জরিমানা নয়, সেবার উন্নয়ন চাই

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত গ্রামীণফোন লিমিটেডকে প্রতারণার অভিযোগে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে বলে এক খবর প্রকাশিত হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে। অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর গ্রামীণফোনের এক গ্রাহকের অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধানপূর্বক প্রতারণার প্রমাণ মেলে এবং আইন অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটিকে জরিমানা করা হয়। এমন ঘটনায় সাধারণ গ্রাহকরা বিচলিত না হয়ে পারেন না। দেশে সেলফোন অপারেটর সেবার মান যে এখনও কাক্সিক্ষত পর্যায়ে পৌঁছেনি, উল্লিখিত অভিযোগটি তারই নির্দেশক। আর এ কথা কেবল গ্রামীণফোন নয়, অন্যান্য সেলফোন অপারেটর সার্ভিসের বেলায়ও কমবেশি প্রযোজ্য।

খেয়াল করার মতো বিষয়, দেশে সেলফোন সেবা ক্রমেই কল ও এসএমএস থেকে ডেটার দিকে ঝুঁকছে। সেসঙ্গে বাড়ছে ডেটাকেন্দ্রিক অফারের পরিমাণ ও প্রতারণার সংখ্যা। এক্ষেত্রে একেক অপারেটরের ‘প্রতারণা’র (তথা বিজ্ঞাপন কৌশল) ধরন একেক রকম বলে প্রতীয়মান। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একশ্রেণির কোম্পানি যে গতির ইন্টারনেট সেবার প্রতিশ্রুতি প্রদানপূর্বক গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিচ্ছে, সেই গতির ইন্টারনেট হয়তো আদৌ পাচ্ছেন না গ্রাহক। ওই পরিস্থিতিতে অপারেটরটির কাস্টমার সার্ভিসে যোগাযোগ করা হলে প্রথমেই শুনতে হয়, এমন তো হওয়ার কথা নয়! তার পরও যদি নাছোড়বান্দা কোনো গ্রাহক উদ্ভূত সমস্যার সমাধান চান তাকে জানিয়ে দেওয়া হয়, ওই এলাকায় দুর্বল নেটওয়ার্কের কারণে গ্রাহক এমন সমস্যায় ভুগছেন। অবশ্যই এলাকাভিত্তিক ডেটা সেবা দেওয়ার কথা বলছি না আমরা। কেননা সেক্ষেত্রে উল্টো একশ্রেণির গ্রাহকের অপব্যবহারের শিকার হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে খোদ কোম্পানিটি। কথা হলো, বিজ্ঞাপন দেওয়ার সময় তারা অন্তত এ বিষয়টিও গ্রাহকের জ্ঞাতার্থে জানাতে পারে না যে, অমুক প্যাকেজ কেবল তাদের তমুক তমুক কাভারেজ এরিয়ার জন্য! বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) উচিত হবে ঘটনাগুলো ভালোভাবে মনিটর করা।

দ্বিতীয় বিষয়, বিভিন্ন ডেটা প্যাকেজ। অনেক গ্রাহকের কাছে বিশেষ প্যাকেজ মানেই প্রতারণার শামিল। হয়তো দেখা গেল, ২ জিবি ইন্টারনেট নিয়েই ৭ দিন ও ৩ দিনের ভিন্ন প্যাকেজ ঘোষণা করা হচ্ছে যথাক্রমে ৪৫ ও ৯২ টাকায়। কিন্তু (অনেক সময়) ডেটা সেবার নিয়মিত প্যাকেজ নেওয়া থাকলে আবার ওই বিশেষ প্যাকেজ থেকে ডেটা কাটা হয় না। বরং আগের মতোই ব্যবহৃত ইন্টারনেটের মূল্য গ্রাহককে পরিশোধ করতে হয় নিয়মিত প্যাকেজ থেকে। অথচ ভয়েস কল সার্ভিসে বোনাস কল কাটা যায় আগে, তার পর কাটা হয় মূল কলটাইম থেকে। প্রশ্ন হচ্ছে, ডেটা ও কলে এ ধরনের বৈষম্য কেন? এমন ঘটনাও রয়েছে, অপারেটর কর্তৃক প্রমোটেড কোনো সেবা গ্রাহককে প্রত্যাহার করতে হচ্ছে কষ্টেসৃষ্টে, যেখানে গ্রাহকের কাক্সিক্ষত সেবায় পান থেকে চুন খসলেই খেসারত অধিকাংশ সময় বিন্দুমাত্র সতর্কও করা হয় না তাদের। এ অবস্থায় ডেটা সেবা প্রদানকারী সেলফোন অপারেটরগুলোর কাছে বিটিআরসি’র প্রথম জিজ্ঞাস্য হওয়া উচিত অপারেটরগুলো কি দেশে ব্যবসা করতে নেমেছে নাকি দাতব্যসেবায় লিপ্ত। যদি কোনো অপারেটর দাতব্যসেবায় নিয়োজিত হয়ে থাকে, সেটির উচিত ঘোষণা দিয়ে গ্রাহকদের তা জানিয়ে দেওয়া। নইলে গ্রাহকরা হয়তো বুঝতে পারবেন না, তিনি যে সেবাটি নিচ্ছেন, সেটি আদৌ পয়সা দিয়ে কেনা নাকি অপারেটরের ইচ্ছা-অনিচ্ছা ও মেজাজমর্জির ওপর নির্ভরশীল। আর যদি তা দাতব্যসেবা না হয়, তাহলে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে গ্রাহকদের অনুরোধ জরিমানা নয়, আমরা অপারেটর সেবার মানোন্নয়ন চাই।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০