২০০ কোটি টাকার পেঁয়াজ বীজ

ফরিদপুরের মাটি ও আবহাওয়া পেঁয়াজ বীজ চাষের উপযোগী হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে এ অঞ্চলে পেঁয়াজ বীজের আবাদ। জেলার প্রায় সব মাঠজুড়ে এখন পেঁয়াজ বীজের সাদা ফুলের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য চোখে পড়ে। দৃষ্টি যতদূর যায়, শুধু সাদা ফুলের সমারোহ। এরই মধ্যে এ ফুল থেকে অনেকে ‘কালো সোনা’খ্যাত পেঁয়াজ বীজ তুলে বাজারজাত করছেন। দেশের পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনে শীর্ষে রয়েছে ফরিদপুর। কৃষি বিভাগের আশা, চলতি বছর প্রায় ২০০ কোটি টাকার পেঁয়াজ বীজ উৎপন্ন হবে এ জেলায়।
সদর উপজেলার অম্বিকাপুর ইউনিয়নের কৃষক বক্তার হোসেন খান ১৫ বছর ধরে নিজ উদ্যোগে পেঁয়াজ বীজের আবাদ করছেন। শুরু থেকেই সফল তিনি। ফলে দিন দিন আবাদের পরিমাণ বাড়িয়েছেন। বীজ বিক্রি করে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীর তকমা পেয়েছেন। অনেকের কর্মসংস্থান হয়েছে তার খামারে প্রায় ৪০ জন কর্মী রয়েছেন তার। তার সাফল্য দেখে অনেক শিক্ষিত বেকার যুবকও পেঁয়াজ বীজ আবাদ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।
কৃষক বক্তার হোসেন বলেন, প্রথম জীবনে চাষের জন্য অন্য অঞ্চল থেকে পেঁয়াজ বীজ কিনে প্রতারিত হন তিনি। তাই নিজেই শুরু করেন বীজের চাষ। মানসম্মত বীজ উৎপাদন করেন তিনি। প্রথমে ৫০ শতাংশ জমিতে চাষ শুরু করেছিলেন। বীজ উৎপাদনে অভাবনীয় সাফল্য পান। আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। ৫০ শতাংশ থেকে এখন তিনি চাষ করছেন ২৫ একর জমিতে। উৎকৃষ্ট মান ও মানসম্মত বীজ উৎপাদন করায় সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে বক্তার হোসেনের বীজের সুনাম।
দেশের বিভিন্ন জেলার কৃষক বক্তার খানের বীজের মাঠ পরিদর্শন করেন ও পরামর্শ নেন। পেঁয়াজ বীজ যেমন লাভজনক, তেমনি ঝুঁকিপূর্ণ ফসল। এক একর জমিতে বীজ আবাদ করতে সব মিলিয়ে খরচ হয় এক লাখ ২০ হাজার টাকা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এক একর জমির উৎপাদিত বীজ প্রায় আড়াই লাখ টাকায় বিক্রি করা সম্ভব।
বক্তার হোসেন বলেন, আমি বিএডিসির চুক্তিবদ্ধ চাষি ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের এসএমই কৃষক। চলতি বছর তাহিরপুরী, ফরিদপুরী, বারী-১, লাল তীর কিং ও শুকসাগর জাতের বীজ চাষ করেছি। বর্তমানে আমার মাঠের অবস্থা খুবই ভালো। আবহাওয়া এমন থাকলে বাম্পার ফলন হবে। বীজের ভালো দামও পাব।
কৃষক জামাল বিশ্বাস বলেন, আগে আমি ধান, পাট, গম প্রভৃতি চাষ করতাম। বক্তার হোসেনের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে কয়েক বছর ধরে বীজের চাষ করছি। লাভের মুখ দেখেছি। শুধু আমিই নই, আমাদের এ অঞ্চলের প্রায় ২০০ কৃষক এখন পেঁয়াজের বীজ চাষ করে সফল হয়েছেন।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছর ফরিদপুরের নগরকান্দা, ভাঙ্গা, সালথা ও সদর উপজেলার অম্বিকাপুর ইউনিয়নে ১৮৩০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ বীজের চাষ হয়েছে। সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মো. আবুল বাশার মিয়া বলেন, পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনে সারা দেশের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ফরিদপুর। জেলার মধ্যে শীর্ষে অবস্থান করছেন আমাদের এসএমই কৃষক বক্তার হোসেন খান। তার উৎপাদিত বীজ এখন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। আমরা কৃষি বিভাগ থেকে তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করে থাকি। ফরিদপুর বিএডিসির উপপরিচালক (ক.গ্রা.) মো. শফিকুল ইসলাম খান বলেন, কৃষক বক্তার হোসেন আমাদের চুক্তিবদ্ধ চাষি। তিনি ভালো মানের বীজ উৎপাদন করায় আমরা তাকে প্রশিক্ষণসহ বীজ সংরক্ষণের বিষয়ে সব ধরনের পরামর্শ দিয়ে থাকি। বিএডিসির পক্ষ থেকে সঠিক মূল্য দিয়ে বক্তার হোসেনের বীজ কিনে নিয়ে আমরা দেশের বিভিন্ন চাষির মাঝে বিতরণ করে থাকি। তিনি ফরিদপুর জেলার একজন সফল বীজ উৎপাদনকারী।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কৃষিবিদ কার্তিক চন্দ্র চক্রবর্তী বলেন, জেলায় এ বছর প্রায় ১৮৩০ হেক্টর জমিতে (দানা পেঁয়াজ) পেঁয়াজ বীজের আবাদ হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে আমরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পক্ষ থেকে কৃষকদের আমরা বীজ দিয়েছি। বিশেষ করে বারী পেঁয়াজ-১ দিয়েছি। সার দিয়েছি, প্রশিক্ষণ দিয়েছি। রাজস্ব প্রকল্প থেকে ২৪০টি প্রদর্শনী স্থাপন করেছি। সারা দেশের চাহিদার ৭৫ ভাগ বীজের চাহিদা ফরিদপুর থেকে মেটানো হয়। কৃষক যা পছন্দ করবেন, যাতে তাদের লাভ হবে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর তা নিয়েই কাজ করবে। আশা করছি, চলতি বছর প্রায় ১১ মেট্রিক টন বীজ উৎপাদন হবে, যার বাজারমূল্য প্রায় ২০০ কোটি টাকা।

কেএম রুবেল, ফরিদপুর

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০