চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রথমবারের মতো শুরু হয়েছে উচ্চমূল্যের পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ সবজি ব্রোকলির চাষ। অন্য ফসলের চেয়ে কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় ব্রোকলি চাষে ঝুঁকছেন জেলার অনেক চাষি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ক্যানসার প্রতিরোধী এ সবজি চাষে ফিরবে কৃষকের ভাগ্য। আর বাণিজ্যিকভাবে সফলতা পাওয়ায় উৎপাদন পর্যায়ে ‘ব্রোকলি’ চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠঠে। এর সম্প্রসারণে উদ্যোগ নেবে কৃষি বিভাগ।
ফুলকপির মতো দেখতে এ সবুজ সবজি ‘ব্রোকলি’। উন্নত বিশ্বে এটি ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হলেও বাংলাদেশের অন্য জেলার মতো চাঁপাইনবাবগঞ্জে রয়েছে অপ্রচলিত সবজির তালিকায়। তবে অত্যন্ত লাভজনক এই আবাদ ধীরে হলেও সম্প্রসারিত হচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে। ক্যানসার প্রতিরোধক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় ভোক্তাপর্যায়ে এর চাহিদাও বাড়ছে।
দুই বছর আগেও এ সবজি চাষে কৃষকদের তেমন আগ্রহ ছিল না। পরে স্থানীয় কৃষি বিভাগের উদ্যোগে গত দু’বছর পরীক্ষামূলকভাবে চাষের পর মেলে কাক্সিক্ষত সাফল্য। এ বছর বাণিজ্যিকভাবে চাঁপাইনবাবগঞ্জে তিন হেক্টর জমিতে ব্রোকলি চাষ করা হয়েছে।
শ্যামপুরের ব্রোকলিচাষি সাইফুল ইসলাম বলেন, ব্রোকলির বাজার নিয়ে প্রথমদিকে সন্দেহ ছিল। আমি এক বিঘা জমিতে এ সবজি চাষ করেছি। এক বিঘা জমিতে চার হাজার চারা লাগিয়েছিলাম। চাহিদা বাড়ায় ও ভালো দাম পাওয়ায় আগামীতে চাষের পরিমাণ বাড়াব।
কামরুজ্জামান নামের আরেক চাষি বলেন, চারা তৈরি থেকে মাত্র ৯০ দিনের মধ্যে উত্তোলনযোগ্য সবজি এটি। রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হওয়ায় এটি অনেকটাই কীটনাশকমুক্ত। অন্যান্য কপি গোত্রের মতোই এর চাষাবাদ পদ্ধতি সহজ। বিঘাপ্রতি উৎপাদন খরচ ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। বিক্রি করে আয় করা যায় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা।
স্ট্রবেরি, বিভিন্ন জাতের কুল ও পেয়ারা চাষ করে সফলতা পাওয়ার পর এবার তিন বিঘা জমিতে বাণিজ্যিকভাবে ব্রোকলির চাষ করেছেন কৃষক নজিবুর রহমান। তিনি বলেন, প্রথমে ব্রোকলি চাষ করে কাক্সিক্ষত সফলতা পাইনি। তবু হাল ছাড়িনি। এ সময় পাশে এসে দাঁড়ায় উপজেলা কৃষি বিভাগ এবং সফলতার মুখ দেখি।
আবদুল সামাদ বলেন, নজিবুর রহমানের ব্রোকলি চাষ দেখে কৃষকের মাঝে সম্ভাবনাময় নতুন সবজি হিসেবে সাড়া পড়েছে ‘ব্রোকলি’ চাষের। চাষিরা বলছেন, ব্রোকলির চাহিদা থাকায় ও দাম ভালো পাওয়ায় আগামীতে জেলায় এ সবজি চাষে বিপ্লব ঘটবে। ফিরবে কৃষকের ভাগ্যও।
শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ এসএম আমিনুজ্জামান বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের মাটি ও আবহাওয়া ব্রোকলি চাষের জন্য উপযোগী। ফলে জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় ‘ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল টেকনোলজি
প্রোগাম-২ (এনএটিপি-২)’-এর আওতায় স্থানীয় কৃষি বিভাগ এ ফসল উৎপাদন ও প্রদর্শনীর উদ্যোগ নেয়। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, উচ্চমূল্যের পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ ও ক্যানসার প্রতিরোধী ‘ব্রোকলি’ একটি নিরাপদ সবজি। নতুন সবজি হিসেবে এর বাজারজাতকরণেও নেওয়া হয়েছে উদ্যোগ।
শিবগঞ্জ উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা গোলাম আজম কনক বলেন, শিবগঞ্জ উপজেলার সহযোগিতায় কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে এই ব্রোকলি চাষ শুরু করা হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষি মঞ্জুরুল হুদা বলেন, ব্রোকলি চাষের জন্য কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে।
বর্তমানে বাজারে প্রতিটি ‘ব্রোকলি’ বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকায়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্রোকলি যে শুধুই স্বাদ, বর্ণ ও গন্ধে অনন্য তা নয়, এর রয়েছে বহুবিধ পুষ্টি উপাদান, যা মানুষের দেহকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।
জহুরুল ইসলাম জহির, চাঁপাইনবাবগঞ্জ