মাতৃত্বের স্বাদ নেওয়ার আগে পরিকল্পনা থাকা মঙ্গলজনক সন্তান ও মা উভয়ের জন্য। এ সময় অনেক বিষয় বিবেচনায় আনা উচিত। যেমন ওজন, ডায়েট, চিকিৎসার ইতিহাস, অভ্যাস প্রভৃতি। পাশাপাশি নিয়মিত ডাক্তারের কাছে যেতে হবে, পরামর্শ নিতে হবে। সময়মতো চেপআপ করাতে হবে।
গর্ভধারণ না করলেও ফলিক এসিড জরুরি
মানবদেহে নতুন কোষ গঠনে সহায়তা করে ফলিক এসিড বা ফোলেট। একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারী গর্ভধারণ করুক বা না করুক তার প্রতিদিন ৪০০ মাইক্রোগ্রাম ফলিক এসিড গ্রহণ করা উচিত। এ পরামর্শ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি)।
নিউরাল টিউব ডিফেক্টস রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে ফলিক এসিড। গর্ভজাত শিশুর স্নায়ুতন্ত্র ও মস্তিষ্ক গঠনে সাহায্য করে। গর্ভধারণের প্রাথমিক পর্যায়ে শিশুর মেরুদণ্ডের গঠন ঠিক করে এটি।
গর্ভবতী নারীকে ঝুঁকিতে ফেলে ধূমপান যা কম ওজনের শিশু জন্ম দেয়
গর্ভধারণকে ঝুঁকির মুখে ফেলে ধূমপান। মাতৃজঠর সংকুচিত করে ফেলে ধূমপান। পুরুষের বেলায় শুক্রাণুর হার কমায়।
ধূমপানের ফলে গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ে, মৃত সন্তান প্রসব করে অনেক। কম ওজনের শিশু জন্ম নেয়। অর্থাৎ ধূমপানের কোনো উপকারিতা নেই।
সঠিক ওজন প্রিম্যাচিউর সন্তান জন্মদানে বাধা দেয়, গর্ভাবস্থার ডায়াবেটিস রোধ করে বেশি হালকাও নয়, আবার ভারী নয় এমন নারীর প্রিমাচিউর সন্তান জন্ম দেওয়ার হার তুলনামূলক কম। গর্ভাবস্থার ডায়াবেটিসেও তারা ভোগে না। ওজনে বেশি হলে প্রি-অ্যাকলামসিয়া, ব্লাড ক্লটের পাশাপাশি সি-সেকশনে যাওয়া ঝুঁকি বেড়ে যায়।সঠিক ওজনের নারীদের মধ্যে এসব সমস্যা থাকে না।
অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম এড়িয়ে চললে মা ও শিশু উভয়ে ভালো থাকে
সুস্থতার জন্য শারীরিক পরিশ্রম চালিয়ে যেতে হবে। গর্ভাবস্থায় শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকা মা ও শিশু উভয়ের জন্য মঙ্গল। তবে অতিরিক্ত কায়িক শ্রম এড়িয়ে চলতে হবে। এ সময়ে হালকা ব্যায়াম করতে হবে।
পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে। ভারী কোনো বস্তু বহন করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
স্বাস্থ্যকর খাবার দুজনের জন্যই ভালো
উর্বরতা বাড়ানোর জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো খাবার রয়েছে কি না, তা নিয়ে বিস্তর গবেষণা হয়েছে। গবেষকরা দেখেছেন, স্বাস্থ্যকর খাবার গর্ভাবস্থা ও তার আগে নারীকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। অনেক পুষ্টি, যেমন ক্যালসিয়াম, প্রোটিন ও আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে। নানা ধরনের ফল, শাকসবজি, চর্বিমুক্ত প্রোটিন, গোটা শস্য, দুগ্ধজাত খাবার প্রভৃতি রাখা উচিত খাবারের তালিকায়।
মানসিক সুস্থতা সবার জন্য মঙ্গলজনক
বিষন্নতা কিংবা অন্য কোনো মানসিক সমস্যায় ভুগছেন এমন গর্ভবতী নারীর স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি। তার তুলনায় মানসিক দিক থেকে চনমনে রয়েছে, এমন নারী সুস্থ সন্তান প্রসব করে। মনকে গুরুত্ব দিতে হবে, নতুবা এর প্রভাব পড়বে গর্ভজাত সন্তানের ওপরও। গর্ভধারণের আগে নারী কিংবা তার পরিবারে কারও মানসিক সমস্যা রয়েছে কি না, তা জানার চেষ্টা করেন যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসকরা। অনাগ্রহ ও অসহায়ত্ব বোধ করা, ক্ষুধা কিংবা ঘুমের পরিবর্তন, দুর্বলতা এর যে কোনো একটি সমস্যা থাকলে তাদের চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলার নির্দেশ দেন তারা।
আশা করা যায় কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে মানসিক সমস্যা কাটিয়ে উঠে গর্ভবতী নারী। মানসিকভাবে শক্ত থাকা জরুরি। উৎফুল্ল ও চনমনে থাকলে এর প্রভাব পড়বে পুরো দেহ ও সন্তানের ওপর।
সঠিক পরিকল্পনায় সুস্থ প্রসব
কাগজে লিখে রাখুন আপনার ইচ্ছেগুলো। সন্তান জন্মদানের সময়ে যারা আপনার পাশে থাকবেন তাদের জানান আপনার এ ইচ্ছেগুলো। সঠিক পরিকল্পনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেগন্যান্সি অ্যাসোসিয়েশন কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছে, যা আমাদেরও জানা উচিত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
# প্রসবের সময়ে কে কে উপস্থিত থাকবেন
# কোন কোন বিষয় এড়িয়ে চলতে চান
# বিশেষ কোনো পোশাক পরিধান করার ইচ্ছা রয়েছে কি না
# গান শুনতে চান কি না, অথবা নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে মনোযোগ দেওয়ার ইচ্ছা আছে কি না
# জটিলতা এড়াতে করণীয় সম্পর্কে ধারণা রাখা।
প্যারেন্টস ম্যাগাজিন অবলম্বনে
রাহুল সরকার