সমাজে নারীর নেতৃত্ব বাড়ুক

আগামী ১ মার্চ থেকে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ বা সিপিডির নির্বাহী পরিচালক হিসেবে নতুন দায়িত্ব শুরু করবেন ড. ফাহমিদা খাতুন। বর্তমানে তিনি প্রতিষ্ঠানটিতে গবেষণা পরিচালক হিসেবে কর্মরত। গতকাল এ-সংক্রান্ত একটি খবর দেশের সংবাদপত্রগুলোতে প্রকাশিত হয়েছে। শুধু নারী হিসেবে নয়, দেশের অন্যতম থিংক ট্যাংক বলে পরিচিত শীর্ষস্থানীয় এ প্রতিষ্ঠানের প্রধান ব্যক্তি নির্বাচিত হওয়া তার যোগ্যতারই স্বীকৃতি। আমরা ড. ফাহমিদাকে অভিনন্দন জানাই।

বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ নানা ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে। এ নিয়ে খেদও রয়েছে আমাদের। তবে এটি অস্বীকার করা যাবে না, বাংলাদেশে নারীরা এখন পুরুষের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে সাফল্যের সঙ্গে কাজ করছেন। তার স্বীকৃতিও মিলছে বিভিন্নভাবে। বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষায় জেন্ডার সমতা অর্জন আজ বিশ্বের নানা সেমিনার-সিম্পোজিয়ামে প্রশংসাভরে উচ্চারিত হয়। গত ত্রিশ বছরে বাজার অর্থনীতির কারণে হলেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী ঘরের বাইরে এসেছেন। শিক্ষা ও সংস্কৃতির সংস্পর্শে থাকা নারীরা বসছেন নেতৃত্বের আসনে। সুলতানা কামাল আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক ছিলেন, এখন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশ বা টিআইবির সভাপতি। রাশেদা কে চৌধূরী গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক। সম্প্রতি অন্যতম নির্বাচন কমিশনার হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ বেগম কবিতা খানমকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিছুদিন আগে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বা বুয়েটে নারী ভিসি দেখেছি, বর্তমানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিও একজন নারী। নিশাত মজুমদার ও ওয়াসফিয়া নাজরীন এভারেস্ট জয় করেছেন। ওয়াসফিয়া তো বাংলাদেশের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে জয় করেছেন সাত মহাদেশের সাতটি সর্বোচ্চ পর্বত। এগুলো নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধির সূচকই নির্দেশ করে। প্রাসঙ্গিকভাবে বলা যেতে পারে, দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং স্পিকারও নারী। পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা কিংবা বিচারপতি হিসেবেও নারীর অন্তর্ভুক্তি দিন দিন বাড়ছে। বাংলাদেশের একটি ছাত্রসংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের প্রধান নারী। সব মিলিয়ে বলা যায়, বিভিন্ন পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে। দক্ষতা দেখিয়ে নিজেকে যোগ্যতম প্রমাণ করেই তারা নেতৃত্বের আসনে বসছেন। প্রতিযোগিতামূলক এ সময়ে সমানতালে কাজ করে প্রমাণ করছেন, সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করা গেলে নারী-পুরুষ সমভাবেই সমাজে ইতিবাচক প্রভাব রাখতে সক্ষম।

এটিও ঠিক, আজ একুশ শতকে এসে নারীর জন্য যতটুকু পরিবেশ নিশ্চিত করা প্রয়োজন, আমরা ততটুকু পারিনি। রাষ্ট্রকাঠামো যদিও অনেকটা জেন্ডার-নিরপেক্ষ আইনকানুন প্রণয়নের মাধ্যমে একটি জায়গায় পৌঁছতে সক্ষম হয়েছে; কিন্তু সমাজের মৌলকাঠামো এখনও পুরুষতান্ত্রিক। মানুষ হিসেবে যে অধিকারগুলো পুরুষ ভোগ করছে, নারী তার অনেকগুলো পাচ্ছে না। আমরা চাই, সমাজে সুযোগ সৃষ্টির প্রতিটি ক্ষেত্রে যোগ্যতার ভিত্তিতে নারীকে অগ্রাধিকার দেওয়া হোক এবং কর্মী থেকে নেতৃত্ব পর্যন্ত সব স্তরে নারীর অংশগ্রহণ বাড়–ক। তাতে সমাজের ভারসাম্যও রক্ষিত হবে।

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০