কুম্ভমেলা ’১৯

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের একটি বিশাল ধর্মীয় সম্মেলন কুম্ভমেলা। হিন্দুধর্মের মহামিলনের মেলা। কুম্ভমেলা উপলক্ষে ধর্মপ্রাণ হিন্দুরা তীর্থস্নান করতে আসে। ইউনেস্কোর তালিকায় এটি বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ ধর্মীয় জমায়েত হিসেবে স্বীকৃত।
হিন্দু পুরাণমতে, সমুদ্র মন্থন করে অমৃত কুম্ভের হাঁড়ি পাওয়ার পর দেবতারা যখন সেই হাঁড়ি নিয়ে পালাচ্ছিলেন, তখন হাঁড়ি থেকে কয়েক ফোঁটা অমৃত পড়েছিল যে চার জায়গায়, সেখানে বসে কুম্ভমেলা।
কুম্ভমেলা অনুষ্ঠিত হয় চারটি স্থান প্রয়াগ, হরিদ্বার, উজ্জ্বয়িনী ও নাসিকে। প্রতি ১২ বছর অন্তর এ চারটি স্থানে পূর্ণ কুম্ভমেলা বসে। প্রতি ছয় বছর অন্তর অনুষ্ঠিত হয় অর্ধ কুম্ভমেলা। হিসাব করলে দেখা যায়, প্রতি তিন বছর অন্তর চার জায়গার কোথাও না কোথাও কুম্ভমেলা বসছে, তা সে পূর্ণই হোক বা অর্ধ। ১২টি পূর্ণকুম্ভ অর্থাৎ প্রতি ১৪৪ বছর অন্তর প্রয়াগে আয়োজিত হয় মহাকুম্ভ।
২০১৯ সালের অর্ধ কুম্ভমেলা চলছে প্রয়াগে। গঙ্গা, যমুনা ও সরস্বতী নদীর সঙ্গমক্ষেত্র এই প্রয়াগ। এই ত্রিবেণীতে স্নানের অনেক পুণ্যফল থাকে। বোঝাই যায়, কুম্ভমেলা নদীকেন্দ্রিক। প্রতি মেলাস্থলের সঙ্গে এক বা একাধিক নদী জড়িয়ে আছে। কারণ বিশেষ বিশেষ তিথিতে পুণ্যস্নানই হলো কুম্ভমেলার প্রধান অঙ্গ। উল্লেখ্য, মেলার বিশেষ বিশেষ পুণ্য তিথির স্নানকে ‘শাহিস্নান’ বলা হয়।
১৫ জানুয়ারি শুরু হয়েছে মেলা। চলবে ৪ মার্চ পর্যন্ত। প্রথম ‘শাহিস্নান’ মকরসংক্রান্তি তিথি, অর্থাৎ গত ৩০ পৌষ বা ১৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়েছে। পৌষের সংক্রান্তিতে সূর্য যখন উত্তরায়ণের মকর রাশিতে যায়, সেই সময়ে এই স্নান অনুষ্ঠিত হয়। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ তিথি।
২০১৯ সালের অর্ধকুম্ভের গুরুত্বপূর্ণ স্নান হলো তৃতীয় শাহিস্নান। এদিন মৌনী অমাবস্যা। প্রয়াগে ছয়টি শাহিস্নানের দিন রয়েছে। তীর্থরাজ প্রয়াগে অর্ধকুম্ভ স্নান করা হলে সহস্রবার অশ্বমেধ যজ্ঞ করলে যে ফল লাভ হয়, তার সমান ফল লাভ হয়।

অর্ধকুম্ভ পর্বের যোগ ও স্নানের পরবর্তী সময়সূচি
চতুর্থ শাহিস্নান: বসন্ত পঞ্চমী।
রোববার, ২৬ মাঘ (১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯)
পঞ্চম শাহিস্নান: মাঘী পূর্ণিমা।
মঙ্গলবার, ৩০ মাঘ (১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯)
ষষ্ঠ শাহিস্নান: মহা শিবরাত্রি।
সোমবার, ১৯ ফাল্গ–ন (৪ মার্চ, ২০১৯)
এবারের কুম্ভমেলার বাজেট প্রায় ৭৫০ কোটি রুপি। সংশ্লিষ্টদের মতে, এটিই সবচেয়ে বড় বাজেটের কুম্ভমেলা। এর আগে ২০১৬ সালে উজ্জয়িনীতে মহাকুম্ভ অনুষ্ঠিত হয়, খরচ হয়েছিল ১০০ কোটি রুপি। এবারের বিশেষ আকর্ষণ এর জাদুঘর। এর নকশা করেছেন সুপারহিট তামিল সিনেমা বাহুবলীর সেট ডিজাইনার। ১৫ একর জমিজুড়ে তৈরি করা হয়েছে জাদুঘরটি। এর পুরোটা জুড়ে থাকবে ভারতীয় সংস্কৃতি।
সর্বজনীন মেলা
আনন্দবাজার পত্রিকার তরফে জানা যায়, রাতের কুম্ভের আঁধার ঘোচান উত্তরপ্রদেশের মুজফ্ফরনগরের মুহাম্মদ মেহমুদ। তার হাত ধরে সেজে ওঠে রাতের কুম্ভÑগোটা এলাকা আলোয় ভরিয়ে দেন তিনি। ‘মোল্লাজি লাইটওয়ালে’ নামে তিনি সবার কাছে পরিচিত।
৭৬ বছর বয়সি মোল্লাজি পেশায় ইলেকট্রিশিয়ান। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে তিনি মেলায় আসেন। ৩০ বছর ধরে এটাই তার রুটিন। হিন্দু সাধুসন্তদের প্রায় সবার সঙ্গে রয়েছে তার প্রগাঢ় বন্ধুত্ব। স্থানীয়দের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা তীর্থযাত্রীদের অনেকে মেলায় এসে খোঁজ করেন মোল্লাজি লাইটওয়ালের। মেলায় এসে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন তিনি। কখনও অসুবিধা হয়নি তার। তার মতে, কুম্ভমেলা সর্বজনীন। এটি একটি সহজ জায়গা, সবার জন্য উম্মুক্ত।

রাহুল সরকার

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০