ইস্যুতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে জটিলতা সহসা কাটছে না। গত বাজেটের পর থেকে জটিলতা নিরসনে কয়েক দফা চিঠি চালাচালি হয়েছে। গঠন করা হয়েছে ওয়ার্কিং কমিটিও। কিন্তু সমস্যার এখনও সমাধান হয়নি বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

জানা যায়, রাজস্ব সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে ব্যবসায়ীদের সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সুপারিশের প্রেক্ষিতে ওয়ার্কিং কমিটি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তবে সে কমিটি এখনও আলোচনা ও প্রতিশ্রুতির বৃত্তে ঘুরপাক করছে। সর্বশেষ প্রতিশ্রুত সময়ও গত ১০ জানুয়ারি পেরিয়েছে। এ বিষয়ে অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে গত মাসে এনবিআরে চিঠি দেয় এফবিসিসিআই। সে চিঠির জবাব পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন এফবিসিসিআই নেতারা।

এ বিষয়ে এফবিসিসিআই’র ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘মূল্য সংযোজন কর, আমদানি শুল্ক ও আয়কর নিয়ে জটিলতার কারণে ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন। এজন্য সঙ্কট নিরসনে এনবিআরকে প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে এ বিষয়ে এনবিআরের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠকও হয়। চলতি বছরের জানুয়ারির মধ্যে বিষয়টি সুরাহা করার কথা ছিল। তবে অদ্যাবধি এনবিআর থেকে আমাদের কিছু জানানো হয়নি। ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বার্থেই আইনি জটিলতার বিষয়গুলো সুরাহা করা জরুরি।’

প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট-পরবর্তী সময়ের জন্য এফবিসিসিআই’র পক্ষ থেকে মূসক, আমদানি শুল্ক ও আয়কর বিষয়ে কয়েকশ প্রস্তাব দেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে শুল্ক ও নীতি বিভাগের সদস্যকে আহ্বায়ক করে ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করে এনবিআর। ওই কমিটি সুপারিশ বিষয়ে এফবিসিসিআই প্রতিনিধিদের সঙ্গে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আট দফা আলোচনা করেছে। ২০১৬ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ও ২৮ ডিসেম্বর এ বিষয়ে যৌথ সভাও করে এনবিআর এবং এফবিসিসিআই। সর্বশেষ সভায় অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে চলতি বছরের ২ জানুয়ারির মধ্যে ব্যবসায়ীদের বিশেষ প্রণোদনা দেওয়ার বিষয়ে এনবিআরের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয় বলে ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন। পরবর্তীতে এক সপ্তাহ পিছিয়ে চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি অর্থমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী ও শিল্পমন্ত্রীর উপস্থিতিতে প্রণোদনার ঘোষণা দেওয়া হবে বলে এফবিসিসিআইকে জানানো হয়। তবে প্রতিশ্রুত সময়ের মধ্যে বিষয়টি সুরাহা হয়নি।

এফবিসিসিআই’র পক্ষ থেকে অগ্রগতি জানতে চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি ব্যবসায়ী সংগঠনটির মহাসচিব মীর শাহাবুদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। এনবিআরের দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হয়নি বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। চিঠিতে এ বিষয়ে দেওয়া ঘোষণা সম্পর্কে এনবিআরের বর্তমান অবস্থান জানতে চাওয়া হয়। পাশাপাশি ২০১২ সালের মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা শুরুর তাগিদও দেওয়া হয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সর্বশেষ এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো চিঠির কোনো উত্তর পায়নি এফবিসিসিআই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, এফবিসিসিআই ও এনবিআর অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করে। এক্ষেত্রে কোনো জটিলতার উদ্ভব হলে আলোচনার মাধ্যমে তা সমাধান করা হয়। ব্যবসায়ীদের সব প্রস্তাব আমরা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করি। এক্ষেত্রেও সেটা করা হচ্ছে। পাশাপাশি কিছুদিন পরই পরবর্তী বাজেট বিষয়ে ব্যবসায়ীসহ অন্যান্য অংশীদারের সঙ্গে আলোচনা শুরু হবে। ফলে কোনো ঝামেলা থাকলে তা সমাধান হয়ে যাবে।