ছাগলের বিকল্প হিসেবে যশোরে জনপ্রিয় হচ্ছে গাড়ল বা ভেড়া পালন। গাড়ল লালন-পালন করে অনেকে আজ স্বাবলম্বী। আশা করা যায়, ভবিষ্যতে ছাগলের বিকল্প হিসেবে অধিক হারে গাড়ল পালন করবেন খামারিরা।
গাড়ল পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন যশোরের চৌগাছা উপজেলার হিজলী গ্রামের ঈমান আলী। অভাব-অনটনে সংসার চলত তার। গাড়ল তার সব দুঃখ-কষ্ট দূর করেছে। তিনি জানান, গাড়ল সব ধরনের খাবার খায়। এদের অসুখ-বিসুখ হয় না বললে চলে। এরা বছরে তিনবার বাচ্চা প্রসব করে। একবারে তিন থেকে চারটি বাচ্চা দেয়। দেড় থেকে দুইমাস বয়সী বাচ্চা আড়াই থেকে তিন হাজার টাকায় বিক্রি করা যায়। ফলে কম সময়ে অল্প পুঁজিতে লাভবান হওয়া যায়।
ঈমান আলী ২০১০ সালে মাত্র পাঁচটি গাড়ল পালন করেন। পাঁচ মাস পর এরা তিনটি খাসি ও চারটি বকরি বাচ্চা দেয়। সে থেকে প্রায় প্রতি মাসে আট থেকে ১০ হাজার টাকার গাড়ল বিক্রি করে আসছেন। এখন তার খামারে গাড়লের সংখ্যা ৩৭। তিনি গাড়লের জন্য আলাদা ঘর, নিরাপত্তা প্রাচীর করেছেন।
গাড়ল পালনে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করার প্রয়োজন পড়ে না। ঈমান আলী সকালে ক্ষেত-খামারে কাজ করেন, বিকালে গাড়লের যত্ন নেন। তিনি বলেন, গাড়ল পালন করে বছরে এক থেকে দেড় লাখ টাকা বাড়তি আয় করা সম্ভব।
চৌগাছা পৌরসভার কর নির্ধারক সিংহঝুলী গ্রামের শাহিনুর রহমান শাহিন জানান, আমার শাশুড়ি একটি গাড়ল উপহার দেন কয়েক মাস আগে। আরও একটি হাট থেকে কিনেছি। এদের জন্য বাড়তি খাবারের আয়োজন করা লাগে না। লতাপাতায় পেট ভরে যায় এদের।
চৌগাছা উপজেলা প্রাণিসম্পদ দফতর সূত্রে জানা যায়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরের এক জরিপের তথ্য অনুযায়ী চৌগাছা উপজেলার ফুলসারা গ্রামের লিটু মিয়া ও হুমায়ুন কবির, কেসমতখানপুর গ্রামের নূর ইসলাম, বড়খানপুরের ইসলাম সর্দার, সোহেল রানা, আলী হোসেন, নূর উদ্দীন, জাকির হোসেন ও শিমুল হোসেন, আজমতপুরের সেলিনা খাতুন ও মুকন্দপুরের আমিরুল ইসলাম গাড়ল পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছে।
চৌগাছা উপজেলার গাড়ল রাজধানীসহ চট্টগ্রাম, বরিশাল, রাজবাড়ি, সিলেট প্রভৃতি জেলায় বিক্রি হচ্ছে। জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক মোক্তার হোসেন বলেন, গাড়ল হচ্ছে একটি উপজাত। এটি মেহেরপুরে প্রথম পালন করা হয়। অল্পসময়ের মধ্যে এর ওজন ৩০ থেকে ৩৫ কেজি হয়ে থাকে। এর মাংস বেশ পুষ্টিকর। তিনি আরও বলেন, আগামীদিনে ছাগলের বিকল্প হিসেবে গাড়ল পালনের সম্ভাবনা রয়েছে।
মহসিন আলী