অডিট ফার্মগুলোকে ঢেলে সাজাতে হবে

দেশের সিএ ফার্ম বা অডিট ফার্মগুলো পুঁজিবাজারে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। কারণ তারা বিভিন্ন কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করে থাকে। এ কারণে অডিট ফার্মগুলোকে ঢেলে সাজানোর সময় এসেছে। কারণ ইদানীং অডিট ফার্মগুলোর তৈরি বিভিন্ন কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমে গেছে। এ কারণে বিনিয়োগকারীরা আর্থিক প্রতিবেদন দেখে বিনিয়োগ করতে ভরসা পায় না। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়।
হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক সমকালের বিজনেস এডিটর জাকির হোসেন, পুঁজিবাজার বিশ্লেষক সাব্বির আহমেদ, এফসিএ এবং মবিল যমুনা বাংলাদেশ লিমিটেডের সিএফও সাব্বির আহমেদ।
জাকির হোসেন বলেন, নির্বাচনের পর বছরের শুরুতে পুঁজিবাজার এক মাস যেভাবে বেড়েছিল। ফ্রেরুয়ারি ও মার্চে সব ধরনের সূচকের ঠিক সেভাবে পতন হয়েছে। যদি ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, বার্জার পেইন্টস এবং বিএটিবিসিসহ আরও কয়েকটি বহুজাতিক কোম্পানির শেয়ারের দাম না বাড়ত তাহলে বাজার আরও তলানিতে চলে যেত। বাজারে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ অনেক কমে যাচ্ছে। বিশেষ করে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী যেভাবে থাকার কথা সেভাবে দেখা যাচ্ছে না। আবার ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর ক্ষেত্রে দেখা যায়, যখন কোনো শেয়ারের দাম বাড়তে থাকে তখন ওই শেয়ারের প্রতি ঝোঁক বেশি থাকে। কিন্তু যখন ওই শেয়ারের দাম কমতে থাকে তখন ভয়ে শেয়ারগুলো বিক্রি করে দেয়। এতে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। শুধু যে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা বিক্রি করে তা কিন্তু নয় এটি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর ক্ষেত্রেও দেখা যায়। আবার ব্যাংকের সুদের হার বাড়ানো হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। যদি তাই হয় তাহলে বিনিয়োগকারীদের ব্যাংকের প্রতি ঝোঁক বাড়বে। তখন বাজারে তারল্য সংকট দেখা দিতে পারে।
সাব্বির আহমেদ বলেন, আসলে পুঁজিবাজারে ইকুইটি অনেক কম। আবার যে সব কোম্পানি গত কয়েক বছরে বাজারের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে তারা এক থেকে দুবছর ভালো করলেও পরে ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারে না। ফলে ওই সব কোম্পানিকে জেড বা ওটিসি মার্কেটে পাঠানো হয়। এতে করে বিনিয়োগকারীদের বাজার সম্পর্কে এক ধরনের অনাস্থা তৈরি হয়। আবার প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সেভাবে তাদের ভূমিকা পালন করছে না। এটা আসলে কাম্য নয়।
তিনি আরও বলেন, বিনিয়োগকারীদের বাজার সম্পর্কে আস্থার ঘাটতি রয়েছে। আর এ আস্থার ঘাটতির মূল কারণ বাজারে ভালো মানের শেয়ারের অভাব। দেশে বস্ত্র খাতের সেরা ১০টি কোম্পানির মধ্যে কয়টি কোম্পানি বাজারে অন্তর্ভুক্ত আছে? হাতে গোনা দুই থেকে তিনটি কোম্পানি বাজারে রয়েছে। এছাড়া অন্যান্য খাতে যেসব ভালো কোম্পানির রয়েছে। যারা ভালো ব্যবসা করছে এ ধরনের কয়টি কোম্পানি বাজারে আছে? কথা হচ্ছে ওই সব কোম্পানি বাজারে কেন আসছে না। এখানে না আসার দুটি কারণ থাকতে পারে। প্রথম কারণ হতে পারে ওই সব কোম্পানিকে বাজারে আনার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে না। দ্বিতীয় কারণ হতে পারে ওই সব কোম্পানি বাজারে আসতে উৎসাহ বোধ করছে না। তাই এখন সময় এসেছে ভালো মানের কোম্পানি আনার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা বা উৎসাহ প্রদানের।
সাব্বির আহমেদ বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছে কি নাÑসেটা নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। দেশের সিএ অডিট ফার্মগুলো বাজারে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তাই অডিট ফার্মগুলো ঢেলে সাজানোর সময় এসেছে। কারণ অডিট ফার্মগুলোর তৈরি বিভিন্ন কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমে গেছে। তাই আর্থিক প্রতিবেদনে বিনিয়োগকারীর আস্থা না ফিরলে বিনিয়োগকারীরা আর্থিক প্রতিবেদন দেখে বিনিয়োগ করতে ভরসা পাবে না।

শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০