ক্রীড়া প্রতিবেদক: হায়দরাবাদ টেস্টের বাকি এখনও পুরো এক দিন। তিন সেশন। খেলা হবে কমপক্ষে ৯০ ওভার। এ ওভারগুলো আটকে দিতে পারলেই ড্র হবে ম্যাচ। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায় এ অসম্ভব কাজটা কি পারবে বাংলাদেশ? চতুর্থ দিনের শেষ বিকালে কোটি টাকার এ প্রশ্নটি রেখে সফরকারী দলের টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যান ১০৩ রান করে ফিরেছেন সাজঘরে। জিতলে হলে এখনও ৩৫৬ রান করতে হবে টাইগারদের। হাতে ৭ উইকেট।
চতুর্থ ইনিংসে দেখে-শুনেই শুরু করেছিলেন তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার। কিন্তু চতুর্থ ওভারে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের পঞ্চম বলে প্রথম সিøপে বিরাট কোহলির ক্যাচে পরিণত হন তামিম ইকবাল। আম্পায়ার জোরালো আবেদনে সাড়া না দিলে রিভিউ নেন ভারতীয় অধিনায়ক। আল্ট্রাএজে বল ব্যাটে লাগার প্রমাণ মিললে পাল্টায় আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত। এরপর স্বাগতিক বোলারদের বেশ সামলান সৌম্য ও মুমিনুল। দুজনে গড়েন ৬০ রানের জুটিও। কিন্তু ১৪ রানের ব্যবধানে অশ্বিন-রবিন্দ্র জাদেজার স্পিন বিষে নীল হয়েছেন দুজনই। যে কারণে চতুর্থ দিনের শেষ বিকালে টাইগারদের আকাশে বেড়েছে কালো মেঘের আনাগোনা। হয়তো এখন থেকেই কঠিন চ্যালেঞ্জের পথটা আরও বেশি করে তৈরি হয়েছে তাদের সামনে। অবশ্য কিছুটা আশার প্রতীক হয়ে ক্রিজে রয়েছেন সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। আজ সকালে এই দুজনের দিকে খুব করেই তাকিয়ে থাকবে লাল-সবুজরা।
এর আগে চতুর্থ দিনের সকালটা বাংলাদেশের শুরু হয়েছিল মেহেদী হাসান মিরাজের উইকেট হারিয়ে। শনিবার ৫১ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি। গতকাল আর কোনো রান করেই এ ডানহাতি ভুবেনেশ্বর কুমারের দারুণ এক ইন সুইংগারে বোল্ড হয়ে ফিরে যান সাজঘরে। কিন্তু অন্য প্রান্তে অবিচল ছিলেন মুশফিকুর রহিম। শেষ দিকের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে প্রতিপক্ষ বোলারদের বিপক্ষে বুক চিতিয়ে লড়াই করেন তিনি। এর মধ্যে লড়াকু ব্যাটিংয়ে নিজের পঞ্চম শতকে পৌঁছান মুশি। ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ অধিনায়কের এটি দ্বিতীয় ও সব মিলিয়ে ক্যারিয়ারের পঞ্চম শতক। ২৩৫ বলে ১৩টি চার ও একটি ছক্কায় তিন অঙ্ক ছুঁয়ে ফেলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ১২৭ রানে অশ্বিনের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে থামেন মুশফিক। সঙ্গে ৩৮৮ রানে থামে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস।
প্রথম ইনিংসে ২৯৯ রানে এগিয়ে ছিল ভারত। তারপরও সফরকারীদের ফলোঅনে ব্যাটিংয়ে পাঠায়নি স্বাগতিকরা। নিজেরা ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই তাসকিন আহমেদের বোলিং তোপে পড়ে ভারত। জোড়া আঘাত করেন এ ডানহাতি পেসার। দলীয় ১২ রানে প্রথম উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। ফিরে যান আগের ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান ওপেনার মুরালি বিজয়। অফ স্টাম্পের বাইরের বল খেলতে গিয়ে মুশফিকের হাতে তুলে দেন ক্যাচ। এরপরই লোকেশ রাহুলকে (১০) সাজঘরের পথ দেখিয়ে দেন সেই তাসকিন। এ পেসারের বলে কাট করতে গিয়ে সেই মুশফিকের গ্লাভসে ক্যাচ। আগের ইনিংসের ডাবল সেঞ্চুরিয়ান কোহলিকে ফেরান সাকিব। ৩৮ রান আসে ভারত অধিনায়কের ব্যাটে। মিড উইকেটে মাহমুদউল্লাহর হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন তিনি। এরপর রাহানেকে (২৮) ফিরিয়ে পাপমোচন করেন সাকিব। ৪ রানে তার হাতেই জীবন পেয়েছিলেন এ ভারতীয়। শেষ পর্যন্ত ১৫৯ রান করে চা-বিরতির সময় ইনিংস ঘোষণা করে ভারত।
সব মিলিয়ে আজ কঠিন লড়াইয়ে নামছে বাংলাদেশ। এখন দেখার বিষয় কঠিন এ পথকে কীভাবে পাড়ি দেন সাকিব-মুশফিকরা। হাতে ৭ উইকেট নিয়ে এক দিন পার করার অনেক রেকর্ডই রয়েছে অন্যান্য দলের। কিন্তু দেশের মাঠে বাঘ ভারতের সঙ্গে সেই লড়াই যে ‘মিশন ইমপসিবল’!
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভারত ১ম ইনিংস: ১৬৬ ওভারে ৬৮৭/৬ ইনিংস ঘোষণা (রাহুল ২, বিজয় ১০৮, পুজারা ৮৩, কোহলি ২০৪, রাহানে ৮২, ঋদ্ধিমান ১০৬*, অশ্বিন ৩৪, জাদেজা ৬০*; তাসকিন ১/১২৭, রাব্বি ০/১০০, মিরাজ ২/১৬৫, সাকিব ০/১০৪, তাইজুল ৩/১৫৬)। এবং ভারত ২য় ইনিংস : ১৫৯/৪ ইনিংস ঘোষণা (পুজারা ৫৪, কোহলি ৩৮, রাহানে ২৮; তাসকিন ২/৪৩, সাকিব ২/৫০)
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ১২৭.৫ ওভারে ৩৮৮/১০ (তামিম ২৪, সৌম্য ১৫, মুমিনুল ১২, মাহমুদউল্লাহ ২৮, সাকিব ৮২, মুশফিক ১২৭, সাব্বির ১৬, মিরাজ ৫১, তাইজুল ১০, তাসকিন ৮; ভুবনেশ্বর ১/৫২, ইশান্ত ১/৬৯, অশ্বিন ২/৯৮, যাদব ৩/৮৪, জাদেজা ২/৭০) এবং বাংলাদেশ ২য় ইনিংস : ৩৫ ওভারে ১০৩/৩ (সৌম্য ৪২, মুমিনুল ২৭, মাহমুদউল্লাহ ৯*, সাকিব ২১*; অশ্বিন ২/৩৪, জাদেজা ১/২৭)।
Add Comment