‘প্রসাধনপণ্যে শুল্ক ছাড়ের সুবিধা পাচ্ছে না ভোক্তা’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে। এতে বলা হয়েছে, বিভিন্ন প্রসাধনপণ্য আমদানিতে জনস্বার্থে শুল্ক কমানো হলেও খুচরা পর্যায়ে দাম কমানো হয়নি। ফলে একদিকে ভোক্তারা বঞ্চিত হচ্ছেন, অন্যদিকে অতিরিক্ত মুনাফা তুলে নিচ্ছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। শুল্ক কমানোয় ভোক্তারাই যদি উপকৃত না হন, তাহলে ওটা কমিয়ে লাভ কী? এতে তো দেশও উপকৃত হচ্ছে না, বরং অতিরিক্ত অর্থ চলে যাচ্ছে গুটিকতক ব্যক্তির কাছে!
প্রতি বছর বাজেট পেশের আগে অর্থমন্ত্রী বিভিন্ন গোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনায় বসেন। সবারই দাবি থাকে, তাদের আমদানি করা পণ্যে শুল্ক কমাতে হবে, ছাড় দিতে কিংবা ক্ষেত্রবিশেষে শুল্ক তুলে নিতে হবে। একটি রাষ্ট্রে সবাই যদি এ রকম দাবি জানাতে থাকে, তাহলে রাষ্ট্র কীভাবে চলবে? তারপরও গুরুত্ব অনুসারে বিভিন্ন পণ্যে প্রণোদনা দিতে শুল্কে ছাড় দেওয়া হয়। একসময় কম্পিউটার পণ্যে শুল্ক মওকুফ করে দেওয়ায় আজ বাংলাদেশ আউটসোর্সিং ও সফটওয়্যার জগতে একটি পর্যায়ে আসতে পেরেছে। যদিও কম্পিউটারের সঙ্গে প্রসাধনপণ্যের তুলনা চলে না, কিন্তু নিশ্চয়ই নানা বিবেচনায় শুল্ক কমানো হয়েছিল। আমদানিকারকরা যে পরিমাণ শুল্ক কম দিচ্ছেন, নিয়মানুযায়ী ওই পরিমাণ ছাড় তারা পাইকারি বিক্রেতাদের দিতে বাধ্য। সেটি ঘটলে খুচরা বিক্রেতারাও দাম কম রাখতে পারতো। অনুসন্ধানে দেখা যায়, আমদানিকারকরাই পূর্বমূল্য বহাল রেখেছেন। এ বিষয়ে বাংলাদেশ কসমেটিকস অ্যান্ড টয়লেট্রিজ ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব জানান, যতটুকু ছাড় দেওয়া হয়েছে তা খুবই নগণ্য। আমদানিকারকদের পণ্য আনা-নেওয়ার খরচ ক্রমাগত বাড়ছে বলেও তিনি দাবি করেন। তাহলে তো বলতে হয়, শুল্ক ছাড় দেওয়াই উচিত হয়নি। শুল্ক ছাড়ের বড় কারণ হচ্ছে সাধারণ মানুষ যাতে কম দামে জিনিস কিনতে পারে, তা নিশ্চিত করা। সেটি না হলে ছাড় দিয়ে লাভ কী! যেসব পণ্যে শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়, সেগুলোতে পরবর্তী সময়ে দাম কমানো হয় কি না, তা দেখাও সরকারের দায়িত্ব। সে দায়িত্ব কি পালিত হচ্ছে?
শুধু প্রসাধনপণ্যে নয়, আমরা ইন্টারনেটের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা দেখেছি। সরকার মাঝেমধ্যেই ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের দাম কমায়, কিন্তু গ্রাহক পর্যায়ে দাম রয়ে যায় আগের মতো। আইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলোকে জিজ্ঞাসা করলে এটার দাম বেড়েছে, ওটার দাম বেড়েছে ইত্যাদি বলা হয়। তাহলে ব্যান্ডউইথের দাম কিংবা শুল্কে ছাড় কেন? বুঝতে অসুবিধা হয় না, বাজার মনিটরিংয়ে অদক্ষতার কারণেই সংশ্লিষ্ট আমদানিকারক বা ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত লাভ বুঝে নিচ্ছেন। সরকার এসব ক্ষেত্রে সদিচ্ছার পরিচয় দিলেও তার সুফল সাধারণ মানুষ ভোগ করতে পারছে না। সরকারকেই এখন নতুনভাবে পর্যালোচনা করতে হবে, কোন পণ্যে শুল্কছাড়ের সুবিধা দিলে তার সুফল ভোক্তাসাধারণ পায়, কোনটিতে পায় না। সে অনুসারেই পরবর্তী বাজেটে তার প্রতিফলন থাকা উচিত।
Add Comment