স্যামসাং প্রধান দুর্নীতির অভিযোগে কারাগারে

শেয়ার বিজ ডেস্ক : দুর্নীতি অনুসন্ধান ও প্রভাব খাটানোর তদন্তের অংশ হিসেবে স্যামসাং গ্রুপের কর্ণধার লি জি ইয়ংকে গ্রেফতার করেছে দক্ষিণ কোরিয়ার পুলিশ। দেশটির প্রেসিডেন্ট পার্ক জিউন হাই যে কেলেঙ্কারিতে অভিশংসনের শিকার হয়েছিলেন, তার সঙ্গে জি ইয়ংয়ের মামলার সম্পর্ক রয়েছে। খবর বিবিসি।
স্যামসাং গ্রুপের প্রধান লি কুন-হির ছেলে লি জি ইয়ং। বাবার মৃত্যুর পর বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত প্রধান কর্মকর্তা লি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি সরকারি কিছু সুবিধার বিনিময়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট পার্ক জিউন হাইয়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু চোই সুন-সিলের অলাভজনক কোম্পানিকে ৩ কোটি ৬৩ লাখ ডলার (৪৩ বিলিয়ন উন) ঘুষ দিয়েছেন। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জি ইয়ং ও তার স্যামসাং কোম্পানি। একই কেলেঙ্কারির কারণে পার্লামেন্টে পার্ককে অভিশংসনের পক্ষে ভোট পড়ে।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট পার্ক জিউন হাইয়ের দুর্নীতি কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে বেশ কয়েকবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। প্রথম জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় জানুয়ারিতে। ৪৮ বছর বয়সী লি-কে এ কেলেঙ্কারির মূল হোতা হিসেবে ধারণা করা হলেও গত সপ্তাহে দ্বিতীয়বার জিজ্ঞাসাবাদে অপর্যাপ্ত সাক্ষ্যপ্রমাণের অভাবে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেফতারের নির্দেশ দেননি আদালত।
গতকাল আদালত নতুন অপরাধের অভিযোগ ও নতুন তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে জি ইয়ংকে গ্রেফতার করা জরুরি বলে মত দেন। বৃহষ্পতিবার আদালতে শুনানিতে হাজির হওয়ার পর তাকে আটক করা হয়। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন।
স্যামসাংয়ের প্রধানকে গ্রেফতারের ঘটনা এবারই প্রথম ঘটলো। এ ঘটনায় পুরো প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি ধাক্কা। দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। বর্তমান বিশ্বে বৃহত্তম স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান স্যামসাং ইলেকট্রনিকস।
স্যামসাংকে সম্প্রতি বড় ধরনের ঝামেলার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। ফ্ল্যাগশিপ গ্যালাক্সি নোট৭ স্মার্টফোনে ব্যাটারি সমস্যার কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ফেরত নিতে হয়েছে স্যামসাংকে। স্যামসাংয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ, প্রতিষ্ঠানটি থেকে বড় অঙ্কের ঘুষ দেওয়া হয় অলাভজনক একটি প্রতিষ্ঠানকে, যা পরিচালনা করেন প্রেসিডেন্ট পার্ক গুন-হাইয়ের ঘনিষ্ঠ আস্থাভাজন চোই সুন-সিল। চোইয়ের ওপর বলপ্রয়োগ ও প্রতারণাচেষ্টার অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, চোই সুন-সিল সরকারের বিভিন্ন কৌশল নির্ধারণে মধ্যস্থতা করছেন এবং প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সম্পর্কের সূত্র ধরে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয়েছেন।
২০১৫ সালে ইলেকট্রনিক জায়ান্টটির অধীনে নির্মাণ প্রতিষ্ঠান স্যামসাং সিঅ্যান্ডটি ও সহযোগী প্রতিষ্ঠান শেইল ইন্ডাস্ট্রিজের একীভূত হয়। এটি নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির বহুসংখ্যক শেয়ারধারীর ভিন্নমত থাকলেও এ একীভূত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। তাদের দাবি ছিল, এ চুক্তির মাধ্যমে সংখ্যালঘু শেয়ারধারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তবে লাভবান হবে স্যামসাং গ্রুপের মালিক লি কুন-হি’র পরিবার। দুই প্রতিষ্ঠানেই শেয়ার থাকা জাতীয় পেনশন তহবিল পরিচালনা প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল পেনশন সার্ভিস (এনপিএস) এ চুক্তির পক্ষে ভোট দেয়।
অভিযোগ রয়েছে, এ চুক্তিতে প্রেসিডেন্টের সমর্থন পাওয়ার জন্য চোই সুন-সিল ও তার মেয়েকে ৩১ লাখ ডলার ঘুষ দেয় স্যামসাং। এ বিষয়ে গত মাসে এক শুনানিতে স্বীকারও করে স্যামসাং কর্তৃপক্ষ। তারা জানায়, চোই সুন-সিলের মেয়ের কর্মজীবনে উন্নতির জন্য এ অর্থ দেওয়া হয়।
দুর্নীতির অভিযোগে গত মাসে দেশটির পার্লামেন্টে প্রেসিডেন্ট পার্কের বিরুদ্ধে অভিশংসন করার পক্ষে ভোট দেন অধিকাংশ আইনপ্রণেতা। পার্লামেন্টের এ সিদ্ধান্ত বহাল বা খারিজ করার ক্ষমতা রয়েছে সাংবিধানিক আদালতের।

Add Comment

Click here to post a comment

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০