একমাস ধরে বাজারে ধারাবাহিক পতনের নির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে একটা কারণ হচ্ছে, ব্যাংকের তারল্য সংকট। ৫৭টি ব্যাংকের মধ্যে আট থেকে ১০টি ব্যাংকের তারল্য সংকট রয়েছে এবং বাজারে ৩০টি ব্যাংক অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রায় ৩৫০টি ইকুইটির মধ্যে ব্যাংক খাতের জন্য বাজার এভাবে পতন হচ্ছে এটা গ্রহণযোগ্য নয়। আসলে বাজারে ম্যানুপুলেশন (কারসাজি) হচ্ছে এটা স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। হাসিব হাসানের গ্রন্থনা ও সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ডেইলি স্টারের বিজনেস এডিটর সাজ্জাদুর রহমান এবং আমার স্টক ডট কমের সিইও মুহাম্মদ আলী জাহাঙ্গীর।
সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে ধস ছিল দৃশ্যমান। কিন্তু এখন বাজারের যে পতন এটি দৃশ্যমান না হলেও বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আবার অন্যদিকে একটার পর একটা কোম্পানি বাজারে আসছে। প্রশ্ন হচ্ছেÑওইসব কোম্পানির মান নিয়ে। নির্বাচনের পর তিন মাসের মধ্যে ১৯৯৬ সালে ৭৮ শতাংশ, ২০০১ সালে ২৬ শতাংশ, ২০০৮ সালে পাঁচ শতাংশ, ২০১৪ সালে ছয় শতাংশ সূচক বৃদ্ধি পেয়েছিল। কিন্তু ২০১৮ সালে ১০ শতাংশ সূচক কমেছে। দেশের অর্থনীতির সব সূচকগুলো ভালো অবস্থানে রয়েছে। একই সরকার আবার ক্ষমতায় এসেছে। কোনো রাজনৈতিক সহিংসতা নেই। অর্থাৎ রাজনৈতিক অবস্থা স্থিতিশীল অবস্থানে রয়েছে। সরকার বিভিন্ন ধরনের মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য হাতে নিয়েছে। ডিসেম্বর থেকে বিনিয়োগকারীরা নতুন করে বাজারের আসতে শুরু করেছে। এগুলোর সবই ইতিবাচক। তাহলে বাজারের অবস্থা এমন কেন? গত একমাস ধরে বাজারের ধারাবাহিক পতনের নিদির্ষ্ট কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে একটা কারণ চোখে পড়ে ব্যাংকের তারল্য সংকট। ব্যাংকের তারল্য সংকট ২০১৭ সাল থেকে শুরু হয়েছে। ৫৭টি ব্যাংকের মধ্যে আট থেকে ১০টি ব্যাংকের তারল্য সংকট রয়েছে এবং বাজারে ৩০টি ব্যাংক অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রায় ৩৫০টি ইকুইটির মধ্যে ব্যাংক খাতের জন্য বাজার এভাবে পতন হচ্ছে এটা গ্রহণযোগ্য নয়। আসলে বাজারে ম্যানুপুলেশন হচ্ছে এবং এটা স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে। এর পেছনে কারা জড়িত এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীর টাকা নিয়ে কারা এ কাজা করছে, তাদের খুঁজে বের করার দায়িত্ব নিয়ন্ত্রক সংস্থার। এখানেই নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে মূল ভূমিকা পালন করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, দেশে প্রায় ১৫ থেকে ২০টি বড় গ্রুপ অব কোম্পানি রয়েছে। যারা হাজার হাজার কোটি টাকা লাভ করছে। কিন্তু ওইসব কোম্পানি আনার ক্ষেত্রে কোনো পদক্ষেপ নেই। বসুন্ধরা গ্রুপের একটি কোম্পানি বাজারে আনতে ছয় বছর সময় লেগেছে। কোনো কোম্পানি বাজারে আসতে যদি এতটা সময় লাগে তাহলে ভালো কোম্পানি কেন আসবে? আবার স্বল্পমূলধনি অনেক কোম্পানিকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় তিন মাসের মধ্যে বাজার আনা হয়। এ বিষয়গুলো বিনিয়োগকারীর কাছে লুকানো যাবে না। অর্থাৎ তারা বোকা নয়।
মুহাম্মদ আলী জাহাঙ্গীর বলেন, প্রতিদিনই বাজার পতনের দিকে ধাবিত হচ্ছে। টার্নওভার মাত্র ৩০০ কোটির মধ্যে রয়েছে। এটাকে স্বাভাবিক বাজার বলা যায় না। আসলে বাজারে এক ধরনের কারসাজি হচ্ছে। এখানে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনেক ভূমিকা রয়েছে। আবার এ অবস্থায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা যদি বলেন, বাজার স্বাভাবিক অবস্থায় আছে, সেটা বিনিয়োগকারীদের জন্য ভুল তথ্য দেওয়া হচ্ছে। এটা আসলে কাম্য নয়। বাজারে এ রকম অবস্থা চলতে থাকলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসবে না। তাই বিনিয়োগকারীর আস্থা পেতে হলে বাজারে ভালো মানের কোম্পানি আনতে হবে।
শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ