মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: স্মরণকালের সবচেয়ে বড় পতনের (২০১০-১১) পর পুঁজিবাজার-বিমুখ বিনিয়োগকারীরা আবার বিনিয়োগে ফিরতে শুরু করেছেন। সে সময় সর্বস্ব হারিয়ে পুঁজিবাজার থেকে বিদায় নেন লাখ লাখ বিনিয়োগকারী। দীর্ঘদিন মন্দাবস্থা চলার পর গত বছরের শেষে পুঁজিবাজার আবার ঊর্ধ্বমুখী হতে থাকলে বিনিয়োগকারীরাও বাজারমুখী হতে শুরু করেন। কিন্তু অল্পদিনেই বাজারে আবার ছন্দপতন হলে তারা থমকে যান। কমে যায় ব্রোকারেজ হাউজে বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতি। বর্তমানে পরিস্থিতি পরিবর্তন হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা আবারও হাউজমুখী হচ্ছেন।
গতকাল মতিঝিলের কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউজ ঘুরে দেখা যায় বিনিয়োগকারীদের সন্তোষজনক উপস্থিতি। হাউজ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, ২০১০ সালের পর থেকে যেসব বিও অ্যাকাউন্টের লেনদেন কার্যক্রম বন্ধ ছিল সেগুলো আবার সচল হচ্ছে। বাড়ছে নারী বিনিয়োগকারীর উপস্থিতি। এ বিষয়ে শাকিল রিজভী স্টক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাকিল রিজভী শেয়ার বিজকে বলেন, বিনিয়োগকারীরা ফিরে আসছেন এটা পুঁজিবাজারের জন্য শুভ লক্ষণ। একই সঙ্গে এটি আমাদের জন্যও ভালো খবর। কারণ বিনিয়োগকারীরা শেয়ার লেনদেন না করলে আমাদের আয় কমে যায়। তখন আমাদের ব্যবসা চালাতে হিমশিম খেতে হয়। একই প্রসঙ্গে স্টার্লিং স্টকস অ্যান্ড সিকিউরিটিজ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাসির উদ্দীন শেয়ার বিজকে বলেন, আমাদের মূল ব্যবসাই হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কেনাবেচা থেকে পাওয়া কমিশন।
২০১০ সালে পুঁজিবাজার পরিস্থিতি যখন খুবই ভালো ছিল তখন ডিএসইর দৈনিক লেনদেনের পরিমাণ ছিল আড়াই থেকে তিন হাজার কোটি টাকা। সে সময় ঢাকার প্রতিটি হাউজে গড়ে প্রতিদিন ৩০ কোটি টাকার লেনদেন হতো। পরবর্তী সময়ে বাজার মন্দা যাওয়ায় লেনদেন অনেক নিচে নেমে যায়, যার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ে ব্রোকারেজ ব্যবসায়। এখন পুঁজিবাজার পরিস্থিতি ভালো হওয়ায় ব্যবসাও ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।
এ ব্যাপারে জয়তুন সিকিউরিটিজ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ব্যাবসা চালিয়ে নিতে আমাদের বেগ পেতে হচ্ছিল। এর প্রধান কারণ ছিল হাউজগুলোর আয় কমে যাওয়া। একসময় আমাদের হাউজে প্রতিদিন লেনদেন হতো ১০০ কোটি টাকার মতো। পরে তা অস্বাভাবিক হারে কমে যায়। এখন বাজার ভালোর দিকে যাচ্ছে। আশা করছি আবার সুদিন ফিরবে। তবে এর জন্য বাজারে স্থিতিশীলতা থাকা জরুরি।
জানা যায়, ২০১০-১১ সালে পুঁজিবাজার যখন ঊর্ধ্বমুখী ছিল তখন হাউজগুলো বিভাগীয় শহর ও জেলা পর্যায়ে তাদের শাখা খোলে। কিন্তু বাজারে ধস নামার পর থেকে কমতে থাকে সিকিউরিটিজ হাউজগুলোর আয়। কর্মী ছাঁটাই করে ব্যয় কমায় হাউজগুলো। এ সময় কয়েকটি হাউজ বন্ধ হয়ে যায়। ডিএসইর দেওয়া সর্বশেষ তথ্যমতে, বর্তমানে ২৫০টি ব্রোকারেজ হাউজের মধ্যে ২৩৪টির কর্মকাণ্ড সচল রয়েছে।
Add Comment