আইসিবির শেয়ার বিক্রির টাকা কোথায় যাচ্ছে?

আইসিবিকে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য। বাজার যখন নিম্নগতির দিকে থাকবে, তখন তাকে স্থিতিশীল রাখা আইসিবির কর্তব্য। কিন্তু আইসিবি সেটি না করে শুধু শেয়ার বিক্রি করে কিন্তু এই শেয়ার বিক্রির টাকা কোথায় যাচ্ছে? আসলে আইসিবির বিষয়ে বিএসইসি কোনো হস্তক্ষেপ করতে পারে না। কারণ আইসিবি সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে। অর্থ মন্ত্রণালয় জানে না আইসিবি কোন শেয়ার কত টাকায় কিনছে। এখানেই কারসাজিটি বেশি হচ্ছে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক সাব্বির আহমেদ, এএফসিএ এবং কর আইনজীবী ফেডারেশনের সভাপতি ড. মো. নুরুল আজাহার।
সাব্বির আহমেদ বলেন, জানুয়ারিতে পুঁজিবাজারে ইতিবাচক গতি দেখা গিয়েছিল। নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক অবস্থা স্থিতিশীল থাকায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও চাঙাভাবে দেখা দিয়েছিল। কিন্তু এখন সে অবস্থা দেখা যাচ্ছে না। যে কোনো কারণেই হোক, বাজারে এখন খারাপ অবস্থা বিরাজ করছে। এটি আসলে বিনিয়োগকারীকে বিব্রত করছে। এখন দেশের অর্থনীতির সব সূচক মোটামুটি ইতিবাচক দিকে এগোচ্ছে। গত সপ্তাহে দেশের জিডিপি ওয়ার্ল্ড ব্যাংক প্রকাশ করেছে সাত দশমিক দুই। শেষ ১০ বছরে জিডিপি ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। অর্থনীতির বিভিন্ন খাত উন্নতি করলেও বাজার তার দৈন্য কাটিয়ে উঠতে পারছে না। গত দু’মাস ধরে বাজারের যে অবস্থা, তা বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত করেছে। এর পেছনে অদৃশ্য কোনো হাত রয়েছে বলে মনে করি।
তিনি আরও বলেন, কয়েক বছর ধরে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ নিয়ে বেশ আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। এ জন্য অনেকেই ব্যাংকিং কমিশন গঠনের কথা ভাবছেন। পুঁজিবাজারের ক্ষেত্রেও একটি শক্তিশালী কমিশন গঠন দরকার। যেখানে বাজার-সংশ্লিষ্ট বিএসইসি, ডিএসই, সিএসই, প্রাতিষ্ঠানিক ও সাধারণ বিনিয়োগকারী এবং অডিট ফার্ম প্রভৃৃতির অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা থাকবেন। তারা বাজার নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখবেন কেন বাজারমুখী হচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা। আবার দ্রুত কিছু কোম্পানির শেয়ার কারণ ছাড়াই বাড়তে থাকে বা কমে। এসব বিষয় নিরপেক্ষভাবে বিশ্লেষণের জন্য কমিশন গঠন করার সময় এসেছে। এতে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা বেরিয়ে আসবে।
ড. মো. নুরুল আজাহার বলেন, আসলে বাজারের অবস্থা মোটেই ভালো নয়। অবশ্য বাজার এরকম থাকার বিশেষ কিছু কারণও রয়েছে। বাজার থেকে বিভিন্ন কৌশলে টাকা বেরিয়ে যাচ্ছে। আর এর শিকার হচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারী। তাই নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে এ বিষয়গুলো ভালো করে খতিয়ে দেখতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বিশ্বের সব পুঁজিবাজারেই কম-বেশি কারসাজি হয়। যেমন কোনো কোম্পানির শেয়ারের দাম ফেসভ্যালুর নিচে, ইপিএস নেগেটিভ; আবার কোম্পানির কারখানা বন্ধ থাকে। কিন্তু ওইসব কোম্পানির শেয়ারের দাম কীভাবে বাড়ে। আসলে এখানে কারসাজি করে একটি চক্র দাম বাড়িয়ে দেয়। বিষয়টি বাজারের জন্য সবচেয়ে খারাপ। এটি কীভাবে প্রতিরোধ করা যায় তা অচিরেই ভাবতে হবে। আবার আইসিবিকে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য। বাজার যখন নিম্নগতির দিকে থাকবে, তখন তাকে স্থিতিশীল অবস্থানে রাখা আইসিবির কর্তব্য। কিন্তু আইসিবি সেটি না করে শুধু শেয়ার বিক্রি করে কিন্তু এই শেয়ার বিক্রির টাকা কোথায় যাচ্ছে? আসলে আইসিবির বিষয়ে বিএসইসি কোনো হস্তক্ষেপ করতে পারে না। কারণ আইসিবি সরকারি তথা অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে। অর্থ মন্ত্রণালয় জানে না আইসিবি কোন শেয়ার কত টাকায় কিনছে। এখানেই কারসাজিটা বেশি হয়। গত বছর দুদক বাজারে কারসাজির কারণে আইসিবির কয়েকজনকে গ্রেফতার করে। কিন্তু সেসব ব্যক্তির নামমাত্র বিচার হয়েছে। এমন হলে বাজারে আরও কারসাজির সুযোগ তৈরি হবে।

শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০