নিজস্ব প্রতিবেদক: আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বিশ্বব্যাংক আইনের ঊর্ধ্বে নয়। তবে চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকার বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে না। কিন্তু যারা ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তারা বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারেন কি-না, সে বিষয়ে চাইলে আইনি পরামর্শ নিতে পারেন।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে গতকাল ল’ রিপোর্টার্স ফোরাম আয়োজিত মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধে ড. ইউনূস জড়িত। পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছিল। এ ষড়যন্ত্র কাউকে দুর্নীতিবাজ হিসেবে আখ্যা দেওয়ার জন্য ছিল না। এটি ছিল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে।
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘কানাডার আদালত পদ্মা সেতু দুর্নীতি মামলাটি খারিজ করে দিয়েছেন দুটি কারণে। একটি হলো, অন মেরিট আর অন্যটি হলো অন টেকনিক্যাল গ্রাউন্ড। আদালত অন মেরিট যেটা বলেছে, এ মামলায় যা বক্তব্য, সেগুলো হচ্ছে গুজবনির্ভর এবং এর কোনো প্রমাণ নেই। দ্বিতীয় কারণটি হলো টেকনিক্যাল, ওয়্যার ট্যাপিংয়ের মাধ্যমেও কোনো তথ্য আসেনি, যেটা একটি মামলাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো হতে পারে।’
উল্লেখ্য, ২০১২ সালে পদ্মা সেতু দুর্নীতি ষড়যন্ত্রের মামলায় তিনি তখন প্রধান আইন উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
পত্রিকায় আসা খবরের মাধ্যমে কীভাবে ২০১২ সালে দুর্নীতির মামলাটি হলোÑউল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘অনুসন্ধান করা যখন শুরু করলো, তখন বিশ্বব্যাংক বললো, আমাদের কাছেও তথ্য-উপাত্ত রয়েছে। আমরা সে তথ্য দেব। এ নিয়ে তোমাদের (দুদক) একটি মামলা করতে হবে। বলা হলো, এ দুর্নীতির ষড়যন্ত্রে যারা জড়িত, তারা হচ্ছেন তখনকার যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেন ও যোগাযোগ সচিব, অন্য যারা এ মন্ত্রণালয়ে আছেন তারা এবং যারা এই কনট্রাক্ট নেওয়ার চেষ্টা করছেন, তারা।’
তারা নানা শর্ত দেওয়ায় দুদকের পক্ষ থেকে মামলা না করার সিদ্ধান্ত নিলে বিশ্বব্যাংক জানায়, এটা যদি না হয়, তবে আমরা (বিশ্বব্যাংক কর্তৃপক্ষ) ঋণ দেব না। দুদক চেয়ারম্যান, দুদকের পরবর্তী চেয়ারম্যান বদিউজ্জামান ও কমিশনার সাহাবুদ্দিন আহমেদ চুপ্পুর উপস্থিতিতে সেই মিটিংয়ে তখন আমি বললাম, বাংলাদেশ হলো একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ। আমরা আমাদের স্বাধীনতা কারও হাতে তুলে দিতে রাজি নই।
কীভাবে আবুল হোসেনকে জড়ানো হলো, সে বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টের চিফ প্রসিকিউটর ওকামপো, হংকংয়ের অ্যান্টি করাপশন কমিশনের একজন মেম্বার এবং স্কার্ডিয়ানের একজন তদন্তকারী ২০১২ সালের ডিসেম্বরে এসেই বলেছেন, আবুল হোসেনকে আসামি করতে হবে। আমরা বললাম, তথ্য-উপাত্ত যদি না পাই, তাহলে আমরা কীভাবে একজনকে আসামি করবো? তখন তারা মামলার এফআইআরে আবুল হোসেনের নাম দিতে বললেন। তাদের একজন এমনও বললেন, এফআইআরে তার নাম দিয়ে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিলেই সব বেরিয়ে যাবে।
এতদিন কথাগুলো সামনে না আনার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, দুদকের কাছে সেই প্রিলিমিনারি হেয়ারিংয়ে যারা সাক্ষী দিয়েছেন, তার সাক্ষ্য-তথ্য রয়েছে। সেই সাক্ষীর সাক্ষ্য আমি পড়েছি। এমনকি যিনি রাজসাক্ষী হয়েছিলেন, তিনি যাদের নাম বললেন (যাদের বিরুদ্ধে যড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছিল) তাদের বিরুদ্ধে কিছুই বলেননি। এমনকি এখানে যে দুর্নীতির ষড়যন্ত্র হয়েছে, সেটিও প্রমাণ করতে পারেননি। এরপরই নতুন করে কিছু আসামি যুক্ত করার চেষ্টা চলেছে। আমরা কোনো কথা বলতে পারিনি। কারণ কানাডার সুপিরিয়র কোর্ট বিষয়টি পাবলিসিটি ব্যান্ডের আদেশ দিয়েছিল। পত্রপত্রিকায় এ বিষয়ে খবর প্রকাশ-প্রচার করা যাবে না বলায় আমরা সে সময় তদন্তের স্বার্থে চুপ ছিলাম।
Add Comment