নিয়াজ মাহমুদ: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেডের (পিজিসিবি) আরও ১৫ শতাংশ শেয়ার অফলোডে (ছাড়তে) অনাগ্রহ দেখাচ্ছে বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি)। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হওয়ায় রাষ্ট্রায়ত্ত এ প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার সরকারের কাছে থাকাই যুক্তিযুক্ত বলে মনে করছে বিপিডিবি। সংস্থাটি মালিকানা হ্রাস না করে রাইট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে নতুন প্রকল্পে বিনিয়োগের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে।
পাওয়ার গ্রিডের শেয়ার অফলোডের বিষয়ে সরকারকে দেওয়া বিপিডিবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোম্পানিটির ২৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ শেয়ার সাধারণ শেয়ারহোল্ডারের হাতে থাকায় রাইট শেয়ারের অর্থ বাবদ ৭১১ কোটি টাকা সংগ্রহ পুঁজিবাজার থেকে সংগ্রহ করতে পারে। এতে মালিকানা হারের কোনো পরিবর্তন হবে না অর্থাৎ সরকারের ৭৬ দশমিক ২৫ শতাংশ শেয়ার অপরিবর্তিত থাকবে। অন্যদিকে কোম্পানির কোনো আর্থিক ব্যয়ের সৃষ্টি হবে না। এছাড়া পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি ৭১১ কোটি টাকা সংগ্রহ করে নতুন প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে পারবে বলে মত দিয়েছে পিডিবি।
জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজারে ভালো সিকিউরিটিজের সরবরাহ বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির শেয়ার অফলোড বা বন্ড ইস্যু করা কিংবা না করার বিষয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড কোম্পানিটির শেয়ার অফলোড করতে অনাগ্রহমূলক প্রতিবেদন দেয়। একই সঙ্গে রাইট শেয়ার ইস্যুর যুক্তিকতা এবং শেয়ার অফলোড এবং বন্ড ইস্যুর নেতিবাচক দিকগুলো প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়।
এদিকে সম্প্রতি ব্যাংক ও আর্থিক বিভাগের সচিব মো. ইউনুসুর রহমান পাওয়ার গ্রিডের আরও ১০ শতাংশ শেয়ার অফলোড করা বা না করার বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগকে যৌক্তিক কারণ উল্লেখপূর্বক সুস্পষ্ট মতামত চেয়েছেন। এ বিষয়ে এখনও কোনো মতামত অর্থ মন্ত্রণালয়ে লিখিত আকারে জানায়নি বিদ্যুৎ বিভাগ।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা গেছে, ২০০৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত পাওয়ার গ্রিডের মোট শেয়ারের ৭৬ দশমিক ২৫ শতাংশ রয়েছে সরকার বা বিপিডিবির হাতে। প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যথাক্রমে ১৮ দশমিক ৪৫ ও দশমিক ৭৫ শতাংশ শেয়ার ধারণ করছে। বাকি ৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে।
বিপিডিবির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, নতুন করে অফলোডের মাধ্যমে সরকারের মালিকানা হ্রাস না করে রাইট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে পাওয়ার গ্রিড বিদ্যুৎ সঞ্চালন সক্ষমতা বাড়াতে নতুন প্রকল্পে বিনিয়োগের জন্য ৭১১ কোটি সংগ্রহ করা যেতে পারে। ফলে পুঁজিবাজারে ভালো শেয়ারের সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে। এতে সরকার বা পিডিবির কোনো অতিরিক্ত আর্থিক সংশ্লিষ্টতা নেই বলেও সংস্থাটির পর্যবেক্ষণে জানানো হয়।
এর আগে পাওয়ার গ্রিডের শেয়ার অফলোড বিষয়ে কোম্পানির ১৫৪তম পরিচালনা পর্ষদে সিদ্ধান্ত হয় যে, আরও শেয়ার অফলোড হলে জাতীয় স্বার্থে কোম্পানির মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশন বা আর্টিক্যাল অব অ্যাসোসিয়েশন পরিবর্তন প্রয়োজন হলে তা করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। কারণ বর্তমান কোম্পানি আইন ১৯৯৪ অনুসারে কমপক্ষে তিন-চতুর্থাংশ মেজরিটি না থাকলে আর্টিক্যাল পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয় স্পেশাল রেজুলেশন অনুমোদন সম্ভব নয়।
‘এ’ ক্যাটাগরির এই কোম্পানিটি ২০১৫-১৬ হিসাববছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের ১২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। ৩০ জুন সমাপ্ত ২০১৬ হিসাববছরে পাওয়ার গ্রিডের কর-পরবর্তী মুনাফা হয়েছে ১২২ কোটি ৬১ লাখ টাকা। শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয় ২ টাকা ৬৬ পয়সা। ৩০ জুন কোম্পানির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) ছিল ৭৬ টাকা ৮৯ পয়সা।
জুলাই-ডিসেম্বর, ২০১৬ মেয়াদে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ১ টাকা ৭৩ পয়সা। এর আগের বছরের একই মেয়াদে কোম্পানির এই ইপিএস ছিল ১ টাকা ৩০ পয়সা। শেষ তিন মাসে (সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর’১৬) কোম্পানিটির ইপিএস হয় ৭১ পয়সা। এর আগের বছরের একই মেয়াদে যা ছিল ৬৯ পয়সা।
এদিকে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত কোম্পানির ২০তম বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) বিপিডিবির কাছ থেকে কেনা সঞ্চালন অবকাঠামো ও সম্পত্তির অবশিষ্ট মূল্য বাবদ সমপরিমাণ টাকার শেয়ার ইস্যুর প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। এতে পাওয়ার গ্রিডের ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের ২৫ কোটি ১৮ লাখ ১৪ হাজার নতুন শেয়ার পাবে বিপিডিবি। এর মধ্য দিয়ে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন বাড়ছে ২৫১ কোটি ৮১ লাখ ৪ হাজার টাকা। কোম্পানির ৭৬ দশমিক ২৫ শতাংশ শেয়ারের মালিক ছিল বিপিডিবি তথা সরকার। নতুন শেয়ার ইস্যুর মধ্য দিয়ে তা ১০ শতাংশ বাড়ার কথা থাকলেও এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি বলে জানা গেছে। বিপিডিবির নতুন এ পরামর্শ গৃহীত হলে পাওয়ার গ্রিড রাইট শেয়ার ইস্যুর জন্য কাজ করবে।
পুঁজিবাজারে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি সারা দেশে স্থাপিত বিভিন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সঞ্চালনের দায়িত্ব পালন করছে। ২০১৫-১৬ হিসাববছরে ৪৬ হাজার ৪১৩ মিলিয়ন কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ সঞ্চালন করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ বেশি। বর্তমানে পিজিসিবির ১৫টি উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে। পরিকল্পনায় রয়েছে আরও ১৯টি প্রকল্প।
Add Comment