পলাশ শরিফ: পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের কোম্পানি ‘মবিল যমুনা’র তিনটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এগুলো হচ্ছে ওমেরা সিলিন্ডারস, ওমেরা পেট্রোলিয়াম ও এমজেএল এ কে টি পেট্রোলিয়াম। এ তিন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রথম দুটি প্রতিষ্ঠানই বর্তমানে লোকসানে রয়েছে। অপর প্রতিষ্ঠানটির কর-পরবর্তী মুনাফা কমছে। তাই সহযোগী দুই প্রতিষ্ঠানের দায় বইতে হচ্ছে মবিল যমুনাকে। প্রতিষ্ঠানটির নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে মিলেছে এমন তথ্য।
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ওমেরা সিলিন্ডারসের শতভাগ শেয়ারের মালিক মবিল যমুনা। ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালে জুন পর্যন্ত ১৮ মাসে ৪৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা আয় করেছে ওমেরা সিলিন্ডারস। আয়ের তুলনায় উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় আলোচ্য সময়ে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালন লোকসান হয়েছে ২ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। কর প্রদানের পর লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা। তবে এর আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রতিষ্ঠানটির কর-পরবর্তী লোকসান প্রায় অর্ধেক বা প্রায় ৩ কোটি টাকা কমেছে।
অপর সহযোগী প্রতিষ্ঠান ওমেরা পেট্রোলিয়ামের ৬৮ দশমিক পাঁচ শতাংশ শেয়ারের মালিক মবিল যমুনা। বাকি শেয়ার রয়েছে নেদারল্যান্ডসের প্রতিষ্ঠান ‘বিবি এনার্জি (এশিয়া) পিটিই লিমিটেড’-এর হাতে। যৌথ মালিকানার ওই প্রতিষ্ঠানটিও ধুঁকছে। ২০১৬ জুন পর্যন্ত সর্বশেষ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির আয় আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ২০০ কোটি টাকা বাড়লেও লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারেনি। ওই অর্থবছরে ৩৪ কোটি ১১ লাখ টাকা পরিচালন মুনাফা করলেও শেষ পর্যন্ত প্রায় ৩৮ কোটি ৯৮ লাখ টাকা কর-পরবর্তী লোকসানের মুখে পড়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় এ সময়ে ওমেরা পেট্রোলিয়ামের লোকসান প্রায় পৌনে ৯ কোটি টাকা বেড়েছে।
তিন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তুলনামূলক ভালো অবস্থানে আছে মিয়ানমারের প্রতিষ্ঠান ‘অং কাইয়ুন থারের (এ কে টি) সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ‘এমজেএল অ্যান্ড এ কে টি পেট্রোলিয়াম লিমিটেড’। প্রতিষ্ঠানটির ৫১ শতাংশ শেয়ারের মালিক মবিল যমুনা। মিয়ানমারের ক্রমবর্ধমান বাজারে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্যই ওই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলা হয়। ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত ১৮ মাসে প্রতিষ্ঠানটির আয় প্রায় এক কোটি ৯১ লাখ টাকা বেড়েছে। তবে আয় বাড়লেও মুনাফা বাড়েনি, উল্টো প্রায় ৩৬ লাখ টাকা কমেছে। এ সময়ে প্রতিষ্ঠানটির কর-পরবর্তী মুনাফা এক কোটি এক লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে।
সহযোগী প্রতিষ্ঠানের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির কোম্পানি সেক্রেটারি মীর রকিবুল কবির শেয়ার বিজকে বলেন, ‘তিনটি সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এমজেএল অ্যান্ড এ কে টি পেট্রোলিয়াম ভালো অবস্থানে আছে। বাকি দুই প্রতিষ্ঠান এখনও লাভজনক অবস্থানে পৌঁছেনি। দিন দিন অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। চলতি প্রান্তিক শেষ হলে সর্বশেষ অবস্থা বোঝা যাবে। ওই প্রতিষ্ঠান দুটিকে লাভজনক করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।’ প্রাপ্ত তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত অর্ধবার্ষিকে মূল প্রতিষ্ঠান মবিল যমুনার আয় ৬৬৭ কোটি ৯২ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে; যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১৬৯ কোটি টাকা বেশি। এর জের ধরে প্রতিষ্ঠানটির কর-পরবর্তী মুনাফা প্রায় ৩০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা বেড়ে ৯৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। এদিকে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণের পরিমাণ রিজার্ভের চেয়ে আরও ৩২৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা বেশি।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালে তালিকাভুক্ত মবিল যমুনার ৫২ দশমিক শূন্য ছয় শতাংশ শেয়ারের মালিক ইস্ট কোস্ট গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ইসি সিকিউরিটিজ। এর বাইরে যমুনা অয়েলের হাতে ১৯ দশমিক ৪৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ১৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে দুই দশমিক ৫৩ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ১২ দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশ শেয়ার আছে। সর্বশেষ সমাপ্ত অর্থবছরে বিনিয়োগকারীদের ৬০ শতাংশ নগদ ও ১০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে মবিল যমুনা। গত এক বছরে মবিল যমুনার শেয়ারদর সর্বনি¤œ ৮৩ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১৩৪ টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করেছে। সর্বশেষ কার্যদিবসে গতকাল (সোমবার) প্রতিষ্ঠানটির প্রতিটি শেয়ার ১২২ টাকায় লেনদেন হয়েছে।
Add Comment