টার্নওভার আরও কমলে বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হবে

গত কয়েক বছরে আইপিওর মাধ্যমে যেসব কোম্পানি বাজারে আসছে তাদের বেশিরভাগই মানসম্মত নয়। ওই সব কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের আস্থা তৈরি করতে পারেনি। নির্বাচনের পর বাজারে সূচক প্রায় ৫০০ পয়েন্ট বেড়েছিল। কিন্তু ফের একই অবস্থানে ফিরে এসেছে। তবে টার্নওভার যদি আরও কমে যায় তাহলে বাজার আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এছাড়া এখন বিনিয়োগকারীর বাজার সম্পর্কে যতটুকু আস্থা রয়েছে, পরবর্তীতে আস্থা আরও কমে যাবে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অর্থনীতিবিদ ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী এবং অর্থনীতিবিদ ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম।

ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, পুঁজিবাজারের সঙ্গে বিনিয়োগকারীর আস্থা, বাজার থেকে টাকা চলে যাওয়া, বাজার নিম্নগতিতে থাকা, টার্নওভার কমে যাওয়া সবই সম্পর্কযুক্ত। গত কয়েক বছরে আইপিওর মাধ্যমে যেসব কোম্পানি বাজারে আসছে তাদের বেশিরভাগই মানসম্মত নয়। ওই সব কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা তৈরি করতে পারেনি। নির্বাচনের পর বাজারে সূচক প্রায় ৫০০ পয়েন্ট বেড়েছিল। কিন্তু ফের একই অবস্থানে ফিরে এসেছে। বড় বিষয় হচ্ছে এখন বাজার ক্রমাগত কমে যাচ্ছে। বিশেষ করে টার্নওভার বেশি কমে যাচ্ছে। তবে এর চেয়ে যদি টার্নওভার আরও কমে যায় সেক্ষেত্রে বাজার আরও ক্ষতির দিকে যাবে। এছাড়া এখন বিনিয়োগকারীর বাজার সম্পর্কে যতটুকু আস্থা রয়েছে, পরবর্তীতে আস্থা আরও কমে যাবে। আবার বাজারে বিভিন্ন কারণে ভালোমানের আইপিও আসছে না। আর গত ছয় থেকে সাত বছরে যে সমস্ত কোম্পানি আইপিওর মাধ্যমে এসেছে সেগুলো ভালোমানের নয়।

বিনিয়োগকারীর উদ্দেশ্য তিনি বলেন, যেসব কোম্পানির শেয়ারের দাম ফেস ভ্যালু ১০ টাকা। বিনিয়োগকারীরা যদি ১০ টাকার শেয়ার ৫০ থেকে ৭০ টাকা কিনে, সেক্ষেত্রে ঢালাওভাবে নিয়ন্¿ক সংস্থাকে দোষারোপ করা ঠিক হবে না। বিনিয়োগকারীর বুঝতে হবে নিয়ন্¿ক সংস্থা ওই কোম্পানির শেয়ার ১০ টাকায় অনুমোদন দিয়েছে। কিছু চক্র ওইসব কোম্পানির শেয়ারের দাম কারসাজি করে বাড়িয়ে দেয়। তবে ওই চক্রের মধ্যে কিছু অভিজ্ঞ ব্যক্তি রয়েছে যারা লাভ করে বেরিয়ে যায়। কিন্তু যারা তুলনামূলকভাবে অনভিজ্ঞ তারা মনে করে ওই শেয়ারের দাম আরও বাড়বে। কিন্তু যখন শেয়ারের দাম কমে যায় তখন তাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। এতে করে বাজার সম্পর্কে সাধারণ বিনিয়োগকারীর আস্থা কমে যাচ্ছে। আবার যেসব কোম্পানি দুই থেকে চার বছরের মধ্যে লভ্যাংশ দেয় না এবং ইপিএস অত্যন্ত খারাপ অনেক সময় ওই সব কোম্পানিতে বিনিয়োগকারীরা হুজুগে মেতে বিনিয়োগ করে। এক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের নিজ পুঁজির দায়িত্ব নিতে হবে।

ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, আসলে আইপিওর মাধ্যমে আসা কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম বাজারে আসার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত বেড়ে যায়। এক থেকে দুই মাস ওই শেয়ারের দাম অনেক উপরে থাকে। পরে ধীরে ধীরে দাম কমতে থাকে। এক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের সচেতন হতে হবে। যে সব বিনিয়োগকারী বেশি দামে ওই শেয়ারগুলো কিনছে তাদের বোঝা উচিত ওই শেয়ারের দাম কতদিন স্থায়ী থাকবে। এখানে নিয়ন্¿ক সংস্থার ভূমিকা কতটুকু সেটা আলোচনা সাপেক্ষ।

তিনি আরও বলেন, এক বছরে ব্যাংক খাতে প্রায় ২৬ শতাংশ খেলাপি ঋণ বেড়েছে। ইতোমধ্যে এর প্রভাব বিভিন্ন খাতে দেখা যাচ্ছে। অর্থাৎ ব্যাংকের পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছে? ব্যাংকের মূল কাজ হচ্ছে ডিপোজিট সংগ্রহ করে প্রকৃতি খাতে ঋণ দিয়ে বিনিয়োগ বাড়ানো। কিন্তু ডিপোজিট গ্রোথ কমে গেছে, বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। এক দিকে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। অন্যদিকে প্রকৃত খাতে বিনিয়োগ বাড়ছে না। বিনিয়োগ ছাড়া প্রবৃদ্ধি কীভাবে বাড়বে।

শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০