বাজারে প্রায় ৩০টি মিউচুয়াল ফান্ড রয়েছে। মিউচুয়াল ফান্ডগুলো ভালো করতে হলে প্রচারের উদ্যোগ নিতে হবে। মিউচুয়াল ফান্ড কী, কীভাবে লভ্যাংশ বণ্টন করে এবং ফান্ডগুলোতে কী ঝুঁকি রয়েছে প্রভৃতি বিষয়গুলো বিনিয়োগকারীদের বোঝাতে হবে। কারণ অনেক বিনিয়োগকারীর মিউচুয়াল ফান্ড সম্পর্কে ধারণা নেই। বাজারের মূলপ্রাণ দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকারী। দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকারী তৈরি করার ক্ষেত্রে বাজারসংশ্লিষ্ট সবাইকে উদ্যোগ নিতে হবে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দ্য ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সিনিয়র নিউজ কনসালটেন্ট রায়হান এম চৌধুরী, ইউনিভার্সেল ফিনান্সিয়াল সল্যুশন্স লিমিটেডের পরিচালক মোহাম্মদ জাকির হোসেন কিরণ এবং স্কাইপেতে আলোচনায় যোগ দেন চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, এফসিএমএ।
রায়হান এম চৌধুরী বলেন, পুঁজিবাজারে গত কয়েক মাস ধরে বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে। অর্থাৎ বাজার ক্রমাগত খারাপের দিকে যাচ্ছে এবং টার্নওভার মাত্র ৩০০ থেকে ৪০০ কোটির মধ্যে রয়েছে। এটি বাজারের জন্য খুবই হতাশাজনক। কিন্তু দেশের অর্থনীতির সূচকগুলো ইতিবাচক দিকে এগোচ্ছে। আবার গত সোমবার প্রকাশিত হয়েছে গত ৯ মাসে রফতানির পারফরমেন্স ১৩ শতাংশ। সবগুলো ক্ষেত্রে ভালো হলেও পুঁজিবাজারে বিপরীত চিত্র লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বাজারের এ রকম অবস্থা যে কারণে হচ্ছেÑসেগুলোর প্রতি সঠিকভাবে নজরদারি করা হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, বিনিয়োগকারী কীভাবে বাজারের প্রতি আস্থা রাখবে। যেখানে তারল্য সংকট, সুশাসনের অভাব এবং বিভিন্ন কারসাজি জানা সত্ত্বেও এর কোনো প্রতিকার হচ্ছে না। অর্থাৎ বাজারের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা রয়েছে। সাধারণভাবে বিনিয়োগকারীদের বাজার সম্পর্কে আস্থা থাকার কথা নয়।
জাকির হোসেন কিরণ বলেন, বর্তমান সরকার পরপর তিন মেয়াদে ক্ষমতায় রয়েছে। সবাই প্রত্যাশা করেছিল বাজার ভালো হবে। সরকার তৃতীয় মেয়াদে শপথ নেওয়ার পর দুই সপ্তাহ বাজার ইতিবাচক ছিল। কিন্তু এখন ক্রমাগত নিচের দিকে ধাবিত হচ্ছে। আসলে এর জন্য কমবেশি সবাই দায়ী। আবার কিছু কোম্পানি বাজারে আসার আগে ভালো ইপিএস দেখায়। দুই থেকে তিন বছর পর ওইসব কোম্পানির ইপিএস কমতে কমতে লোকসানে এসে দাঁড়ায়। হঠাৎ ওইসব কোম্পানির এমন কী হলোÑ যে তিন বছরের মাথায় লোকসান গুনতে হচ্ছে। বরং ওই কোম্পানিগুলোর আরও ভালো করার কথা। কারণ তারা কোম্পানির উৎপাদন বৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য বাজার থেকে টাকা উত্তোলন করেছে। এ বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে ভালো করে তদারকি করতে হবে। একটি পুঁজিবাজারের প্রাণ মিউচুয়াল ফান্ড। কিন্তু দেশের মিউচুয়াল ফান্ডগুলো বিনিয়োগকারীদের কাছে জনপ্রিয় করা যাচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা হচ্ছে বাজারের অভিভাবক। তাই নিয়ন্ত্রক সংস্থার বাজারসংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে বসতে হবে। কীভাবে এ অবস্থা থেকে উত্তরণ করা যায়। আবার বাজারে সরকারি কয়টি কোম্পানি অন্তর্ভুক্ত আছে। সাবেক অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন সরকারি সব কোম্পানি ছয় মাসের মধ্যে বাজারে আনব। কথা হচ্ছে কয়টি কোম্পানি বাজারে আসছে। আসলে এখানে কোম্পানিগুলো না আসার পেছনে আমলাতান্ত্রিক জটিলতাই মূল কারণ।
স্কাইপের মাধ্যমে মহিউদ্দিন বলেন, মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর অবস্থা খুবই নাজুক। বাজারে প্রায় ৩০টি মিউচুয়াল ফান্ড রয়েছে। মিউচুয়াল ফান্ডগুলো ভালো করতে হলে প্রচারের উদ্যোগ নিতে হবে। মিউচুয়াল ফান্ড কী, কীভাবে লভ্যাংশ বণ্টন করে এবং ফান্ডগুলোতে কী ঝুঁকি রয়েছে প্রভৃতি বিষয়গুলো বিনিয়োগকারীদের বোঝাতে হবে। কারণ অনেক বিনিয়োগকারীর মিউচুয়াল ফান্ড সম্পর্কে ধারণা নেই। বাজারের মূলপ্রাণ দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকারী। দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকারী তৈরি করার ক্ষেত্রে বাজারসংশ্লিষ্ট সবাইকে একসঙ্গে উদ্যোগ নিতে হবে।
শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ
