নিজস্ব প্রতিবেদক: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির অপেক্ষায় থাকা আমরা নেটওয়ার্কের বিডিং বাতিলের দাবি জানিয়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। বিনিয়োগকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে গতকাল সোমবার বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বরাবর এ-সংক্রান্ত একটি আবেদন দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, আমরা নেটওয়ার্ক পুঁজিবাজারে আসার আগেই কোম্পানিটির শেয়ারদর নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিনিয়োগকারীরা। তারা বলছেন, কোম্পানিটি নিজেদের লোক দিয়েই শেয়ারের দর বাড়ানোর অপকৌশল চালাচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারদর নির্ধারণ হয়েছে ৩৯ টাকা। বিনিয়োগকারীদের দাবি, যে দর নির্ধারণ করা হয়েছে সেটা কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়। বর্তমানে বাজারে এ খাতের সাতটি কোম্পানি রয়েছে। যার মধ্যে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর ১৪ টাকা থেকে ৩২ টাকার মধ্যে। অন্য দুটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর ওঠানামা করছে ৩৯ থেকে ৫০ টাকায়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যে কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত রয়েছে তারা বিনিয়োগকারীদের কাছে আস্থা বা বিশ্বাসের জায়গা তৈরি করেছে। অন্যদিকে একটা নতুন কোম্পানি যার সম্পর্কে বিনিয়োগকারীরা কিছুই জানেন না, সেই কোম্পানির শেয়ারের দর উচ্চমূল্য বা অস্বাভাবিক হতে পারে না। তাদের মতে, এ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর কিছুতেই ৩৯ টাকা হতে পারে না।
এ প্রসঙ্গে বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক শেয়ার বিজকে বলেন, ‘কোম্পানি কর্তৃপক্ষ কারসাজির মাধ্যমে শেয়ারের দর বাড়িয়ে নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার যদি এই দরে বাজারে আসে, তাহলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাদের কথা মাথায় রেখেই আমরা বিএসইসির কাছে প্রতিষ্ঠানটির বিডিং বাতিল চেয়ে আবেদন করেছি।’
বিষয়টি জানতে যোগাযোগ করা হলে প্রতিষ্ঠানটির কোম্পানি সচিব মো. এনামুল হক শেয়ার বিজকে বলেন, ‘বিএসইসিতে কেউ কোনো অভিযোগ করেছে বলে আমার জানা নেই। কোনো অভিযোগ পড়লে তা নিয়ে কী করবে না করবে, সেটা বিএসইসির ব্যাপার।’
বিডিংয়ে কোনো ভুল ছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিডিংয়ে কোনো ভুল আছে কি না, সেটা বলতে পারবে বিএসইসি। কারণ আমরা সব নিয়ম মেনেই বিডিং করেছি। এখানে যদি কোনো ভুল থাকলে তার ব্যবস্থাও নেবেন বিএসইসি।’
বিএসইসি বরাবর প্রদত্ত চিঠিতে বলা হয়েছে, আমরা নেটওয়ার্কের বিডিংয়ে প্রথম দুই দিনে ১২ টাকা ও ১৫ টাকা দরে ১০৫ জন বিনিয়োগকারী প্রায় ১৮ কোটি শেয়ার কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেন। কিন্তু শেষের দিনে একজন বিনিয়োগকারী ৪০ টাকা দরে আট লাখ ৭৮ হাজার ও আরেকজন ৪১ টাকা দরে ১০০টি শেয়ার কেনার আগ্রহ প্রকাশ করতে দেখা যায়। বিনিয়োগকারীদের মতে, এক দিনের ব্যবধানে শেয়ারদরের এ পার্থক্য অস্বাভাবিক। এক্ষেত্রে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ, ইস্যু ম্যানেজার ও কিছু মার্চেন্ট ব্যাংকসহ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা আগেই যোগসাজশ করে বেশি দরে বিডিং করার পরিকল্পনা করেছিল বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিডিংয়ে অংশ নেওয়া ৩৯ থেকে ৪১ টাকা করে বিডিং করা সব বিনিয়োগকারীর আচরণ অস্বাভাবিক বলে মনে করে বিনিয়োগকারীদের সংগঠনটির নেতারা। ফলে এসব দরে বিডিং করা বিনিয়োগকারীদের নাম প্রকাশ করার দাবি জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে অনিয়ম ও কারসাজির ব্যাপারে সঠিক তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, ৭২ ঘণ্টার (৫ ফেব্রুয়ারি বেলা সাড়ে ৩টা থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি বেলা সাড়ে ৩টা) বিডিংয়ে ২৭২ জন যোগ্য বিনিয়োগকারী আমরা নেটওয়ার্কের শেয়ার কিনতে নিলামে অংশগ্রহণ করেন। এক্ষেত্রে তারা সম্মিলিতভাবে ৬৯৩ কোটি ৭৩ লাখ টাকার শেয়ার কিনতে চেয়েছেন। তবে বিডিংয়ে বরাদ্দ করা ৩৫ কোটি ১৬ লাখ টাকার শেয়ারের জন্য ৩৯ টাকার ওপরে বিডিং হয়। ফলে কাট-অফ প্রাইস হিসেবে ৩৯ টাকা নির্ধারিত হয়েছে।
দেখা গেছে, ২৭২ জন বিডারের মধ্যে সর্বোচ্চ ৯৪ জন ১৫ টাকা দরে আমরা নেটওয়ার্কের শেয়ার কিনতে আগ্রহী। তারা ১৫ কোটি দুই লাখ শেয়ার ২২৫ কোটি ৩০ লাখ টাকায় কিনতে চান। এরপরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৪ জন ৩৫ টাকা দরে ৭০ কোটি ২৯ লাখ টাকার শেয়ার কেনার জন্য আগ্রহ দেখিয়েছেন।
প্রতিষ্ঠানটি পুঁজিবাজার থেকে ৫৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা উত্তোলন করবে। এ টাকা দিয়ে কোম্পানির বিএমআরই (আধুনিকায়ন), ডেটা সেন্টার প্রতিষ্ঠা, দেশের বিভিন্ন স্থানে ওয়াইফাই হটস্পট প্রতিষ্ঠা করা, আইপিওর কাজ ও ঋণ পরিশোধ করবে। কোম্পানির ইস্যু ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে লংকাবাংলা ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেড।
৩১ ডিসেম্বর, ২০১৫ সমাপ্ত বছরের নিরীক্ষিত বিবরণী অনুযায়ী কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে তিন টাকা ১৬ পয়সা। শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য ২১ টাকা ৯৮ পয়সা। আর পাঁচ বছরের ইপিএসের গড় করলে হয় দুই টাকা ৫২ পয়সা। ৩০ জুন ২০১৬ সমাপ্ত নিরীক্ষিত হিসাব (ছয় মাসের) অনুযায়ী ইপিএস হয়েছে এক টাকা ৬৮ পয়সা। আর এনএভি হয়েছে ২৩ টাকা ৬৬ পয়সা।
Add Comment