বাজারের মূল সমস্যা কোম্পানির পরিচালকদের শেয়ার ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িয়ে পড়া। এর ফলে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এক সময়ে কোম্পানির মালিক বা পরিচালকরা ব্যস্ত থাকতেন কোম্পানির উৎপাদন বৃদ্ধি নিয়ে। কীভাবে উৎপাদন বাড়িয়ে লাভ করা যায় এবং অংশীদারদের কী পরিমাণ লভ্যাংশ দেওয়া যায় তা নিয়ে। কিন্তু বিগত পাঁচ থেকে ছয় বছর ধরে কোম্পানির মালিকরা শেয়ার ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছেন। তারা শেয়ার ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন উপায়ে ওই কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়াতে ব্যস্ত থাকেন। আবার নামে-বেনামে কেনাবেচা করে শেয়ারের দাম কমিয়ে দেন। যেটা বিএসইসি’র আইনে অবৈধ। কিন্তু কীভাবে কোম্পানির পরিচালকরা শেয়ার ব্যবসায় জড়িত হচ্ছেন সেখানেই প্রশ্ন? গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দ্য ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সিনিয়র নিউজ কনসালট্যান্ট রায়হান এম চৌধুরী এবং বালি সিকিউরিটিজ লিমিটেডের পরিচালক সৈয়দ সিরাজ-উদ-দৌলা।
রায়হান এম চৌধুরী বলেন, জানুয়ারির শেষের দিক থেকে বাজার তেমন ভালো অবস্থানে নেই। একদিকে সূচক কমছে, অন্যদিকে দৈনিক লেনদেন কমে যাচ্ছে। আবার বাজারে ফান্ডের অভাবের পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের আস্থায় অনেক ঘাটতি রয়েছে। আসলে বাজার দেখভাল করার জন্য নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের যে সদিচ্ছা থাকার কথা সেটি দেখা যাচ্ছে না। বিশেষ করে সরকারের বিভিন্ন মহল ডিএসই, সিএসই, বিএসইসি এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সদিচ্ছার অভাব প্রকট। বিগত বছরগুলোয় প্রতিষ্ঠানগুলোর অনিয়মের কারণে বিএসইসি যেসব তথ্য অনুসন্ধান করেছে, তা সঠিকভাবে করা হয়েছে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বিএসইসিকে আরও গভীরে গিয়ে অনুসন্ধান করা উচিত। কারণ পুঁজিবাজারে বিভিন্ন ধরনের কারসাজি হয়। শুধু যে এদেশের পুঁজিবাজারে ম্যানোপুলেশন বা কারসাজি হয় তা কিন্তু নয়। এটি সব দেশের পুঁজিবাজারে হয়। কথা হচ্ছে সেটি নিয়ন্ত্রণ করতে যদি সঠিকভাবে দায়িত্বপালন না করা হয়। তাহলে বাজারে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম ঘটতে থাকবে। ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এবং বাজার গতিশীল রাখা যাবে না। আবার বাজারের কয়েকটি মূল সমস্যার মধ্যে বড় হচ্ছে কোম্পানির উদ্যোক্তাদের শেয়ার ব্যবসায় জড়িয়ে পড়া। নিয়ন্ত্রক সংস্থা এই বিষয়গুলো হয়তো চিহ্নিত করতে
পেরেছেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ সেভাবে ব্যবস্থা নিচ্ছে না বা নিতে পারছে না।
তিনি আরও বলেন, বাজারের আরেকটি সমস্যা হচ্ছে আইপিও। বাজারের আইপিও’র মাধ্যমে যেসব কোম্পানি আসে সেগুলোর বেশিরভাগই স্বল্প মূলধনি। পরে ওইসব কোম্পানির বাজারে টিকে থাকতে পারে না। তারপরও ওইসব কোম্পানি বাজারে আসার জন্য অনুমোদন পাচ্ছে। এক্ষেত্রে বিএসইসি, ডিএসইকে ভেবে দেখতে হবে।
সিরাজউদৌলা বলেন, বাজারের মূল সমস্যা কোম্পানির পরিচালকদের শেয়ার ব্যবসায় প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িয়ে পড়া। এর ফলে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এক সময়ে কোম্পানির মালিক বা পরিচালকরা ব্যস্ত থাকতেন উৎপাদন বৃদ্ধি নিয়ে। কীভাবে উৎপাদন বাড়িয়ে লাভ করা যায় এবং অংশীদারদের কী পরিমাণ লভ্যাংশ দেওয়া যায় তা নিয়ে। কিন্তু বিগত পাঁচ থেকে ছয় বছরে কোম্পানির মালিকরা শেয়ার ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছেন। কোম্পানির পরিচালকরা শেয়ার ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন উপায়ে ওই কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়াতে ব্যস্ত থাকেন। আবার নামে-বেনামে কেনাবেচা করে শেয়ারের দাম কমিয়ে দেন। যেটা বিএসইসি’র আইনে অবৈধ। কিন্তু কীভাবে কোম্পানির পরিচালকরা শেয়ার ব্যবসায় জড়িত হচ্ছেন সেখানেই প্রশ্ন? তার মানে, এখানে সঠিকভাবে তদারকি হচ্ছে না। যদি সঠিকভাবে তদারকি হতো তাহলে এসব বিষয় ঘটত না। আবার অনেক কোম্পানি ইপিএস ভালো দেখায়। ফলে ওইসব কোম্পানির শেয়ারের দাম দ্রুত বাড়তে থাকে। কিন্তু কয়েকদিন পর আবার ওই কোম্পানির দাম দ্রুত কমে যাচ্ছে। আসলে এখানে অনেক বিষয় বোধগম্য হয় না।
শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ