নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রায় আট বছর আগে হাইকোর্টের (উচ্চ আদালত) দেওয়া একটি রায়ের নির্দেশনা অনুযায়ী বুড়িগঙ্গার পানি দূষণ রোধে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, আদৌ নেওয়া হয়েছে কি না এবং নিয়ে থাকলে কী কী উন্নয়ন ঘটেছে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রতিবেদন দিতে বলেছেন আদালত।
আদালতের নির্দেশনা পুরোপুরি বা নিয়মিতভাবে প্রতিপালন না করায় বুড়িগঙ্গার পানির ‘দূষণ থামছে না’। তাই ২০১১ সালের রায়ে যেসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল, সেসব নির্দেশনা আবার দেওয়ার আরজি জানিয়ে সম্পূরক আবেদন করে রিটকারী সংস্থা পরিবেশ ও মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি)।
ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এএসএম নাজমুল হক।
আদেশে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বিআইডব্লিটিএ’র চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক, বিআইডব্লিউটিএ’র পরিচালক (পোর্ট অ্যান্ড ট্রাফিক), ঢাকার জেলা প্রশাসক, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও লালবাগ, কামরাঙ্গীরচর, হাজারীবাগ, ডেমরা ও কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে আদেশ পাওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন আদালত।
মনজিল মোরসেদ পরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এইচআরপিবির জনস্বার্থে করা এক রিট মামলায় ২০১১ সালে বুড়িগঙ্গার পানি দূষণ রোধে আদালত রায়ে অনেকগুলো নির্দেশনা দিয়েছিলেন। বুড়িগঙ্গার ভেতরে যেসব স্যুয়ারেজ এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল লাইন আছে, সেগুলো ছয় মাসের মধ্যে বন্ধ করার নির্দেশের পাশাপাশি বুড়িগঙ্গার তীরে যাতে ময়লা-আবর্জনা ফেলতে না পারে, সেজন্য সচেতনতামূলক প্রোগ্রাম করার জন্য বলা হয়েছিল রায়ে। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা ওই নির্দেশনাগুলো পুরোপুরি পালন না করায় বুড়িগঙ্গার পানির দূষণ ঘটেই চলেছে। তাই এ ব্যাপারে এইচআরপিবি’র পক্ষে একটি সম্পূরক আবেদন করেছিলাম যে, রায়ের নির্দেশনাগুলো পুনরায় দেওয়া হোক।’
শুনানি শেষে আদালতের রায়ে যেসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল, তা প্রতিপালনে সংশ্লিষ্টরা কী কী পদক্ষেপ নিয়েছেনÑসে বিষয়ে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে একটি অগ্রগতি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে বলেছে বলে জানান তিনি। আগামী ২০ মে এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য দিন রাখা হয়েছে বলেও জানান এ আইনজীবী।
কী কারণে মনে হয়েছে আদালতের নির্দেশনা পুরোপুরি মানা হয়নি বা বুড়িগঙ্গার পানি দূষণ ঘটছে তা জানতে চাইলে মনজিল মোরসেদ বলেন, এ মামলাটি একটি চলমান মামলা। আমরা বুড়িগঙ্গা ভিজিট করতে গিয়ে দেখলাম, বুড়িগঙ্গার পানির অবস্থা একই রকম। স্যুয়ারেজ লাইন বুড়িগঙ্গায় গিয়ে পড়েছে। শ্যামপুর ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়ার লাইনগুলোও বুড়িগঙ্গায় এসে পড়ছে, ময়লাও ফেলা হচ্ছে। পরিদর্শনের এ অভিজ্ঞতা থেকেই আবেদনটি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের নোটিস দেওয়া হয়েছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, দু-তিন বছর আগে একবার দিয়েছিলেন।
তাহলে বিবাদীদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ কেন আনা হলো না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘নির্দেশনাগুলো ছিল ওয়াসা, বিআইডব্লিউটিএ, পরিবেশ অধিদফতর, জেলা প্রশাসক ও সংশ্লিষ্ট থানার ওসিদের প্রতি। গত সাত-আট বছরে এসবে প্রশাসনের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। নতুন যারা এসেছেন, তারা হয়তো জানেনও না। যে কারণে আদালত অবমাননার অভিযোগের আবেদন না করে রায়ের নির্দেশনাগুলোই আবার চেয়েছি।’
প্রসঙ্গত, বুড়িগঙ্গার পানি দূষণ রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা চেয়ে ২০১০ সালে এইচআরপিবি’র পক্ষে একজন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট করেছিলেন। সে রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১১ সালের ১ জুন বুড়িগঙ্গায় বর্জ্য ফেলা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে তিন দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেন হাইকোর্ট। বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যানকে প্রতি মাসে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়।
আদালত রায়ে বলেছিলেন, ‘এ ব্যাপারে গাফিলতি হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বুড়িগঙ্গার পানি এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে, একে এখন আর পানি বলা যায় না। এই পানি দূষিত হয়েছে বিষাক্ত বর্জ্যরে ফলে। এতে শুধু রাজধানীর নয়, গণমানুষের স্বাস্থ্যও মারাত্মক বিপর্যয়ের সম্মুখীন। আশু ব্যবস্থা না নিলে আরও ক্ষতি হয়ে যাবে।’
বুড়িগঙ্গা দূষণ রোধে আট বছরের অগ্রগতি কী?
