‘ঐতিহাসিক’ টেস্ট শেষে মিরাজের উপলব্ধি

ক্রীড়া প্রতিবেদক: প্রথম ইনিংসে ভারতের ৬৮৭ রানের পাহাড়সম স্কোরের পর কেউ হয়তো চিন্তাই করেননি হায়দরাবাদ টেস্ট পঞ্চম দিনে গড়াচ্ছে। শেষ পর্যন্ত ওই টেস্ট শুধু পঞ্চম দিনে নয়, শেষ হয়েছে ঘণ্টা দুই আগে। এজন্য মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসানের পাশাপাশি অবদান ছিল মেহেদী হাসান মিরাজেরও। দুই ইনিংসেই ব্যাট হাতে দারুণ খেলেছিলেন এ ডানহাতি। একসময় ম্যাচ ড্র করার সামান্য স্বপ্ন দেখা দিয়েছিল তার ব্যাটে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ২০৮ রানে হারতে হয়েছে সফরকারীদের। তারপরও খুব একটা খারাপ হয়নি প্রথমবারের মতো ভারত সফরে যাওয়া টাইগারদের ফল। স্বাভাবিকভাবেই খুশি মিরাজ। তার এই খুশির মাত্রা আরও বেড়ে যেত যদি না দল জিততো অথবা ড্র করতো।

ভারত সফর শেষে গতকাল বিকালে ঢাকায় ফিরেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। বিমানবন্দরে পৌঁছে ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজে পাওয়া না পাওয়া নিয়ে সংবাদ মাধ্যমের সামনে কথা বলেছেন মিরাজ। ‘সবচেয়ে ভালো লাগতো দল যদি ভালো করতো। তারপরও আমরা সবাই ভালো ক্রিকেট খেলেছি। এটা আমাদের খুব ভালো সফর ছিল। আমরা ভারতের মাটিতে কখনও খেলতে যাইনি। ওদের বিপক্ষে খেলে আমার ভালো একটি অভিজ্ঞতাও হয়েছে। কেননা ওরা বিশ্বের এক নম্বর টেস্ট দল। ওদের বিপক্ষে খেলেতে পেরে ভালো লেগেছে এবং আমি অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। এটা ভবিষ্যতে আমার কাজে লাগবে।’

বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকে একজন ব্যাটিং অলরাউন্ডার হিসেবেই পরিচিত মিরাজ। কিন্তু গত বছর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক হওয়ার পর থেকে তিনি যেন ভুলে গিয়েছিলেন ব্যাটিং। বনে যান শুধু একজন বোলার হিসেবে। নিউজিল্যান্ড সফরেরও ছিল একই চিত্র। তবে ভারত সফরে যাওয়ার আগে এ ডানহাতি সংবাদ মাধ্যমকে বলে গিয়েছিলেন, বোলিংয়ের পাশাপাশি এবার ব্যাটিংয়েও কিছু একটা করিয়ে দেখাতে চাই। দেখা যাক কী হয়। শেষ পর্যন্ত এই ‘কী’ যেন আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিয়েছে তরুণ এ অলরাউন্ডারকে। হায়দরাবাদ টেস্টের প্রথম ইনিংসে দলের প্রয়োজনীয় মুহূর্তে ব্যাট হাতে খেললেন ৫১ রানের দারুণ ইনিংস। মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে কাটিয়েও দেন পুরো একটা সেশন। ওই ইনিংসে বল হাতে নেন ২ উইকেট। প্রথম ইনিংসটি ব্যাটিং নিয়ে বলতে গিয়ে অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে মিরাজ বলেন, ‘মুশফিক ভাই ওই ইনিংসে আমাকে প্রতিটি অবস্থায় এবং প্রতিটি বলে সাহায্য করেছেন; কীভাবে ভালো খেলা যায়। তাই আমি মনে করি, আমার ওই ইনিংসে তার অবদান কোনো অংশেই কম নয়।’

এদিকে দ্বিতীয় ইনিংসেও মিরাজ দেখেছেন তার ব্যাটিং প্রতিভা। ৭৫ বলে করেন ২৩ রান। ভারতের বিপক্ষে দুই ইনিংসে ব্যাটিং ভালো করতে পেরে নিজেকে ফিরে পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন মিরাজ। ‘আমি ব্যাটিং নিয়ে কিছুটা হতাশ ছিলাম, কিন্তু ভারত গিয়ে মনে হয়েছে, আমি আগের মতোই আমার ছন্দ পেয়েছি। এখন আমি বুঝতে পারছি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কীভাবে খেলতে হবে এবং ওখানে কীভাবে ব্যাটিং করতে হবে। চেষ্টা করি আরও তাড়াতাড়ি পরিপূর্ণ রূপে সামনে এগিয়ে যেতে।’

গত কয়েকটি সিরিজেই বাংলাদেশ দলের চিন্তার কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে বাজে ফিল্ডিং। ভারত সফরের একমাত্র টেস্টেও দেখা গেছে, যা প্রভাব ফেলেছে ম্যাচের ফলাফলেও। তবে মিরাজ এ ব্যাপারটিকে দেখতে চান খেলার অংশ হিসেবে। ‘মিস ফিল্ডিং ক্রিকেটেরই অংশ। কেউ ইচ্ছে করে মিস করতে চায় না, হয়ে যায়। কিন্তু তারপরও আমার কাছে মনে হয় আমরা সবাই ভালো ক্রিকেট খেলেছি। আশা করছি, সামনে আরও ভালো ক্রিকেট খেলবো।’

গতকাল বাংলাদেশ দলের সব ক্রিকেটার অবশ্য দেশে ফেরেননি। সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ কলকাতা থেকে দুবাই গেছেন পাকিস্তান সুপার লিগে অংশ নিতে। এছাড়া মুশফিকুর রহিমসহ কয়েকজন রয়েছেন কলকাতায়। কয়েকদিন পরই দেশে ফিরবেন তারা। তবে দম ফেলার সময় নেই টাইগারদের। আগামী মাসেই শ্রীলঙ্কা সফর। তাই ১০ দিনের ছুটি শেষে আবারও নেমে পড়তে হবে ব্যাট-বলের অনুশীলনে। সম্ভবত চলতি মাসের ২৭ কিংবা ২৮ তারিখে শ্রীলঙ্কার উদ্দেশে দেশ ছাড়বেন মাশরাফি-মুশফিকরা।