দেশের পুঁজিবাজার অর্থনীতির উন্নয়নের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চলে না। বরং দেখা যায় বিপরীত চিত্র। ২০১০ সালে পুঁজিবাজার থেকে আইপিও’র মাধ্যমে তিন হাজার ৫০ কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়েছিল। ৯ বছর পর ২০১৮ সালে পুঁজিবাজার থেকে মাত্র ৬৩০ কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। যদি ২০১০ সালে পুঁজিবাজার থেকে তিন হাজার ৫০ কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়। তাহলে ৯ বছর পর দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন অনুযায়ী, পুঁজিবাজারের টার্নওভার হওয়ার কথা ১০ হাজার কোটি টাকা। সেটি না হয়ে আরও পাঁচগুণ কমে গেছে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আমার স্টক ডটকমের সিইও আলী জাহাঙ্গীর, একাত্তর টেলিভিশনের
সিনিয়র বিজনেস এডিটর আজিজুল ইসলাম, আইসিএবির কাউন্সিল মেম্বার মো. শাহাদাৎ হোসেন।
আলী জাহাঙ্গীর বলেন, বর্তমানে বাজারের এ অবস্থার মূল কারণ ফান্ডের ঘাটতি। ফান্ডের ঘাটতি আগেও ছিল, এখনও রয়েছে। এটি নিশ্চিত বলা যায়। তবে সামনে যখন পুঁজিবাজার ভালো হবে এবং শেয়ারের দাম বৃদ্ধি পাবে তখন ফান্ডপ্রবাহ বেড়ে যাবে।
কাজী আজিজুল ইসলাম বলেন, দেশের পুঁজিবাজার অর্থনীতির উন্নয়নের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চলে না। বরং দেখা যায় বিপরীত চিত্র। অতীতে দেখা গেছে যখন দেশের অর্থনীতি কমেছে তখন বাজার গতিশীল ছিল। আবার যখন দেশের অর্থনীতি বাড়ছে তখন বাজার নি¤œমুখী আচরণ করছে। ২০১০ সালে পুঁজিবাজার থেকে আইপিও’র মাধ্যমে তিন হাজার ৫০ কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। আর ৯ বছর পর ২০১৮ সালে পুঁজিবাজার থেকে মাত্র ৬৩০ কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। কথা হচ্ছে, ২০১০ সালে দেশের অর্থনীতি কেমন ছিল এবং দেশি-বিদেশি কয়টি কোম্পানি ছিল। যদি ২০১০ সালে পুঁজিবাজার থেকে তিন হাজার ৫০ কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়। তাহলে ৯ বছর পর দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন অনুযায়ী পুঁজিবাজারের টার্নওভার হওয়ার কথা ১০ হাজার কোটি টাকা। সেটি না হয়ে আরও পাঁচগুণ কমে গেছে। আসলে এ আচরণ বিশ্বের অন্য কোনো পুঁজিবাজারে দেখা যায় না।
মো. শাহাদাৎ হোসেন বলেন, বিনিয়োগকারীদের কোম্পানির হিসাব ও নিরীক্ষা পেশা নিয়ে ভুল ধারণা রয়েছে। সাধারণত একজন অডিটর কোন কোম্পানির হিসাব অডিট করেন ওই কোম্পানি উচ্চ কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী। সে অনুযায়ী অডিটররা অডিট করে। কারণ কোম্পানির কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য ব্যতিত অডিটরা কিছু করতে পারে না। যদি এখানে কোম্পানির কর্মকর্তারা তথ্য গোপন রাখেন তাহলে অডিটদের কিছু করার নেই। কোম্পানির সঠিক তথ্য দেওয়ার দায়িত্ব ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত কর্মকর্তাদের। এখানে মূল বিষয় হচ্ছে নৈতিকতা।
তিনি আরও বলেন, কোম্পানির চারটি প্রান্তিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর মধ্যে একটি নিরীক্ষিত আর তিনটি অনিরীক্ষিত। প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় প্রান্তিকে যে অনিরীক্ষিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ অনিরীক্ষিত প্রতিবেদনে অনেক অসচ্ছতা থাকে। এটি কোম্পানির নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় প্রস্তুত করা হয়। তারা এখানে ইচ্ছেমতো প্রতিবেদন তৈরি করে ও প্রকাশ করে। যদি প্রথম প্রান্তিক থেকে দ্বিতীয় প্রান্তিকে বড় কোনো পরিবর্তন হয় তাহলে একটি রিপোর্ট দিতে হয়। কিন্তু সেটি সঠিকভাবে না করে তাদের ইচ্ছামতো রিপোর্ট তৈরি করে দেয়। ওই রিপোর্ট কতটুকু গ্রহণযোগ্য সেটি দেখার বিষয়।
শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ