পদ্মা সেতু নিয়ে গতকাল শেয়ার বিজের প্রথম পাতায় দুটি খবর প্রকাশিত হয়েছে। তার একটির শিরোনাম ‘১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার সুবিধা মিলবে ৩১ বছরে’ এবং অন্যটির ‘পদ্মা সেতু প্রকল্প: দুর্নীতি ষড়যন্ত্রের প্রমাণ পাননি কানাডার আদালত’। খেয়াল করার মতো বিষয়, পদ্মা সেতু প্রকল্প ঘিরে দুর্নীতি ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে যে অভিযোগ তোলা হয়েছিল বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে, তা খারিজ করে দিয়েছেন কানাডার আদালত। আর উল্লিখিত ষড়যন্ত্রকে জল্পনা, গুজব ও জনশ্রুতি বলে আখ্যায়িত করেছেন দেশটির বিচারক। আমাদের জন্য এ রায় স্বস্তির। কেননা যদিও ক্ষমতাসীন সরকারের পক্ষ থেকে শুরু থেকেই এ ব্যাপারে জোরালো প্রতিবাদ তোলা হয়, সত্য সত্যই ষড়যন্ত্রটি প্রমাণ হলে তা দেশের ভাবমূর্তিতে বড় কলংক হিসেবে দেখা দিতে পারতো। খবরটা স্বস্তির এজন্যও যে, এক পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে যে মানসিক টানাপড়েন চলছিল, কানাডার আদালতের রায়ের মধ্য দিয়ে তার অবসান হবে বলে প্রত্যাশা। সবাই চাইবেন, এ নিয়ে বিশ্বব্যাংক বিষয়ে বাড়তি কোনো কথায় না গিয়ে বিশেষত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে উন্নয়ন সহযোগী এ সংস্থাটির সঙ্গে সম্পর্কের আরও জোরদারে ব্রতী হবে সরকার। পাশাপাশি মনোযোগ বাড়ানো দরকার প্রাক্কলিত সময়সীমার মধ্যে পদ্মা সেতু নির্মাণের ওপর। আমাদের প্রতিনিধি জানিয়েছেন, সার্বিকভাবে ৩১ বছরে পদ্মা সেতু থেকে অর্থনৈতিক সুবিধা মিলবে আনুমানিক ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার। তার পরিবেশিত এ তথ্যের ভিত্তি সম্প্রতি প্রকাশিত ‘ইকোনমিক কস্ট-বেনিফিট অ্যানালাইসিস: পদ্মা ব্রিজ প্রজেক্ট’ শীর্ষক গবেষণা। কোপেনহেগেন কনসেনসাস সেন্টার, স্মার্ট সল্যুশনস ফর বাংলাদেশ ও ব্র্যাকের যৌথ উদ্যোগে গবেষণাটি পরিচালনা করেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) অব বাংলাদেশের সিনিয়র ইকোনমিস্ট ড. আশিকুর রহমান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক বজলুল হক খন্দকার। গবেষণাটির ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলা কঠিন।
লক্ষণীয়, এরই মধ্যে পদ্মা সেতুর নির্মাণব্যয় বেড়েছে আনুমানিক ৮ হাজার কোটি টাকা। সেজন্য অনেকের মনে সংশয় সৃষ্টি হয়, যে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন প্রত্যাশা করা হচ্ছেÑপদ্মা সেতু প্রকল্প তা আদৌ জোগাতে পারবে কি না। এক্ষেত্রে আশ্বস্ত হওয়ার মতো বিষয় হলো, ৩১ বছরে পদ্মা সেতুর কাছ থেকে যে ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার অর্থনৈতিক সুবিধা প্রত্যাশা করা হচ্ছে, তার পুরোটাই প্রত্যক্ষ সুবিধা। এর বাইরে স্থানীয় অর্থনীতিতে সৃষ্ট পরোক্ষ সুবিধাদির পরিমাণ আরও কয়েকগুণ হবে বলে আশা করছেন অনেকে। এখন কথা হলো, প্রাক্কলিত সময়সীমা তথা ২০১৮ সালের মধ্যেই সেতুটি নির্মাণ সম্পন্ন হওয়া দরকার; তাহলেই প্রত্যাশিত প্রত্যক্ষ সুবিধা অটুট থাকবে বলে ধারণা। এদিকে মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পরও সেতুটি চালু করা না গেলে বাড়তি সময়ের জন্য আরও বেড়ে যাবে প্রকল্পব্যয়; তার মানে একই সঙ্গে কমবে প্রত্যক্ষ অর্থনৈতিক সুবিধাদি। অনেকেই অনুমান করেন, অর্থনীতির বাইরে পদ্মা সেতুর একটা রাজনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে সরকারের কাছে। সেদিক থেকেও ২০১৮ সালের মধ্যে সেতুর নির্মাণ হওয়াটা সুবিধাজনক। একই সঙ্গে আমরা জোর দিতে চাইবো, দ্রুত নির্মাণ করতে হবে বলেই আবার তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে অন্তত এ ধরনের মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়নের মান যেন নামিয়ে দেওয়া না হয়। কাজের গতি ও মানের মধ্যে উপযুক্ত ভারসাম্য রক্ষা করাটাই কাম্য।
Add Comment