চীনের অনুদানে তিন সেতু নিয়ে সড়ক ও সেতু বিভাগের দ্বন্দ্ব

ইসমাইল আলী: চীনের অনুদানে সাতটি সেতু এরই মধ্যে নির্মাণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু (১-৭) নামে এগুলো পরিচিত। অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু নির্মাণেও চুক্তি সই করা হয়েছে। নবম, ১০ম ও ১১তম সেতু নির্মাণেও অনুদান দেবে চীন। এজন্য গত অক্টোবরে দেশটির প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফরকালে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করা হয়। সেতু তিনটি বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছে সড়ক বিভাগ ও সেতু বিভাগ। এ নিয়ে একই মন্ত্রণালয়ে দুই বিভাগের মধ্যে দেখা দিয়েছে দ্বন্দ্ব।
তথ্যমতে, চীনের অনুদানে তিনটি সেতু নির্মাণের জন্য গত ২৮ সেপ্টেম্বর অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) পৃথক প্রস্তাবনা পাঠায় সেতু বিভাগ। এতে সম্ভাব্য চারটি সেতুর প্রস্তাব দেওয়া হয়। পায়রা, আড়িয়াল খাঁ, মেঘনা ও গলাচিপা নদীর ওপর এগুলো নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে তিনটি বর্তমান অনুদান ও আরেকটি ১২তম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু হিসেবে নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়। এ প্রস্তাবে সম্মত হয় ইআরডি, তা চীন সরকারের বিবেচনার জন্য দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
এদিকে চীনের অনুদানে পৃথক তিনটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। এর প্রস্তুতি হিসেবে গত বছর জুনে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে চীনের দূতাবাসের সঙ্গে মিনিটস অব মিটিং (এমওএম) সই করা হয়। লোহালিয়া, মোংলা ও ঝপঝপিয়া নদীর ওপর সেতু তিনটি নির্মাণের প্রস্তাবও চূড়ান্ত করা হয় ওই চুক্তিতে। তবে সেতু বিভাগের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে আপত্তি জানিয়ে ইআরডিতে চিঠি দিয়েছে সড়ক বিভাগ।
জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এমএএন ছিদ্দিক শেয়ার বিজকে বলেন, চীনের অনুদানে তিনটি সেতু নির্মাণে গত বছর উদ্যোগ নেওয়া হয়। জুনেই এজন্য এমওএম সই করা হয়েছে। এতে সেতু বিভাগ কীভাবে যুক্ত হলো তা পরিষ্কার নয়। আর ইআরডি কেন বা কীভাবে সেতু বিভাগের প্রস্তাব গ্রহণ করল তাও জানা নেই। তাই ইআরডিকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, গত অক্টোবরে চীনের প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফরের সময় নতুন তিনটি মৈত্রী সেতু নির্মাণে এমওইউ সই করা হয়। বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী গো হুচেং স্বাক্ষরিত এমওইউতে বলা হয়, দুই পক্ষের মধ্যে সেতু নির্মাণে মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদি সহযোগিতা সম্প্রসারণ করা হবে। এর আওতায় ২০২০ সালের মধ্যে তিনটি প্রধান নদীর ওপর মৈত্রী সেতু নির্মাণ করা হবে।
এক্ষেত্রে সম্ভাব্য প্রকল্প চূড়ান্ত করবে চীন সরকার। এর অর্থায়নের সংস্থান ও অগ্রগতি পর্যবেক্ষণও করবে দেশটি। তবে প্রকল্প-সংক্রান্ত প্রস্তাব কূটনৈতিক চ্যানেলে পাঠাবে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে প্রচলিত পদ্ধতি অনুসরণ করা হতে পারে। এতে সরাসরি চীন সেতুগুলো নির্মাণ করবে। তবে বাংলাদেশের সক্ষমতা থাকলে তারা সেতুগুলোর সম্ভাব্যতা যাচাই, বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন, দরপত্র আহ্বান ও ঠিকাদার নিয়োগ করতে পারে। চীন
সরকার শুধু অর্থায়ন দেবে ও সীমিত আকার নির্মাণকাজ তদারকি করবে। দ্বিতীয় প্রক্রিয়া অনুসরণে নতুন করে দুই পক্ষের মধ্যে চুক্তি সই করতে হবে।
এর আগেই চারটি সেতুর প্রস্তাব চীনের অর্থায়নে বাস্তবায়নের জন্য পাঠায় সেতু বিভাগ। এগুলোর মধ্যে রয়েছেÑপটুয়াখালীর কচা-বেতাগি সড়কে পায়রা নদীর ওপর শীর্ষেন্দু সেতু। ১ হাজার ৬৯০ মিটার দীর্ঘ সেতুটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ কোটি ৩৪ লাখ ডলার। রহমতপুর-হিজলা সড়কে আড়িয়াল খাঁ নদীর ওপর ১ হাজার ৫৯০ মিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ কোটি ২৫ লাখ ডলার। ভুলতা-নবীনগর সড়কে মেঘনা নদীর ওপর ২ হাজার ৫০০ মিটার দীর্ঘ তৃতীয় সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৩ কোটি ১১ লাখ ডলার। আর লেবুখালী-আমরাগাছি সড়কে গলাচিপা নদীর ওপর ১ হাজার ৫৮০ মিটার দীর্ঘ প্রস্তাবিত সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ কোটি ৩৪ লাখ ডলার। এতে সম্মত হয়েছে ইআরডি।
এদিকে সম্প্রতি সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পটুয়াখালীর কচা-বেতাগি সড়কে পায়রা নদীর ওপর শীর্ষেন্দু সেতু নির্মাণে সেতু বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এজন্য চীন ও বিশ্বব্যাংকের কাছে অর্থায়ন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এর আগে সেতুটি নির্মাণের দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পটুয়াখালীর চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্র চিঠি লেখেন।
যদিও সড়ক বিভাগের স্বাক্ষরিত এমওএম অনুযায়ী বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু তিনটি নির্মিত হবে পটুয়াখালী জেলার ডুমকি ও বাউফল উপজেলাধীন লোহালিয়া নদীর ওপর বগা সেতু, বাগেরহাট জেলার মোংলা উপজেলাধীন মোংলা নদীর ওপর মংলা সেতুু এবং খুলনা জেলার দাকোপ উপজেলাধীন ঝপঝপিয়া নদীর ওপর ঝপঝপিয়া সেতুু।
এ বিষয়ে সেতু বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, দেড় হাজার মিটারের চেয়ে বড় সেতু নির্মাণের এখতিয়ার সেতু বিভাগের। এর পরিপ্রেক্ষিতে সেতুগুলোর প্রস্তাব ইআরডিতে পাঠানো হলে তারা এতে সম্মতি জ্ঞাপন করে। পরে তা অনুমোদনের জন্য চীনেও পাঠানো হয়েছে। এখন সড়ক বিভাগের প্রস্তাবিত নতুন সেতু অন্তর্ভুক্ত হলে পুরো প্রক্রিয়াই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে।
উল্লেখ্য, অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী (বেকুটিয়া) সেতু নির্মাণ নিয়েও সড়ক ও সেতু বিভাগের মধ্যে ২০১৫ সালে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। কারণ সেতুটি নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাই করে সেতু বিভাগ। এর দৈর্ঘ্য দেড় হাজার মিটারের অধিক হওয়ায় সেতুটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সেতু কর্তৃপক্ষ। তবে চীনের সঙ্গে চুক্তি করে সড়ক বিভাগ। এ ক্ষেত্রে নদীর একপাড় থেকে আরেক পাড়ের দৈর্ঘ্য দেড় হাজার মিটারের কম যুক্তিতে সেতুটি নির্মাণের দায়িত্ব নেয় সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতর।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০